ছবিতে এক সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বিক্রম মাসে। ছবি: সংগৃহীত।
সদ্য মুক্তি পেয়েছে হিন্দি ছবি ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’। যদিও এই ছবি নিয়ে আলোচনা এবং সমালোচনা চলছে দীর্ঘ দিন ধরেই। বার বার বলা হয়েছে, এ ছবি আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ‘প্রোপাগান্ডা ফিল্ম’।
ছবির মূল চরিত্র সবরমতী এক্সপ্রেস এবং এক সৎ, নির্ভীক সাংবাদিক। ওই সাংবাদিকের চোখ দিয়েই যেন দর্শক ফিরে দেখতে চান এক ঐতিহাসিক সত্যকে— গোধরাকাণ্ড। ‘কাশ্মীর ফাইল্স’ বা ‘কেরালা স্টোরিজ়’-এর মতো ছবি নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। বলা হয়, বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি হয়েছিল ওই ছবিগুলি। গত কয়েক বছরে ‘প্রোপাগান্ডা ফিল্ম’-এর প্রচলন বেড়েছে বলিউডে। নিরপেক্ষ ইতিহাসকে বদলে দিয়ে একপেশে তথ্যের পুনর্নির্মাণ করেছে এই ছবিগুলি, অভিযোগ ছিল এমনই। কিন্তু ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’ অনেক বেশি বিতর্ক তৈরি করতে পারত, কারণ এ ছবির বাস্তব সত্য এখনও ভুলে যাননি মানুষ। এ ছবিতেও আগুনে পুড়ে যাওয়া সবরমতী এক্সপ্রেস দেখানো হয়েছে।
গুজরাতের গোধরা রেলস্টেশনে সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন লেগে যায়। ঝলসে মৃত্যু হয় ৫৯ জনের। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল সবরমতী এক্সপ্রেসে, অভিযোগ এমনই। আর তার পরেই ছড়িয়ে পড়েছিল সংঘর্ষ। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা। যদিও, কী ভাবে আগুন লেগেছিল ট্রেনে, সেই রহস্যের মীমাংসা হয়নি শেষ পর্যন্ত।
‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’-এ বার বার ফিরে এসেছে সবরমতী এক্সপ্রেসের বীভৎস অগ্নিকাণ্ডের মুহূর্ত। অমীমাংসিত রহস্যটিকে সরাসরি পরিকল্পিত হত্যা বলে দেগে দেওয়া হয়েছে। আঙুল তোলা হয়েছে এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দিকে। অথচ, সমকালের অন্য ঘটনাগুলির কোনও উল্লেখ নেই ছবিতে। কোনও গুরুত্বই দেওয়া হয়নি ঘটনা পারম্পর্যকে। বলা যেতে পারে সচেতন ভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
ইতিহাস বলছে, নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রায় দশ বছর পর করসেবকেরা অযোধ্যা থেকে ফিরছিলেন। সেই ট্রেনেই আগুন লেগে যায়। তার পর সংঘর্ষের আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা গুজরাতে। অথচ, আগের বা পরের ঘটনার কোনও উল্লেখ রাখা হয়নি ছবিতে। সেখানে শুধু উঠে আসে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, যা কিনা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
হিন্দি সংবাদমাধ্যমে কর্মরত এক সাংবাদিক এই বিষয়ে নতুন করে সত্যান্বেষণ করতে চান। তিনি অনেক তথ্য প্রকাশ্যে আনেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সে সব মানতে নারাজ। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন, অনেক সময়েই সাংবাদিকের কাছে সত্য বলার চেয়েও বেশি জরুরি পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়া। একান্ত বাস্তব হলেও এই বক্তব্যকে নেতিবাচক হিসাবেই দেখানো হয়েছে ছবিতে। নায়ক সাংবাদিক চিত্রনাট্যের সমবেদনা পায় অনেকখানি। চাকরি চলে যাওয়া থেকে প্রেমিকার ছেড়ে চলে যাওয়া— সবই সহ্য করতে হয়েছে তাকে। তবু তার নাছোড় জেদ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই সাংবাদিক অন্য একটি সংবাদমাধ্যমে তার সত্য তথ্য তুলে ধরার সুযোগ পায়।
যদিও এই ‘সত্য’-এর কোনও ভিত্তি ছবিতে দেখানো হয়নি। প্রমাণ তুলে ধরার দায় অবশ্য চলচ্চিত্রের থাকে না। বরং নজরে পড়তে পারে ‘প্রোপাগান্ডা’র ছড়াছড়িই।
এরই পাশাপাশি ছবিতে দেখানো হয়েছে হিন্দি ভাষার ওই সাংবাদিককে হেনস্থা করা হচ্ছে ইংরেজি না জানার জন্য। এ সব কারণে ওই সাংবাদিক এত বার কাজ হারিয়েছেন যে এক সময় মনে হয়েছে ছবিটি গোধরাকাণ্ড নিয়ে নির্মিত হয়েছে না কি চাকরি হারানো নিয়ে, বোঝা মুশকিল।
এই ছবির মতবাদ, যুক্তি পারম্পর্য বাদ দিলে যা পড়ে থাকবে, তা অবশ্যই ভাল অভিনয়। বিক্রান্ত মাসে এবং ঋদ্ধি ডোগরার অভিনয় মন ভরাবে। যদিও এ ছবিতে অভিনয় করার জন্য বিক্রান্তকে নানা ভাবে সমালোচিতও হতে হয়েছে। ভাল লাগে রাশি খন্নার অভিনয়ও। তবে পরিচালক ধীরজ সরনা আরও একটু দায়িত্বপূর্ণ ছবি বানালে খুশি হওয়া যেত।