বয়স বাড়লেও লাবণ্য কমেনি মাধুরী দীক্ষিত নেনের। ছবি: প্রতিনিধিত্বমূলক।
মাধুরী দীক্ষিত নেনে, তব্বু, মালাইকা আরোরা, ভাগ্যশ্রী, করিশ্মা কপূরদের দেখেছেন! বয়স প্রত্যেকেরই ৫০ ছাড়িয়েছে। মাধুরী তো প্রায় ৬০ ছুঁইছুঁই। অথচ এখনও পর্দায় এলে চোখে ঘোর লাগে ভক্তদের। তার মানে এই নয়, প্রত্যেকের ত্বক টান টান, বয়স বাড়েনি। বরং বয়স বেড়েছে আর তার সঙ্গে বজায় থেকেছে লাবণ্যও। একেই বলে ‘এজিং গ্রেসফুলি’ বা ‘এজিং লাইক ফাইন ওয়াইন’। অর্থাৎ ভাল ওয়াইন যেমন পুরনো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বাদে উত্তম হয়। এ-ও তেমন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘বয়সবৃদ্ধির ঘড়িকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে একটি খাবার। যা অতি সহজলভ্য। অধিকাংশ রান্নাঘরেই খুঁজলে মিলবে। না পেলে পাড়ার মুদিখানায় যান, সেখানেও পেয়ে যাবেন। দাম কেজি প্রতি ৪০০ টাকার আশপাশে। চিকিৎসকেরা বলছেন, ওই অতি সহজপ্রাপ্য খাবারই আপনাকে দিতে পারে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে স্বাস্থ্য এবং লাবণ্য অটুট রাখার চাবিকাঠি। মেদ ঝরাতে সাহায্য করার পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য বজায় রেথে মানুষকে দীর্ঘজীবী করে ওই খাবার।
নাম কাবুলি ছোলা। পঞ্জাবিরা যা দিয়ে তৈরি করেন তাঁদের প্রিয় খাবার চানা মশলা। নিরামিষ প্রেমীদের মেনুতেও পনিরের পাশাপাশি আকছার ওই পদ রাখা থাকে। এমনকি, আমিষপ্রেমী বাঙালি ঘরেও কাবুলি ছোলার ঘুগনি বা কাবুলি ছোলা সিদ্ধ করে, তার সঙ্গে লেবু, টম্যাটো, শসা, পেঁয়াজ মিশিয়ে জমিয়ে খাওয়া হয়। সেই কাবুলি ছোলা ফাইবার-প্রোটিন সমৃদ্ধ এক ‘ব্যালান্সড ডায়েট’ বা ভারসাম্যযুক্ত খাবার, তা জানতেন কি? নিরামিষ খাবারে প্রোটিন এবং ফাইবারের উপস্থিতি এবং ত্বকের উপর তাদের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করেছেন ফরাসি চিকিৎসক অলিভিয়ের কোর্টিন-ক্লারিনস। তিনি বলছেন, ‘‘গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা নিয়মিত কাবুলি ছোলার মতো ব্যালান্সড এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ খাবার খেয়েছেন, তাঁদের বয়স বাড়লেও লাবণ্য কমেনি। বরং দেখা গিয়েছে, সুস্বাস্থ্যের জন্য বয়সবৃদ্ধির পরেও তাঁদের ভাল দেখতে লাগছে।’’
কী ভাবে কাজ করে কাবুলি ছোলা?
মেদ ঝরায়: অলিভিয়ের বলছেন, ‘‘অন্তত ছ’টি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমীক্ষা বলছে, নিয়মিত কাবুলি ছোলা খেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে মেদ ঝরানো গিয়েছে।’’ অনেক সময়েই শরীরে মেদ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হয়ে ওঠে অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া। কিন্তু, কাবুলি ছোলা খেলে পেট অনেক ক্ষণ ভর্তি থাকে। ব্যালান্সড খাবার হওয়ায় শরীরে ঘাটতিবোধ কম হয়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়াও এড়ানো যায়।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সুস্বাস্থ্য রক্ষা:কাবুলি ছোলায় রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফাইবার। যা হজমে সাহায্য করে পরিপাক ক্রিয়াকে ভাল রাখে, কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে এবং রক্তে শর্করার মাত্রাও ঠিক রাখে। যা সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে।
জরুরি পুষ্টিগুণ: পুষ্টিবিদ পলা মার্টিন চার্লস তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘‘আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য নির্ভর করে, আপনি কী খাচ্ছেন, তার উপরে। কাবুলি ছোলায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন ই-র মতো জরুরি পুষ্টিগুণ। যা আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। শুধু তা-ই নয়, ওই সমস্ত পুষ্টি শরীরে গেলে তা কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শরীরে জল সঞ্চয় করে রাখার প্রবণতা কমায়, ফলে শরীরে ফোলা ভাবও দূরে থাকে।
কী কী ভাবে খেতে পারেন?
চেনা রেসিপির পাশাপাশি, কাবুলি ছোলা দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন স্যালাড। কাবুলি ছোলা বেটে তাতে তিল, লেবুর রস, রসুন, অলিভ অয়েল মিশিয়ে তৈরি করলে পারেন পশ্চিম এশিয়ার জনপ্রিয় খাবার হামাস। নিরামিষ স্যুপেও দেওয়া যেতে পারে সিদ্ধ করা কাবুলি ছোলা।