রাজ চক্রবর্তী এবং রুদ্রনীল ঘোষ।
আনন্দবাজার ডিজিটাল: ফোন নম্বর নেটমাধ্যমে আসায় সমস্যা হল?
রাজ: অদ্ভুত মানুষের মন! এ ভাবে সকলের ফোন নম্বর এনে মানুষের তো সুবিধে করা হল না। উল্টে আমাদের সকলের ফোন বন্ধ রাখতে হল। ১০ হাজার ফোন এসেছে এক দিনে। এটা বামপন্থী দলের হতাশা। আর কিছুই না। আমি কিন্তু এই দলকে শিক্ষিত এবং রুচিশীল দল বলেই জানতাম।
প্রশ্ন: ২০২১-এর নির্বাচনী প্রচারে শিক্ষিত বা রুচিশীল শব্দ কি আদৌ ব্যবহার করা হয়েছে?
উত্তর: আমি তো আমার কথাই বলতে পারব। অন্যের বিষয়ে মন্তব্য করি না আমি।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনি একেবারে প্রথম দিকের প্রচারে বলেছিলেন— অর্জুন সিংহকে মানুষ জুতো মারবে...!
উত্তর: বিষয়টা বুঝতে হবে। শুধু ওইটুকু লাইন মনে রাখলে চলবে না। আমি সদ্য প্রচারে গিয়ে বলেছিলাম। তবে বলতে চেয়েছিলাম, মানুষ ওইরকম ব্যবহার করবে। আমি নিজে করব বলিনি। আমার মনে হয়, সকলের জেনে রাখা ভাল যে, সাক্ষাতে অর্জুন সিংহকে আমি জানিয়েছিলাম ও ভাবে বলা আমার ঠিক হয়নি। ভিন্ন দলের হলেও আমাদের পারস্পরিক সৌজন্যবোধ থাকবে না?
প্রশ্ন: কিন্তু শোনা যাচ্ছে ব্যারাকপুরের কিছু অঞ্চলে অর্জুন সিংহ নাকি তৃণমূলকে ভোট দিতে দেননি?
উত্তর: না। অর্জুন সিংহ ব্যারাকপুরের কিছু অঞ্চলে তৃণমৃলকে ভোট করতে দেননি কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। কয়েকটা ছোট ঘটনা ছাড়া নির্বাচন নির্বিঘ্নে হয়েছে। প্রশাসন, কেন্দ্রীয় বাহিনী সকলে সাহায্য করেছে। আমি বা আমার বিরোধী পক্ষ একেবারেই কাদা ছোড়াছুড়ি করিনি।
প্রশ্ন: কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির শুরুর সময় যে বন্ধুর সঙ্গে ঘর ভাগ করে থাকতেন, সেই রুদ্রনীল ঘোষ তো আপনাকে ‘মিহিদানা’ খাইয়ে তির্যক মন্তব্য করেছেন...।
উত্তর: রুদ্রর অভ্যাস বেশি কথা বলা। তবে আমি এখনও ওর ভাল চাই। শ্রাবন্তী বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরেও তো আমি ওকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। ভোটযুদ্ধে যা-ই হোক, ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা সহকর্মী, বন্ধুই থাকব।
প্রশ্ন: ভোটযুদ্ধে যা-ই হোক বলতে? আপনি জিতবেন!
উত্তর: অবশ্যই। আমি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী।
প্রশ্ন: শুভশ্রীও তাই বলেছেন...।
উত্তর: শুভ যে ভাবে এই সময়ে আমার পাশে থেকেছে, সংসার সামলেছে...। ও আমার পরিশ্রমটা দেখেছে। করোনার সময় আমি দুটো রোড-শো করেছি। বিশাল কোনও সমাবেশ করিনি। কেবল প্রত্যেকের বাড়ি গিয়ে কথা বলেছি। দিদি এত ভাল কাজ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে মানুষ তাঁর জন্যও তো আমাকে ভোট দেবেন। আমিও দিদির বিশ্বাসের অমর্যাদা করিনি। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি হারতে যাব কেন? ‘হার’ শব্দটা আমার মাথায় নেই। আর থাকবেও না।
প্রশ্ন: জিতলে কী ভাবে সামলাবেন সব দিক?
উত্তর: খুবই বড় দায়িত্ব। তখন ব্যারাকপুরের সব মানুষ আমার কাজের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। একটা অফিস তো করতেই হবে ওখানে। আমার হয়ে যাঁরা কাজ করবেন তাঁদের জন্য। সারাক্ষণ তো আমি ওখানে পৌঁছতে পারব না। আমায় প্রযোজনা সংস্থা আর ছবির কাজের দিকটাও সমান দায়িত্ব নিয়ে দেখতে হবে। মাঠে যখন নেমেছি, কাজ তো করতেই হবে।
প্রশ্ন: কী কাজ করবেন?
উত্তর: ব্যারাকপুর মূলত শিল্পাঞ্চল। কয়েকটা কারখানা বন্ধ হয়ে আছে। সেগুলো খোলাব। জলের সরবরাহ আর রাস্তার কাজও করাতে হবে। আর মহিলাদের নিরাপত্তার উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। বাইরে থেকে বেশ কিছু মানুষ ব্যারাকপুরে এসে নানা সমস্যা তৈরি করে। তাদের নজরে রাখতে হবে। এ ভাবেই ভেবেছি।
প্রশ্ন: নির্বাচনের দিন আপনাকে মানুষ ঘিরে ধরে বলছিল চলে যেতে। অথচ আপনি শান্ত হয়ে ওদের ফিরতে বলছিলেন।
উত্তর: ওদের বক্তব্য ছিল, ‘‘আপনার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত। আপনি এখানে কী করছেন?’’ আমি বুঝতে পারছিলাম যে, ওরা জানে না আমি একটানা ব্যারাকপুরেই আছি। আর শুভ কলকাতায়। বিজেপি পুরো তথ্যটা না দিয়ে ওদের শুধু এটুকুই বলতে শিখিয়েছিল। ওই দলের অনেকেই আবার বলছিল, ‘‘দাদা তুমি চলে যাও। তোমাকেই ভোট দেব।’’ কেউ বলছিল, ‘‘দাদা এখন চলে যাও। পরে কাজের ব্যাপারে তোমার সঙ্গে দেখা করব।’’ আমি ঠান্ডা মাথায় ওদের সামলেছি। রাজনীতিতে সবচেয়ে জরুরি সংযম। রেগে গেলেই বিপদ। আমি এখনও পর্যন্ত কখনও খারাপ কথা বলে বিরোধী পক্ষকে আক্রমণ করিনি। এটা রুচির পরিচয় দেয় না।
প্রশ্ন: শুভশ্রী আপনার সমর্থনে রোড শো করেছিলেন?
উত্তর: আমার পাশে তো ও আছেই। থাকবেই। তবে মূলত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে যে ও আছে, সেটা বোঝাতেই ওর ব্যারাকপুরে আসা। শুভশ্রীকে সবাই দেখতে চাইবে, এই কথা মাথায় রেখে ও আমার প্রচারে আসেনি।
প্রশ্ন: বেশ। ২ মে তা হলে ফোনটা ধরছেন তো?
উত্তর: নিশ্চয়ই।