দীর্ঘ পাঁচ বছরের অপেক্ষা। ‘স্পাইডারভার্স’ নিয়ে প্রথম ছবি মুক্তির পাঁচ বছর পর বিভিন্ন ‘ডাইমেনসন’-এর স্পাইডারম্যান আবার একসঙ্গে ধরা দিল বড় পর্দায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রয়োজনে কলম ধরতে হয়। নিজের জীবনের গল্প লেখার সময় নিজেকেই কলম ধরতে হয়। অন্য কেউ গল্প বোনার হাল ধরলে তা অন্য দিকে মোড় নেয়। হয়তো অন্ধকার কোনও গর্তে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে সেই গল্প। ‘স্পাইডার-ম্যান: অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স’-এর মূল কথক মাইল্স মোরালেসের গল্পও খানিকটা এ রকম। বাবা-মা থেকে শুরু করে অন্য ‘ডাইমেনসন’-এর স্পাইডারম্যান সকলেই নিজেদের মতো মাইল্সের জীবনের গল্প লিখতে ব্যস্ত। চারদিকের কোলাহলে ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করেছিল মাইল্স। কিন্তু পরিস্থিতিই মাইল্সকে চোখে আঙুল দিয়ে বাস্তব দেখায়। মাইল্সও বুঝতে পারে এ বার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে কলম ধরার, নিজের জীবনের গল্প নিজে লেখার।
২০১৮ সালের পর পাঁচ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা। ‘স্পাইডার-ম্যান: ইনটু দ্য স্পাইডার-ভার্স’ ছবিতে মাইল্সের সঙ্গে বড় পর্দায় পরিচয় হয়েছিল দর্শকের। মার্ভেল কমিকসের পাতা থেকে স্পাইডারম্যান সম্পর্কিত ‘মাল্টিভার্স’-এর যে ছবি বড় পর্দায় ফুটে উঠেছিল তা দেখে আপ্লুত হয়েছিল মার্ভেল অনুরাগীরা। পরবর্তী ছবি মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন তাঁরা। তবে পাঁচ বছরের সময়কাল যে কতটা দীর্ঘ তা ক্ষণে ক্ষণে টের পাচ্ছিলেন তাঁরা। অবশেষে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল ‘স্পাইডার-ম্যান: অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স’।
‘স্পাইডার-ভার্স’-এর পরিসর আদতে অনেক বড়। সোয়া দু’ঘণ্টার দীর্ঘ ছবিতে গল্পের ছন্দ বজায় রেখে এই বৃহত্তর পরিসরটি তুলে ধরা খুব একটা সহজ কাজ নয়। কিন্তু এই কাজ সহজ না হলেও যে অসম্ভব নয় তার প্রমাণ দিলেন ছবি নির্মাতারা। প্রথম ছবিতে পরিচালকদের তালিকায় ছিলেন পিটার রামসে, বব পারসিচেটি এবং রোডনে রোথম্যান। তবে এ বার পরিচালকদের মুখ বদলেছে। জোকিম দোস স্যান্টস, কেম্প পাওয়ার্স এবং জাস্টিন কে থম্পসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন এ বার।
এ বার যেন চরিত্রগুলিও আগের চেয়ে অনেকটা পরিণত। চরিত্রগুলির সম্পর্কের সমীকরণও আরও বেশি জটিল। কিন্তু তার মধ্যেও হাস্যরসের কমতি ছিল না। ‘স্পাইডার-ভার্স’-এর যাবতীয় তথ্য পর্দায় তুলে ধরতে বিভিন্ন ‘ডাইমেনসন’ বা মাত্রার স্পাইডার-ম্যানকে দেখানো হয়েছে। আর সেখানেই আসল খেল দেখিয়েছেন ছবি নির্মাতারা। লেগো স্পাইডার-ম্যান থেকে শুরু করে ডাইনোসর স্পাইডার-ম্যান— কোনও কিছুই বাদ পড়েনি। তবে পবিত্র প্রভাকরের চরিত্র (স্পাইডার-ম্যানের ভারতীয় সংস্করণ) পর্দায় আলাদা ভাবে নজর কেড়েছে। কম সময়ের মধ্যে ভারতীয় স্পাইডার-ম্যানের হাবভাব পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে কোথাও কোনও ত্রুটি রাখা হয়নি।
স্পাইডার-ম্যানের ভারতীয়করণ করতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। নিউ ইয়র্কে যখন স্ট্যান লি-র সঙ্গে সত্যজিৎ দেখা করেছিলেন তখন স্পাইডার-ম্যানের ভারতীয় সংস্করণ তৈরি নিয়ে পরিকল্পনা করেন দু’জন। পবিত্র প্রভাকরের উপর স্পাইডার-ম্যানের মোট চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তবে বড় পর্দায় এই প্রথম ‘পবিত্র প্রভাকর’- এর দেখা মিলল। পবিত্র প্রভাকরের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটারের নামও। ‘স্পাইডার-ম্যান: অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স’ ছবির হিন্দি ভার্সনে পবিত্র প্রভাকরের চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন শুভমন গিল।
অ্যানিমেশন ছবি হলেও দেখে মনে হবে কমিক্সের পাতাগুলিই যেন রক্তমাংসের হয়ে উঠেছে বড় পর্দায়। ছবির সংলাপ মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। খলনায়কের চরিত্রের পাশাপাশি প্রতিটি চরিত্রকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর ফলে এক মুহূর্তের জন্যও গল্পের ছন্দপতন হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্রের সঙ্গে আরও আত্মস্থ করতে পারবে দর্শক। মার্ভেলের ছবি দেখতে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁদের মন ছুঁয়ে যেতে বাধ্য ‘স্পাইডার-ম্যান: অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স’।
তবে এই ছবি যেন মার্ভেল কমিক্সপ্রেমীদের জন্য আরও বেশি করে তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের জন্য ‘স্পাইডার-ম্যান: অ্যাক্রস দ্য স্পাইডার-ভার্স’ রত্নতুল্য। চিত্রনাট্যের বুনোট আরও শক্ত করতে স্পাইডার-ম্যানের পুরনো ছবির পাশাপাশি কমিক্স থেকেও বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। যাঁরা স্পাইডার-ম্যানের কমিক্স গুলে খেয়েছেন, তাঁদের জন্য এই ছবি এক বার দেখার মতো নয়, বার বার বড় পর্দার ‘স্পাইডার-ভার্স’-এ ডুব দিতে মানা করবেন না তাঁরা।