শুধু পর্দার তারকা নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ওজন কমিয়ে রোগা হওয়ার প্রবণতা প্রবল। ছবি: সংগৃহীত
শরীরের বাড়তি মেদ ঝরাতে প্লাস্টিক সার্জারি করে মৃত্যু হয়েছে ২১ বছর বয়সি, কন্নড় অভিনেত্রী চেতনা রাজের। সোমবার বেঙ্গালুরুর এক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি এই তরুণী অভিনেত্রীকে। অস্ত্রোপচারের পর অভিনেত্রীর ফুসফুসে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। জল জমতে শুরু করে ফুসফুসে। শেষ পর্যন্ত ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন চেতনা রাজ।
বিনোদন দুনিয়ায় প্লাস্টিক সার্জারি করে নিজেকে বদলে ফেলার প্রচেষ্টা এই প্রথম নয়। এর আগে বলিপাড়ায় প্রিয়ঙ্কা চোপড়া, শিল্পা শেট্টি, শ্রুতি হাসান, অনুষ্কা শর্মারা প্রত্যেকেই মুখের বিভিন্ন অংশে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন। সূত্রের খবর, শুধু বলিউড নয়, টলিউডেও কেউ কেউ নিজেকে আমূল বদলে ফেলতে বাইরে থেকে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে এসেছেন। তবে চেতনার বিষয়টি আলাদা। মুখের কোনও অংশ বদলে ফেলতে বা আরও তীক্ষ্ণ করে তুলতে চেতনা প্লাস্টিক সার্জারি করেননি। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মেদ ঝরিয়ে শারীরিক গঠন আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চেয়েছিলেন তিনি। চিকিৎসা পরিভাষায় এই ধরনের অস্ত্রোপচারকে বলা হয় ‘লাইপোসাকশন’।
শুধু পর্দার তারকা নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও ওজন কমিয়ে রোগা হওয়ার প্রবণতা প্রবল। বিশেষ করে কমবয়সিদের মধ্যে। ওজন কমানো একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অনেকেই তাই চটজলদি কিছু উপায় খোঁজেন।
তাই বলে রোগা হতে চেয়ে অস্ত্রোপচার করানোটা আদৌ কতটা নিরাপদ? যদি অস্ত্রোপচার করাতে কেউ অত্যন্ত উৎসাহীও থাকেন সে ক্ষেত্রেই বা কী কী সাবধানতা মেনে চলা প্রয়োজন?
এই বিষয়ে চর্মরোগ চিকিৎসক বিক্রম রাঠৌর বললেন, ‘‘শুধু লাইপোসাকশন বা প্লাস্টিক সার্জারি বলে নয়। যে কোনও অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেই আগে থেকে ভাল করে শারীরিক পরিস্থিতি পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটা জরুরি। রক্ত পরীক্ষা, ইসিজি করিয়ে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট চিকিৎসককে দেখিয়ে নেওয়া উচিত। চিকিৎসক যদি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান তা হলে এই অস্ত্রোপচার করিয়ে রোগা হওয়ার সিদ্ধান্তের দিকে এগনো যেতে পারে। ধূমপানের অভ্যাস থাকলেও সেটাও বন্ধ করতে হবে। অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরেও। খুব বেশি স্থূলকায় হলে কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিস আছে কি না তা-ও জেনে নেওয়া দরকার। তবে আমি সব সময় পরামর্শ দেব যে লাইপোসাকশন, বোটক্স, প্লাস্টিক সার্জারি রোগা হওয়ার এক মাত্র পন্থা নয়। খাওয়া কমিয়ে, জিম গিয়ে, শরীরচর্চা করেও রোগা হওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওজন ঝরানোর একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ঠিকই। কিন্তু তাতে অন্য কোনও বিপদের ঝুঁকি কম থাকে।’’
একই প্রসঙ্গে চর্মরোগ চিকিৎসক শুভ্র ভট্টাচার্যেরও মত জানতে চেয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। চিকিৎসক বললেন, ‘‘ডায়াবিটিস, থাইরয়েড, হৃদ্রোগ, হরমোনজনিত কোনও সমস্যা থাকলে এই ধরনের অস্ত্রোপচার একেবারেই করানো উচিত নয়। তবে কেউ যদি একান্তই এই ধরনের অস্ত্রোপচার করাতে চান তা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে আগে আলোচনা করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি এবং অস্ত্রোপচারের আগে এবং পরে— দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কিছু কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।’’
অস্ত্রোপচার করার আগে চেতনা কতটা সতর্কতা বা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তা অবশ্য জানা যাচ্ছে না এখনই। তবে বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্লাস্টিক সার্জারি করার লক্ষ্য হয়তো সে ভাবে পূরণ হল না। ঠিক যেমনটা চাওয়ার হয়েছিল, শরীর সে ভাবে বদলালো না। পাশাপাশি নানা শারীরিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। ফলে প্লাস্টিক সার্জারির পথে হাঁটার আগে ভাল করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।