ঋতাভরী চক্রবর্তী ও নরেন্দ্র মোদী। ছবি: সংগৃহীত।
ভারতবর্ষ ও পাপুয়া নিউ গিনির যৌথ প্রযোজনায় প্রথম ছবি ‘পাপা বুকা’। যাতে বাঙালি অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী ‘রোমিলা’ নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করবেন। আপাতত মুম্বইয়ে রয়েছেন অভিনেত্রী। সেখান থেকে ফোনে কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
কেন পাপুয়া নিউ গিনি? ঋতাভরী জানালেন, এর আগে পাপুয়া নিউ গিনিতে একাধিক ছবির শুটিং হয়েছে কিন্তু ‘পাপা বুকা’ পাপুয়া নিউ গিনি (পিএনজি)-র প্রথম বড় ছবি। অভিনেত্রী বললেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পাপুয়া নিউ গিনির সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে উদ্যোগী। কিছু দিন আগে তিনি গিয়েছিলেন দ্বীপে।”
ভারত ও পাপুয়া নিউ গিনির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সাক্ষ্য মিলেছে আগেই। ২০২৩ সালে ২০ নভেম্বর, পিএনজি-র উলাউন আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাতের সময় আর্থিক সাহায্যে এগিয়ে আসে ভারত সরকার। ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার তুলে দেয় পাপুয়া নিউ গিনির সরকারের হাতে। বর্তমানে প্রায় তিন হাজার ভারতীয় রয়েছেন পাপুয়া নিউ গিনিতে।
ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবি। পিএনজির জনজাতি ও তাঁদের জীবনযাপন নিয়ে গবেষণার কাজে দ্বীপে রওনা দেয় নৃবিজ্ঞানী রোমিলা ও আনন্দ। আনন্দ-এর চরিত্রে অভিনয় করছেন দক্ষিণী অভিনেতা প্রকাশ বেয়ার। সেই জনজাতির দলপতির নাম ‘পাপা বুকা’। তার সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় দুই গবেষকের। এর পরে নীতি-আদর্শের দোলাচলে পড়ে গল্পের চরিত্রেরা। পাপুয়া নিউ গিনির অভ্যন্তরীণ বিষয়, তার বিবর্তন, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময়কালও উঠে আসবে ছবিতে।
আন্তর্জাতিক ছবি মানেই হলিউডে পাড়ি! বিনোদন দুনিয়ায় এই ধারণা চিরন্তন। সেখানে ঋতাভরী প্রশান্ত মহাসাগরের স্বল্প পরিচিত দ্বীপরাষ্ট্রের ছবি বাছলেন কেন? তিনি বললেন, “যে কোনও আন্তর্জাতিক ছবিই অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের আওতায় আসে। ফলে, আমি তো অন্তত ছবিতে প্রাণ ঢেলে কাজ করব। তা ছাড়া, মার্কিন সহ-প্রযোজক রয়েছেন। সুতরাং হলিউডে যে ‘পাপা বুকা’ পৌঁছবে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। ভাল কাজ করলে পরিচিতি আসবেই। সর্বোপরি, বিজুকুমার দামোদরণের ছবিকে কখনও না বলব না।” উল্লেখ্য, বিজুকুমার দামোদরণ দক্ষিণের আলোচিত চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। পাশাপাশি, তিনি একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকও। এর আগে ২০১৮ সালে বিজুকুমারের পরিচালনায় ‘পেন্টিং লাইফ’ ছবিতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী। ‘পাপা বুকা’ ছবিটি প্রযোজনা করছেন দক্ষিণী পরিচালক রঞ্জিত।
অবশ্য ‘রোমিলা’ চরিত্রের জন্য চেহারায় বিশেষ পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়নি ঋতাভরীর। একজন নৃবিজ্ঞানী যে ভাবে গবেষণা করেন বা যে ভাবে কথা বলেন, তা রপ্ত করতে হয়েছে অভিনেত্রীকে। এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বললেন, “স্থানীয় মানুষের সঙ্গে নরম ভাবে কথা বলতে হয়। ঠিক যে ভাবে বাচ্চার সঙ্গে চিকিৎসক কথা বলেন, যাতে প্রয়োজনীয় সব তথ্য বার করে আনা যায়।”
ছবির পোস্টারেও রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। একটি অবয়ব আর অজস্র কবরের ছবি পোস্টারে। ঋতাভরী বললেন, “কতগুলো কবর পেরিয়ে আজ এই জায়গায় পৌঁছেছে পাপুয়া নিউ গিনি, তার একটা আভাস রাখা হয়েছে পোস্টারে। বড় পরিসরে এই দ্বীপ বা সেখানকার জনজাতি সম্পর্কে কথা হয় না। সত্যি কথা বলতে গেলে, আমি নিজেও জানতাম না।” ছবির পোস্টারের নেপথ্যে রয়েছে পাপুয়া নিউ গিনির স্বাধীনতার লড়াইয়ের অধ্যায়। প্রায় পাঁচ লক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামীকে হত্যা করা হয় সেই সময়।
ঋতাভরী জানালেন, এই ছবির সঙ্গে পরোক্ষ ভাবে যুক্ত ভারত সরকার। দুই সরকারের সহযোগিতা রয়েছে ছবিতে। ১৪ অগস্ট পাপুয়া নিউ গিনিতে ভারতীয় হাই কমিশনারের অনুষ্ঠান রয়েছে। সেখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে ছবির ঘোষণা করা হবে। ১৭ দিনের শুটিং, হাতে বাড়তি ৩ দিন সময় নিয়ে ২০ দিনের পরিকল্পনা।