Christmas Release 2024

লাভের অঙ্ক বাড়িয়ে বলছে ‘খাদান’! আখেরে কি ক্ষতি হচ্ছে বাংলা ছবির? মত জানালেন প্রযোজকেরা

দেবের ‘খাদান’-এর বাণিজ্যের অঙ্ক যতটা ঘোষিত ততটাই কি বাস্তব? বাড়িয়ে বললে কি দর্শক বেশি আসবেন? লক্ষ্মীলাভের ক্ষেত্রে এই প্রচার শেষ পর্যন্ত কতটা সহযোগিতা করে টলিপাড়াকে? আদৌ করে কি? মুখ খুললেন বাংলা বিনোদন দুনিয়ার প্রযোজকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:২২
দেবের ‘খাদান’ নিয়ে বক্তব্য রাখলেন রানা সরকার, ফিরদৌসল হাসান, শ্যামসুন্দর দে।

দেবের ‘খাদান’ নিয়ে বক্তব্য রাখলেন রানা সরকার, ফিরদৌসল হাসান, শ্যামসুন্দর দে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

বড়দিনে চারটি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে— ‘খাদান’, ‘সন্তান’, ‘চালচিত্র’, ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’। প্রথম তিনটি ছবি ভাল বাণিজ্য করেছে। দেব যথারীতি ‘ফার্স্ট বয়’। ‘খাদান’ বাণিজ্যের পালে নতুন হাওয়া দিয়েছে। বহু বছর পরে তিনি আবার পুরনো অবতারে, যা দেখে তাঁর এই প্রজন্মের অনুরাগীরা নতুন করে প্রেমে পড়েছেন। প্রতি দিন অধিকাংশ প্রেক্ষাগৃহ ‘হাউসফুল’। যৌথ প্রযোজক নিসপাল সিংহ রানে আর দেবের মুখে চওড়া হাসি। হাসছেন ছবির পরিচালক সুজিত রিনো দত্ত, পুরো দল।

Advertisement

তার পরেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চার্স এবং সুরিন্দর ফিল্মস— যৌথ ভাবে ছবির বাণিজ্য এবং দর্শকসংখ্যা সম্বন্ধে বিবৃতি দিয়েছে। দাবি, ‘খাদান’ সাত দিনে ৭.২৬ কোটি ব্যবসা করেছে। শুধু বড়দিনেই আয় ১.৫১ কোটি টাকা। এক সপ্তাহে ৩.৫ লক্ষ দর্শক ছবিটি দেখেছেন।

‘খাদান’ দেব এন্টারটেনমেন্ট, সুরিন্দর ফিল্মসের যৌথ ঘোষণা।

‘খাদান’ দেব এন্টারটেনমেন্ট, সুরিন্দর ফিল্মসের যৌথ ঘোষণা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।

এই তথ্য কি সঠিক?

এ প্রশ্ন সমাজমাধ্যমে প্রথম তুলেছেন প্রযোজক রানা সরকার। তাঁর মতে, “দেব ফিরেছে, কমার্শিয়াল ফিল্মকে ফিরিয়ে এনে সুপারহিট করেছে। তাই বক্স অফিস কালেকশন বাড়িয়ে বলার কোনও দরকার নেই।” এই জায়গা থেকেই অনুরোধ, “সঠিক তথ্য দিন, বাংলা ছবির বাজারের প্রকৃত অবস্থা বোঝা দরকার। সেটা বোঝা গেলে বাণিজ্যিক ছবি অনেক বেশি বানানো হবে। বিনিয়োগ বাড়বে। ইন্ডাস্ট্রি বড় হবে।” কোনও ছবির বক্স অফিসের পরিসংখ্যান বাড়িয়ে বললে আসলে কারও লাভ হয় না, এমনই দাবি ‘চতুষ্কোণ’ প্রযোজকের দাবি। তাঁর মত, “কেউ বক্স অফিস পরিসংখ্যানে মিথ্যা অঙ্ক দেবেন না, বাংলা ছবির স্বার্থে।”

‘খাদান’ যা বাণিজ্য করেছে বা করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কি তা হলে দেখানো হচ্ছে না?

