মঞ্চ মাতাচ্ছেন কুমার শানু। ছবি: সংগৃহীত।
মঞ্চে প্রমাণ আকারের কাটআউট। অন্য দিকে জ্বলজ্বল করছে ‘আশিকী’ ছবির পোস্টার। প্রতিযোগীরা তাঁর গান গাইছেন। বিচারকেরা তাঁকে একের পর এক গান শোনানোর অনুরোধ জানাচ্ছেন। এখনও যাঁর এত চাহিদা তাঁরই গানের রিক্রিয়েশনে তিনি নেই! কেন? ‘সারেগামাপা’ রিয়্যালিটি শো-এর বিশেষ পর্বে এসে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে জবাব দিলেন কুমার শানু।
প্রশ্ন: মঞ্চে, গানে, উদ্যাপনে শুধুই আপনি। নব্বইয়ের দশক ফিরে এল?
উত্তর: (হাহাহাহা) পুরোটাই পরিচালক অভিজিৎ সেনের কৃতিত্ব। ওঁর সঙ্গে আলাদা সম্পর্ক। আমাকে নিয়ে তাই ‘সারেগামাপা’ রিয়্যালিটি শো-এর বিশেষ পর্ব। সত্যিই আনন্দ হচ্ছে। আরও ভাল লাগছে, তৃতীয় প্রজন্ম নব্বইয়ের গান গাইছে। এই ভালবাসার টানেই ভাইরাল জ্বর নিয়ে ছুটে এসেছি।
প্রশ্ন: প্রতিযোগীরা আপনার গান কেমন গাইছেন?
উত্তর: খুব ভাল। সবার আগে এটা দেখে মন ভাল হয়ে যাচ্ছে, এরা শুধুই নিজেদের প্রজন্মের গান গাইছে না। আমাদের গান যত্ন করে পরিবেশন করছে। এ ভাবে গাইলে আগামীতেও ওদের কণ্ঠে নব্বইয়ের দশকের গান আলাদা মাত্রা পাবে। দর্শক-শ্রোতাদেরও মন ভাল হয়ে যাবে। ওঁদের মন ভাল মানে শো-এর টিআরপি বাড়বে।
প্রশ্ন: নিজের গান শুনতে শুনতে কখনও মনে হয়েছে, তখন গানটা যদি ও ভাবে না গেয়ে এ ভাবে গাইতাম...
উত্তর: অবশ্যই। ধরুন, নিজের কোনও একটা গান পঞ্চাশ বার শুনেছি। শুনতে শুনতে অনেক সময়েই মনে হয়েছে, এই জায়গাটা যদি একটু অন্য রকম করে গাইতাম। আমার সেই ইচ্ছে কিন্তু অপূর্ণ থাকে না। মঞ্চে যখন গান শোনাই তখন গানের মধ্যে সেই ভাবনা বুনে দিই। পুরনো গানে নতুন বৈশিষ্ট্য জুড়ে গাই। সেই বদল কেবল আমিই বুঝতে পারি।
প্রশ্ন: রিয়্যালিটি শো-এর বিচারকেরা তো আপনাকে পেয়ে একের পর এক গান শোনানোর আবদার জানাচ্ছেন...
উত্তর: (হেসে ফেলে) ভাল লাগছে। খুব ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে, পুরনো দিনের গানের জলসায় ফিরে গিয়েছি। এখনও গানের অনুষ্ঠান করি। সেখানেও এ রকম অনুরোধ আসে। আসল কথা, আমাদের গান বিচারক থেকে নবীন-প্রবীণ শ্রোতাদের আজও আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আমাদের অস্বীকার করার, ভুলে যাওয়ার কোনও উপায় নেই। এমন গান আমরা রেখে যাচ্ছি। তা ছাড়া, শিল্পী তো শেষ জীবন পর্যন্ত শিল্পেই ডুবে থাকে।
প্রশ্ন: আপনার কণ্ঠ এখনও অনায়াসে তার সপ্তক ছুঁয়ে যায়। রোজ রেওয়াজ করেন?
উত্তর: করি, অল্প করে রোজই রেওয়াজ করি। ভাইরাল জ্বর নিয়ে এসেছি। অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছি। তার পরেও আমার গলা ভাল লাগছে! সবটাই ঈশ্বরের আশীর্বাদ। শিল্পীজীবনের এটাই পরম পাওয়া।
প্রশ্ন: রিয়্যালিটি শো-এর প্রতিযোগীরা শো শেষে মাচা, মঞ্চানুষ্ঠান করতে গিয়ে নাকি রেওয়াজের সময় পান না। তাই হারিয়ে যান?
উত্তর: শুধু ওটাই কারণ না। ওঁরা আমাদের গান গাইতে গাইতে ‘কণ্ঠী’ হয়ে যান— ‘শানু কণ্ঠী’, ‘উদিত কণ্ঠী’, ‘অলকা কণ্ঠী’। আসল সমস্যা সেখানেই।
প্রশ্ন: আপনিও তো ‘কিশোর কণ্ঠী’ ছিলেন...
উত্তর: হ্যাঁ, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তার পর গানে নিজস্বতা এনেছি। তবে এই জনপ্রিয়তা পেয়েছি। আগামী প্রজন্ম বা এই রিয়্যালিটি শো-এর প্রতিযোগীরা আমাদের ভালটুকু নিয়ে যদি নিজেদের মতো গান তা হলে উন্নতি হবেই।
প্রশ্ন: অনেক শো-এর বিচারক হয়েছেন। ‘শানু কণ্ঠী’ থেকে কাউকে নিজের যোগ্যতায় আলাদা পরিচয় তৈরি করতে দেখেছেন?
উত্তর: (একটু থেমে) পাইনি। তা হলে আগের বলা কথাগুলো বলতেই হত না।
প্রশ্ন: আপনার কথাতেই ফিরি। আপনার আত্মবিশ্বাস, নব্বইয়ের গান শ্রোতারা ভুলতে পারবেন না। সম্ভবত সেই জন্যই এখনকার ছবিতে সেই গান নতুন করে তৈরি হচ্ছে। অথচ, আপনাদের গান আপনারাই গাইছেন না!
উত্তর: পুরোটাই প্রযোজক-পরিচালকের উপরে নির্ভর করে। ওঁরা পুরনো গান নতুন শিল্পীদের গাইতে দিচ্ছেন। তাতে প্রতিযোগিতা তৈরি হচ্ছে। ওঁরা হেরে যাচ্ছেন। আমার প্রার্থনা, প্রযোজক-পরিচালকদের সুবুদ্ধি হোক। নব্বইয়ের দশকের যে সব শিল্পী এখনও গাইতে পারেন তাঁদের ‘রিক্রিয়েটেড’ গান তাঁদের দিয়েই গাওয়ানো হোক। গানগুলো শুনতে ভাল লাগবে।
প্রশ্ন: অমিতাভ বচ্চন, করণ জোহর, জ্যাকি শ্রফের পর কুমার শানু এআই নিয়ে সরব...
উত্তর: (থামিয়ে দিয়ে) এই নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। বলতে পারব না। আর কয়েকটা দিন সময় দিন। আপনাদের ডেকে উত্তর দেব।
সাক্ষাৎকার শেষ হতেই গায়ককে ঘিরে এক ঝাঁক তরুণী। তাঁরা নিজস্বী তুলবেন কুমার শানুর সঙ্গে। সিংহাসনের মতো চেয়ারে বসা ‘মেলোডি কিং’-এর মুখেচোখে তৃপ্তির রোশনাই। একটু আগে এই কথাটাই তো বলছিলেন, তাঁকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই!