দৃশ্যম ২ দেখবেন কী ? ছবি: সংগৃহীত
চোখের সামনে যা যা আছে, তা সত্যি? না কি যা দেখতে চাইছি, সেটাই সত্যি? এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই ২০১৩ সালে জীতু জোসেফ তৈরি করেন মালয়ালম ছবি ‘দৃশ্যম’। ২০১৫ সালে সেই ছবিরই রিমেক তৈরি করেছিলেন পরিচালক নিশিকান্ত কামাত। সে সময়ে ও রকম একটা টানটান থ্রিলার দেখে নড়েচড়ে বসেছিলেন গোটা দেশের দর্শক। সেই ছবির সিক্যুয়েল মালয়ালমে ইতিমধ্যেই গত বছর বানিয়ে ফেলেছেন জীতু জোসেফ। মোহনলাল অভিনীত ‘দৃশ্যম ২’ ছবিটি অনেকেই ঘরে বসে ওটিটি-তে দেখে ফেলেছেন। এ বার হিন্দিতে সেই সিক্যুয়েল মুক্তি পেল। পরিচালনা করেছেন অভিষেক পাঠক। মোহমলালের ছবি দেখে ফেলেছেন বলে যদি অজয় দেবগনের ‘দৃশ্যম ২’ না দেখেন, তা হলে বড় ‘মিস্’ করবেন।
ছবি শুরু হচ্ছে ২০১৪ সালের ৪ অক্টোবরের রাত থেকেই। মানে ঠিক যে দৃশ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল প্রথম ছবি। তার পর অবশ্য গল্প এগিয়ে যায় সাত বছর। দর্শক যেমন সাত বছর আগের সালগাঁওকর পরিবারকে এখনও ভোলেননি, দেখা যায় সালগাঁওকর পরিবারও সাত বছর আগের সেই বিভীষিকা এখনও ভোলেননি। হিট ছবির সিক্যুয়েল বানানো মুখের কথা নয়। একটা সাত বছর আগের গল্প তার নিজগুণে দর্শকের মনে থেকে যেতেই পারে। কিন্তু সেই স্মৃতি চাঙ্গা করে গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পরিচালকেরই। এবং অভিষেক সেটা ভালই পেরেছেন।
এমন একটি গল্প যেখানে দর্শক জানেন অপরাধী কে। অপরাধ কী, কী ভাবে হয়েছে সবই জানা। এমনকি, আগের গল্পে অপরাধী নিজেই পুলিশের কাছে তাঁর কুকর্মের কথা স্বীকার করে ফেলেছে। এখন একটি গোটা সিক্যুয়েল দাঁড়িয়ে আছে শুধু সেটা প্রমাণ করার উপর। এত কিছু জানানর পরও কিন্তু গোটা ছবি জুড়ে দর্শকের মধ্যে একটা ‘কী হয়-কী হয়’ ভাব ধরে রাখতে পেরেছেন নির্মাতারা।
ছবির মূলধন যদি হয় একটি টানটান চিত্রনাট্য, তা হলে সবচেয়ে দামি রত্ন এখানে অজয় দেবগন। মোহনলালের সঙ্গে তুলনা না টেনে অজয়কে দেখতে হয় বিজয় সালগাঁওকরের চরিত্রে। ক্লাস ফোর ফেল করা মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ যে তার যাবতীয় শিক্ষা অর্জন করেছে সিনেমা দেখে, সে নিজের পরিবারকে আগলে রাখার জন্য কী কী করতে পারে, তা দেখে দর্শকের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠবেই। আইনের ফাঁক গলে পুলিশের প্রতিটা চালে পাল্টা চাল দেয় বিজয়। সেই ভূমিকায় অজয়ের অভিনয় অনবদ্য।
ছবির বাকি কাস্টিংয়ে আগের ছবির সঙ্গে কোনও ফারাক নেই। প্রত্যেকটা পুরনো চরিত্রে রয়েছেন আগের অভিনেতারাই। সেটা যতটা নস্ট্যালজিক, ততটা সুবিধাজনক। সাত বছরে চরিত্রগুলির বয়স বেড়েছে। অভিনেতাদেরও বেড়েছে। তাই পর্দায় তাঁদের দেখলে দর্শক সহজেই মেলাতে পারেন। মনে হয় যেন সত্যিই সাতটা বছর পেরিয়ে গিয়েছে। শ্রিয়া সরন, ইশিকা দত্ত আগের মতোই এই ছবিতে ভয় পেয়ে থাকা মা-মেয়ে। দু’জনেই নিজভূমিকায় নজর কাড়বেন। তবে ছোট মেয়ের চরিত্রে শিশুশিল্পী ম্রুণাল যাদব এর আগের ছবিতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পেয়েছিল। এ বার তাকে সে ভাবে ব্যবহার করা হয়নি।
সে ভাবে ব্যবহার করা হল না তব্বুকেও। ছবিতে এত কম সময়ের জন্য তিনি থাকলেন যে চরিত্রটি ক্যামিও মনে হতেই পারে। গায়তোন্দের চরিত্রে এই ছবিতেও কমলেশ সবন্ত আগের মতোই জমিয়ে অভিনয় করেছেন। এ ছবিতে নতুন সংযোজন অক্ষয় খন্না। এর আগেও ‘ইত্তেফাক’-এর মতো কিছু ছবিতে তাঁকে আমরা এমন চরিত্রে দেখেছি। তাই অভিনয় ভাল হলেও নতুন লাগবে না দর্শকদের। ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন সৌরভ শুক্লও। ওই কয়েক মিনিট পর্দায় থেকেও কী করে দর্শকে নজর নিজের দিকে টানতে হয়, তা দেখিয়ে দিলেন তিনি।
ছবির মেকিং অসাধারণ। সুধীর চৌধুরীর ক্যামেরা প্রত্যেকটি চরিত্রকে বেশির ভাগ দৃশ্যে ক্লোজ আপে ধরেছে। তাই ড্রামা তৈরি করতে সুবিধা হয়েছে। আলো-আঁধারি গোয়া, বৃষ্টি ভেজা রাত, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, চরিত্রদের মনে আতঙ্ক— সবই দক্ষ হাতে ধরা পড়ে ক্যামেরায়। আবহসঙ্গীত আর সংলাপের যুগলবন্দি দারুণ জমে ওঠে প্রতিটি দৃশ্যে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার ছবিতেও কী ভাবে দর্শককে ধরে রাখতে হয়, কী ভাবে নাটকীয়তা তৈরি করতে হয়, তা সম্পাদক আরিফ শেখ দারুণ ধরেছেন।
‘দৃশ্যম ২’ কি আগের ছবির মতোই জমজমাট? এক কথায় বলতে গেলে ‘হ্যাঁ’। চিত্রনাট্যে ত্রুটি রয়েছে। কেন এত বছর পরও বিভিন্ন রাস্তাঘাট, সরাকারি হাসপাতাল বা গবেষণাগারে সিসিটিভি নেই, বোঝা গেল না। অন্তত বিজয়ের নিজের অফিসে যখন রয়েছে। তবে সে সব নিয়ে ভাবার সময় পাবেন না দর্শক। কারণ তাঁরা গল্পের উত্তেজনায় মজে থাকবেন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।