সুপ্রিয়া পাঠক
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘মনোহর পাণ্ডে’ ছবিতে অভিনয় করতে শহরে সুপ্রিয়া পাঠক। কোভিডের পরে কলকাতায় শ্যুটিং শুরু থেকে সমাজমাধ্যমে অভিনেত্রীদের হেনস্থা— কথা বললেন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে।
প্রশ্ন: কী ভাবে রাজি হলেন এই ছবিতে অভিনয় করতে?
সুপ্রিয়া: চিত্রনাট্যটাই খুব পছন্দ হয়েছিল। এর আগে কৌশিকদা (গঙ্গোপাধ্যায়)-কে চিনতাম না। যখন ওঁর সঙ্গে কথা হল, মনে হল খুব সৎ এবং আন্তরিক একটা মানুষ। চিত্রনাট্যটাও খুব সৎ ভাবেই লিখেছেন। সেই কারণেই ছবিটায় রাজি হয়ে যাই।
প্রশ্ন: ‘মনোহর পাণ্ডে’ ছবিতে অভিনয় করার জন্য নিজেকে কী ভাবে প্রস্তুত করলেন?
উত্তর: আমরা যে চরিত্রে অভিনয় করি, তার সবই আলাদা আলাদা হয়। প্রথম দু’দিন অভিনয় করার আগে আমি প্রচণ্ড উদ্বেগে থাকি। এটাই আমার অভ্যাস নিজে যে ভাবে চাইছি, সে ভাবে স্ক্রিনে ফুটে উঠছে কিনা, তা নিয়ে চিন্তা হয়। চরিত্রের একটা কোনও দিক ধরে ফেললে, আমি অনেক স্বাভাবিক হয়ে যাই। এখানে সেটাই হল। কৌশিকদা সেটা করতে সাহায্য করলেন।
প্রশ্ন: কী ভাবে?
উত্তর: এই ছবির জন্য প্রথম যে দিন কলকাতায় এলাম শ্যুটিং করতে, সে দিন হাওড়া ব্রিজে শ্যুটিং ছিল। এর আগে রঘুবীরজি (যাদব)-র সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু সৌরভজি (শুক্ল)-র সঙ্গে কাজ করিনি। পুরো নতুন দলের সঙ্গে কাজ। কিন্তু সবটা খুব সহজ করে দিলেন কৌশিকদা। আর চরিত্রটার একটা দিক ধরে এগোনর কথা আমার মনে হয়েছিল। উনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান আমার কথায়। এই ব্যাপারটা আমায় নিজের মতো করে কাজটা করার সুযোগ দিয়েছে।
প্রশ্ন: বলিউডে কাজের সঙ্গে টলিউডে কাজের কোনও পার্থক্য টের পাচ্ছেন?
উত্তর: সব জায়গায় কাজের ধরন আলাদা হয়। দু’জায়গার ভাষা, সংস্কৃতি, মানুষজন আলাদা। ফলে বিষয়টা তো আলাদা হবেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষগুলো যদি ভাল হয়ে কোনও সমস্যা হয় না। এখানকার লোকজন খুব ভাল। ফলে কাজ করতে অসুবিধা নেই। আর অভিনয়ের কথা যদি বলেন, আমি চরিত্রটা নিয়ে ভাবি। ওটায় ঢুকে পড়লে, আর কিছু মাথায় থাকে না
প্রশ্ন: ‘মনোহর পাণ্ডে’ খুব সহজ-সরল গল্প বলে। এখন কি সিনেমা থেকে এই সারল্যটা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে?
উত্তর: এমন নয়। এখন দর্শক সত্যি ঘটনার মত সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। বরং সহজ সরল গল্পগুলোই এখন মানুষ বেশি করে দেখতে পছন্দ করেন। ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ গল্পের এখও চাহিদা আছে। কিন্তু সহজ সরল মাটির মানুষের গল্পের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তার মধ্যে মানুষ নিজেকে খুঁজতে পারেন। ফলে তার একটা অন্য ধরনের আকর্ষণ আছে।
প্রশ্ন: ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কারণে কি শিল্পীদের স্বাধীনতা বেড়েছে?
উত্তর: স্বাধীনতার কথা বলতে পারি না। তবে এটা বলতে পারি, এই মাধ্যমটাকে ভাল করে ব্যবহার করা গেলে আমাদের সকলের উপকার হবে। নিজের প্রতিভা দেখানোর জন্য খুব ভাল মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে ওটিটি। কারণ যে গল্পটা বলতে চাইছেন, সেটার সুযোগ এই মাধ্যমটা করে দিচ্ছে।
প্রশ্ন: হালে বহু বলিউড অভিনেত্রীকে নানা কারণে সমাজমাধ্যমে হেনস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। কেন এগুলোর পরিমাণ বাড়ছে বলে মনে হয়?
উত্তর: দেখুন, আমি কোনও সমাজমাধ্যমে নেই। তাই পুরোটা বলতে পারব না। তবে যেটুকু বুঝেছি, এই মাধ্যমগুলো আমাদের জীবনে এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর এটার অপব্যবহার হচ্ছে। ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে, বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। সেটাই সমস্যার। যত ক্ষণ না প্রত্যেকে নিজের প্রতি আবার সৎ হচ্ছেন, তত ক্ষণ এর কোনও সমাধান নেই। তা হলে কী পড়ে থাকে? এই বিষয়টা মেনে নিতে হবে। আর শিখে নিতে হবে, এর সঙ্গে কী ভাবে লড়াই করা যায়। যদি এমন কিছু বলেন, যা অন্যদের খারাপ লাগবে, তা হলে হেনস্থা হতে হবে। সমালোচনা হবে। এত মুখ! প্রত্যেকেরই বলার মত কথা আছে। আটকানো তো যাবে না!
প্রশ্ন: অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিকের পরিমাণ এখনও অভিনেতাদের তুলনায় কম। কী ভাবে দেখেন এই বিষয়টা?
উত্তর: এই বিষয়টা আলোচনা করতে আমার ভাল লাগে না। আমার নিজের জন্য ন্যায্য মনে হয়, ততটাই চাই। যদি সেটা কেউ রাজি হন, আমি তাতেই খুশি। কে কী পাচ্ছেন, তাতে কিছু যায় আসে না।