Teachers in Bengali movie

বরুণ বিশ্বাস থেকে উদয়ন পণ্ডিত, বাংলা ছবিতে নজির গড়েছেন এই ‘মাস্টারমশাই’-রা

বাংলা চলচ্চিত্রে বার বার উঠে এসেছে এমন শিক্ষকের চরিত্র। তাঁদের মেরুদণ্ড ঋজু, দৃঢ়। কোনও প্রতিকূলতার মুখেই নোয়ানো যায় না মানুষগুলিকে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:৪২
These four characters uncompromising life story from the bengali movie Heerak Rajar Deshe, Atanka, Rudrabeena and Proloy still showing the path

বাংলা চলচ্চিত্রে বার বার উঠে এসেছে সৎ, নির্ভীক, ছাত্রদরদি শিক্ষকের কাহিনি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম

যিনি শিক্ষা দেন, তিনিই শিক্ষক। সে শিক্ষা কখনও দুই মলাটে বন্দি, পুঁথিগত। আবার কখনও তার বাইরে বেরিয়ে এই দুনিয়ায় ‘মানুষ’ হওয়ার শিক্ষা দেন শিক্ষক, নতুন প্রজন্মকে পথ দেখান। নিষ্ঠাবান শিক্ষককে অন্তত এ ভাবেই দেখানো হয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রে বার বার উঠে এসেছে এমন শিক্ষকের চরিত্র। তাঁদের মেরুদণ্ড ঋজু, দৃঢ়। কোনও প্রতিকূলতার মুখেই বেঁকানো যায় না মানুষগুলিকে। আনন্দবাজার ডট কমে রইল চারটি বাংলা ছবির কথা, যেখানে শিক্ষকের তেজ চাবুকের মতো আছড়ে পড়ে পর্দায়।

Advertisement
These four characters uncompromising life story from the bengali movie Heerak Rajar Deshe, Atanka, Rudrabeena and Proloy still showing the path

২০১৩ সালে মুক্তি পায় রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ছবি ‘প্রলয়’। ছবি: সংগৃহীত।

প্রলয়

সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটি মুক্তি পায় ২০১৩ সালে। রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় বরুণ বিশ্বাসের ছায়া চরিত্রে অভিনয় করেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।

বাস্তবে বরুণ বিশ্বাস ছিলেন কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন)-এর শিক্ষক। পাশাপাশি তাঁর পরিচিতি ছিল সমাজকর্মী হিসাবে। উত্তর ২৪ পরগনার সুটিয়া এলাকায় এক গণধর্ষণের ঘটনার পর ২০০০ সাল নাগাদ তিনি প্রতিবাদ মঞ্চ গড়ে তোলেন। ২০১২ সালে ৫ জুলাই বরুণকে খুন হতে হয়।

রাজের ‘প্রলয়’ ছবিতেও সেই প্রতিবাদী শিক্ষকের কথাই উঠে এসেছে। চিত্রনাট্য অনুযায়ী বরুণের মৃত্যুর পর প্রতিবাদের ধারা অব্যাহত রাখেন এক বর্ষীয়ান শিক্ষক, বিনোদবিহারী দত্ত। অভিনয় করে পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে পান এক সৎ পুলিশ আধিকারিককে।

These four characters uncompromising life story from the bengali movie Heerak Rajar Deshe, Atanka, Rudrabeena and Proloy still showing the path