প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। রানা বলেছেন, “অনেক দিন পরে বাংলা বাণিজ্যিক ধারার ছবির দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। পুরোটাই দেবের কৃতিত্ব। ওঁর প্রচারটাও মনে রাখার মতো।” তার পরেও প্রশ্ন জেগেছে তাঁর মনে। প্রযোজকের জিজ্ঞাসা, “দেব এবং সুরিন্দর ফিল্মসের কথা অনুযায়ী, রোজ ৪০-৫০টি প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ থাকছে। শনি-রবিবার সমস্ত শো হাউসফুল। এটা সত্যি? পাশাপাশি, রাজ চক্রবর্তীর ‘সন্তান’, প্রতিম ডি গুপ্তর ‘চালচিত্র’ও কিন্তু সফল।” এই তিনটি ছবি ভাল ফল করছে, দর্শক সেটা এমনিতেই বুঝতে পারছে। বাড়তি প্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে পরিসংখ্যান জানানো কি খুব প্রয়োজন? ‘সমস্ত’ বা ‘অধিকাংশ’ শো হাউসফুল বললেই তো মিটে যায়। সেই জায়গা থেকেই তাঁর মনে হচ্ছে, এ যেন অহংয়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াই। যে কারণে বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান বাড়িয়ে বলার চেষ্টা। কিন্তু ভুল সংখ্যা বা পরিসংখ্যান বোধহয় জানানো প্রচারের সঠিক পদ্ধতি নয়। রানার কথায়, “এমনিতেই বাংলা ছবির অবস্থা খুব খারাপ নয়। কিন্তু বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান ততটাও ভাল নয়। ব্যতিক্রম ‘বহুরূপী’, ‘কর্ণসুবর্ণের গুপ্তধন’ বা দেবের আগের ছবি ‘প্রজাপতি’। দেবের এই ছবিটিও মাইলফলক তৈরি করবে ছবির গুণে, দেবের টানে। তার জন্য বাড়িয়ে বলার আদৌ কতটা প্রয়োজন তা নিয়ে আমার দ্বিধা রয়েছে।” তাঁর যুক্তি, এতে দর্শকমনে বা টলিউডের বাজারে ভুল প্রভাব পড়তে পারে।

এই ভাবনা কি বাকি প্রযোজকদেরও? অতনু রায়চৌধুরী, ফিরদৌসল হাসান বা শ্যামসুন্দর দে-ও রানার কথা সমর্থন করছেন? সত্যিই কি ইদানীং অনেক বাংলা ছবির বাণিজ্য পরিসংখ্যান বাড়িয়ে বলা হয়? অতনু শহরের বাইরে। তাঁকে ফোনে ধরা যায়নি। বাকি দুই প্রযোজক নিজেদের বক্তব্য বলেছেন।

বড়দিনে মুক্তি পেয়েছে ফিরদৌসল হাসানের ‘চালচিত্র’। তাঁর কথায়, “আমি কোনও দিনই ছবির বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান দিই না। আমার ছবি ভাল কি না, সেটা দর্শক বলবেন। আমি কেন নিজের প্রচার করতে যাব! যদিও আমার ছবি শতকরা হিসাব অনুযায়ী ভাল ফল করেছে। পরিসংখ্যানে কম। কারণ, ‘চালচিত্র’ বেশি প্রেক্ষাগৃহ পায়নি।” তবে তিনি যে দেবের ছবির বাণিজ্য পরিসংখ্যান সম্বন্ধে কিছুই জানেন না, তা-ও দাবি করেন। ফলে, বিষয়টি নিয়ে তাঁর কিছু বলা উচিত বলেও মনে করেন না। প্রচারের স্বার্থে বাড়িয়ে পরিসংখ্যান দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত মনে করেন প্রযোজক? এই প্রশ্নের জবাবে ফিরদৌসলের মত, “এর দু’টি দিক রয়েছে। এই ধরনের প্রচার হয়তো দর্শকমনে কিছু প্রভাব ফেললেও ফেলতে পারে। লগ্নিকারীরা কিন্তু সমাজমাধ্যমে প্রচারিত খবরের উপরে নির্ভর করে বিনিয়োগ করবেন না। এঁরা সব দিক খতিয়ে, প্রকৃত খবর জেনে তার পর বাংলা ছবিতে বিনিয়োগ করবেন।” সে ক্ষেত্রে ‘খাদান’-এর বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান সঠিক হলে লগ্নিকারী আগামী দিনে দেবকে নিয়ে এবং বাণিজ্যিক ছবি নিয়ে নতুন করে ভাববেন।

শ্যামসুন্দর দে-র শ্যাডো ফিল্মস এর আগে যৌথ ভাবে দেবের ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গরহস্য’ প্রযোজনা করেছেন। ‘খাদান’-এর সঠিক বাণিজ্যক পরিসংখ্যান তাঁরও জানা নেই। সেই জায়গা থেকে প্রযোজকের বক্তব্য, “আমার ধারণা, বড়দিন এবং গত রবিবার মিলিয়ে ২.৫ কোটি টাকা ব্যবসা করেছে ‘খাদান’।” তাঁর অনুমান, বাকি দিনে দিনপিছু ৭০ লক্ষ টাকা করে ধরলে আয়ের পরিসংখ্যান দাঁড়াবে ৩.৫ কোটি টাকা। এ বার এই দুই পরিসংখ্যান মেলালে সাত দিনে ৬ কোটি টাকা আয় করেছে ‘খাদান’।

বোঝাই যাচ্ছে বাংলা ছবির প্রযোজকদের একাংশ মনে করছেন, বাংলা ছবির সুদিন দেখাতে বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান বাড়িয়ে বলা হলেও শেষ রায় ‘জনতা জনার্দন’-এরই। ‘লোকের মুখে জয় লোকের মুখে ক্ষয়’, এই প্রবাদ মেনে অনেক সময় কমসংখ্যক প্রেক্ষাগৃহ পেয়েও ছবি সফল। একই ভাবে বাড়তি প্রচার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। সেই প্রচার দেখে দর্শকেরা তো নয়ই, লগ্নিকারীরাও চট করে ভুলবেন না।

Advertisement
আরও পড়ুন