আসনেই জব্দ হবে সংক্রমণ। ছবি: সংগৃহীত।
পাড়ার সকলে রং মেখে ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াবে, আর জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আপনি ঘরের জানলা কিংবা বারান্দা থেকে সেই সব দৃশ্য দেখবেন। রং খেলতে না পারার দুঃখ নিয়ে গোটা একটা বছর কাটাতে হবে। রং যদি না-ও খেলেন, একটু না হয় ভাল-মন্দ খেলেন। দোলের দিন একটু রগরগে রান্না তো সব বাড়িতেই হয়। ব্যস, পরের দিনই পেটের গোলমাল শুরু। বছরের বিশেষ দিনগুলোতে যদি এই ভাবে শরীর খারাপ হয়, তা হলে মুশকিল। কত আর ওষুধ খাবেন? মরসুমি এই রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভিতর থেকে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। প্রশিক্ষকেরা বলছেন, সুস্থ থাকতে খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই জরুরি হল শরীরচর্চা। সাধারণ জ্বর-সর্দি, পেটের ব্যামো বশে রাখতে রোগ প্রতিরোধ শক্তি মজবুত করা প্রয়োজন। তার জন্য বাইরে থেকে সাপ্লিমেন্ট না খেয়ে নিয়মিত কয়েকটি আসন অভ্যাস করে দেখতে পারেন। তবে, দু’দিন ব্যায়াম করেই ফলাফলের আশা করলে হবে না।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মজবুত করতে কোন কোন আসন অভ্যাস করবেন?
১) ধনুরাসন:
উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। তার পর হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা যতটা সম্ভব পিঠের উপর নিয়ে আসুন। এ বার হাত দুটো পিছনে নিয়ে গিয়ে গোড়ালির উপর শক্ত করে চেপে ধরুন। চেষ্টা করুন পা দুটো মাথার কাছাকাছি নিয়ে আসতে। এই ভঙ্গিতে মেঝে থেকে বুক, হাঁটু ও ঊরু উঠে আসবে। তলপেট ও পেট মেঝেতে রেখে উপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিতে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। তার পর আগের ভঙ্গিতে ফিরে যান। এই আসন বার তিনেক করতে পারেন।
২) চক্রাসন:
দুই পা কাঁধের মাপ অনুযায়ী রাখুন। পায়ের ভাঁজ করে এমন অবস্থানে রাখুন, যাতে নিতম্বের সঙ্গে গোড়ালির স্পর্শ লাগে। দুই হাত উপরে তুলে মাথার দু’পাশে হাতের তালু দু’টি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে প্রথমে নিতম্ব ও কোমর উপরে তুলুন। হাতে ভর রেখে পিঠ ও মাথা উপরে তুলে ফেলুন। আসন থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার সময়ে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিঠ ও তার পরে কোমর নামিয়ে নিন। প্রতি দিন ২ থেকে ৫ বার এই আসন অভ্যাস করুন। তবে, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাঁরা প্রশিক্ষকের পরামর্শ না নিয়ে এই আসন করবেন না।
৩) পশ্চিমোত্তনাসন:
প্রথমে দুই পা টানটান করে সোজা হয়ে বসুন। শ্বাস নিতে নিতে দুই হাত মাথার উপরে তুলুন। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত-সহ কোমর থেকে সামনের দিকে বেশ খানিকটা ঝুঁকে মুখ হাঁটুতে স্পর্শ করুন। আসন করার সময়ে পেট ভিতরের দিকে হালকা টেনে রাখুন। আগের অবস্থায় ফেরার সময়ে শ্বাস নিতে নিতে হাত ওঠান এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাত নামিয়ে নিন। দিনে তিন থেকে পাঁচ বার এটি করুন। পিঠে ব্যথা থাকলে চক্রাসন না করাই উচিত হবে।
৪) পদহস্তাসন:
দুই পা আরামদায়ক দূরত্বে রেখে শরীর শিথিল করে দাঁড়ান। হাত থাকুক পাশে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। শরীর টান টান করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে কানের পাশ দিয়ে দুই হাত সোজা করে মাথার উপরে তুলুন। এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মেরুদণ্ড প্রসারিত করে সামনের দিকে ঝুঁকতে থাকুন। আঙুল থাকবে মাটির দিকে। হাঁটু যেন বেঁকে না যায়, খেয়াল রাখুন। নিচু হয়ে হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালি জড়িয়ে ধরতে পারলে ভাল। না হলে হাত দিয়ে পায়ের পাতা ছুঁয়ে থাকুন। সেটাও না পারলে আরামদায়ক ভাবে যতটুকু ঝুঁকতে পারবেন, ততটুকুই করুন। তার বেশি নিচু হওয়ার দরকার নেই। খেয়াল রাখুন ঘাড়, মাথা যেন আরামদায়ক অবস্থায় থাকে। পা থাকুক টান টান ও সোজা। এই অবস্থানে কয়েক সেকেন্ড থাকুন। এ বার শ্বাস নিতে নিতে মাথার উপর হাত তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ান ও শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন।
৫) উষ্ট্রাসন:
হাঁটু গেড়ে বসুন। পিছনের দিকে খানিকটা হেলে হাত দু’টি দিয়ে পায়ের গোড়ালি ধরুন। এর পর মাথা পিছনের দিকে ঝুলিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে পেটের অংশটা সামনের দিকে এগিয়ে দিন। ডান হাতের বুড়ো আঙুলটি ডান দিকের গোড়ালির ভিতর দিকে রেখে বাকি সব আঙুল বাইরের দিকে রাখুন। বাঁ দিকের ক্ষেত্রেও একই ভাবে রাখুন। পায়ের পাতা মাটিতে রাখুন। স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে শবাসন করে শুরুর অবস্থায় ফিরে যান। শ্বেতস্রাবের সমস্যা কমাতে নিয়ম করে এই আসনটি করতে পারলে ভাল।