১৯৮৬ সালের ছবি ‘আতঙ্ক’ আজও শিরদাঁড়া দিয়ে বইয়ে দেয় হিমেল স্রোত। ছবি: সংগৃহীত।

আতঙ্ক

ত্রস্ত শিক্ষকের অসহায়ত্ব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ‘আতঙ্ক’। ১৯৮৬ সালে তপন সিংহ পরিচালিত এই ছবি আসলে রাজনৈতিক উন্মত্ততার নগ্ন বাস্তব। যেখানে এক বর্ষণমুখর রাত্রে ‘মাস্টারমশাই’ দেখে ফেলেন তাঁর প্রাক্তন এক মেধাবী ছাত্র মিহিরকে। খুন করে মিহির— ‘রাজনৈতিক হত্যা’। তার পর ঠান্ডা গলায় শিক্ষককে শাসিয়ে যায়, ‘আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি মাস্টারমশাই’। আদর্শবান শিক্ষক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়ান সুমন্ত মুখোপাধ্যায়। সে দৃশ্য আজও বাঙালির শিরদাঁড়ায় হিমেল স্রোত বইয়ে দেয়।

আতঙ্ক তাড়া করে বৃদ্ধ শিক্ষককে। কিন্তু রেহাই পান না। তাঁর সদ্য যুবা ছেলের পাঁজর ভেঙে দেওয়া হয়, মেয়ের মুখে ছুড়ে মারা হয় অ্যাসিড। শিল্পের প্রয়োজনে ছবি শেষ হয় দুষ্টের দমনে। পাশে এসে দাঁড়ান মাস্টারমশাইয়ের আরও এক মেধাবী প্রাক্তন ছাত্র, পুলিশের বড়কর্তা। ছবির শেষে পরিচালক জানিয়ে দিতে ভোলেন না চরিত্রগুলি কাল্পনিক হলেও প্রত্যেকটি ঘটনা সংবাপত্র থেকেই পাওয়া, নির্যস সত্য।

These four characters uncompromising life story from the bengali movie Heerak Rajar Deshe, Atanka, Rudrabeena and Proloy still showing the path

নারায়ণ সান্যালের ‘প্যারাবোলা স্যর’ অবলম্বনে ‘রুদ্রবীণা’য় শিক্ষক সত্যবান চক্রবর্তীর চরিত্রে অভিনয় করেন অনিল চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

রুদ্রবীণা

পিনাকীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের ‘রুদ্রবীণা’ মুক্তি পায় ১৯৮৭ সালে। সেখানেও এক আপসহীন শিক্ষকের জীবন উঠে আসে পর্দায়। সত্যবান চক্রবর্তীর চরিত্রে দেখা যায় অনিল চট্টোপাধ্যায়কে। এ ছবি নারায়ণ সান্যালের উপন্যাস ‘প্যারাবোলা স্যর’-এর আত্মীকরণ। সারা জীবন ন্যায় আর আদর্শের পথে চলা শিক্ষক শেষ পর্যন্ত সংসারত্যাগী হন সেই আদর্শের কারণেই। সেই আদর্শ কখনও তাঁকে দিয়েছে সম্মান, কখনও আবার নিয়ে গিয়েছে দুর্দশার প্রান্তে। তবু তিনি আঁকড়ে রেখেছেন সেই আদর্শকেই।

These four characters uncompromising life story from the bengali movie Heerak Rajar Deshe, Atanka, Rudrabeena and Proloy still showing the path

হীরক রাজার দেশে

বাংলা ছবির জগৎ আরও এক শিক্ষককে প্রায় কোনও দিন ভুলতে পারবে না। কাল্পনিক হলেও তার স্বভাব, বোধ হীরকোজ্জ্বল— নাম উদয়ন পণ্ডিত। ‘হীরক রাজার দেশে’ যে শিক্ষক নিরন্তর স্বপ্ন দেখে সুন্দর ভবিষ্যতের। রাজ-আজ্ঞ়ায় পাঠশালা বন্ধ হয়ে গেলেও উদয়ন ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন অনমনীয় প্রতিবাদের বীজ। তারা শিক্ষকের চোখে চোখ রেখে প্রতিজ্ঞা করে, এত দিনের শেখানো পাঠ তারা কোনও দিন ভুলবে না। প্রত্যাশা রাখে, পাঠশালা এক দিন খুলবেই।

১৯৮০ সালের ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘হীরক রাজার দেশে’। উদয়ন পণ্ডিতের চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement
আরও পড়ুন