ইন্দ্রাশিস রায় ইনস্টাগ্রাম
প্রথম বার বিয়ের আসরে বসা আর প্রথম বার মঞ্চে ওঠা, সব নিয়েই শরীর আনচান করে উঠেছ অভিনেতা ইন্দ্রাশিস রায়ের। ভাবলেন, একটু চেকআপ করিয়ে নেওয়া ভাল। কী সব যে হচ্ছে শরীরে! বড় কোনও রোগ ধরল না তো? পরিবার সূত্রে অনেক দিনের পরিচয় চিকিৎসের সঙ্গে। তিনি স্পষ্ট জানালেন, ‘‘১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অনেক কিছু হবে। তার আগে আসার প্রয়োজন নেই।’’ ইন্দ্রাশিস অনুরাগীদের কাছে খবর না থাকলেও চিকিৎসক জানতেন সামনেই বিয়ে। তারই লক্ষণ এ সব। তার পর বিয়ের আসরে বসলেন, সারলেন রেজিস্ট্রি। সমস্ত অস্বস্তি যেন ফুরুৎ করে উড়ে গেল। এখন খুব শান্ত লাগছে বলে জানালেন অভিনেতা। কিন্তু সামনে যে বড় পরীক্ষা! তা নিয়ে একটু আধটু পেট গুড়গুড় হচ্ছে বইকি। ফেলুদার মতো ফ্র্যাঞ্চাইজির বড় দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া! ভয় হচ্ছে না? বাঙালির জন্মগত অধিকার রয়েছ ‘ফেলুদা’ ও ‘ব্যোমকেশ’-এর উপর। সমস্ত প্রত্যাশাকে কী ভাবে পূরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে অভিনেতার?
এ সমস্ত প্রশ্ন তিনি নিজেকে করেছেন আগেই। তাই উত্তরগুলোও প্রস্তুত। আনন্দবাজার ডিজিটালকে ইন্দ্রাশিস বললেন, ‘‘আমি এই প্রথম মঞ্চে উঠছি। অনেক দেরিতে মঞ্চে কাজ করছি। আমার শরীরের একটা অংশ নয়, সমস্তটা সারা ক্ষণ দর্শকের সামনে উন্মুক্ত। বড় চ্যালেঞ্জ। বুঝলাম, এক জন অভিনেতার জন্য মঞ্চাভিনয়টা বড্ড প্রয়োজন। কিন্তু ভয় করছিল প্রথমে। দু’দিন আগেই বাবুদার (সন্দীপ রায়) সঙ্গে কথা বলে এলাম। এখন ভয়টা আর নেই।“
ইন্দ্রাসিশ জানালেন, সন্দীপ রায় প্রথমেই ছবি দেখতে বারণ করেছেন। কেবল বইগুলো পড়তে বলেছেন। ইন্দ্রাশিস ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করছেন বলেই যে নতুন করে সত্যজিতের ছবিগুলো দেখছিলেন, তা নয়। ফেলুদায় তো নেশা রয়েছে বাঙালির। তাই দেখা শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু সন্দীপ রায়ের কথায় সে সব বন্ধ করে দিলেন। সত্যজিতের কলম থেকে নতুন করে ফেলুদাকে দেখার চেষ্টা করছেন ইন্দ্রাশিস।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বা সব্যসাচী চক্রবর্তীর মধ্যে কাকে অনুসরণ করার কথা ভেবেছেন?
অভিনেতার স্পষ্ট জবাব, ‘‘এক জনকেও না। তাঁরা কিংবদন্তি। তাঁদের অনুসরণ করার ভুল আমি করব না। হ্যাংওভার কাটিয়ে নতুন করে দেখার চেষ্টা করছি।’’ মঞ্চে অভিনয় করাটাকে জীবনের ‘নতুন অধ্যায়’ বলে চিহ্নিত করলেন ইন্দ্রাশিস।
সেই প্রসঙ্গে উঠে এল জীবনের নতুন অধ্যায়ের আরেকটি ধাপ নিয়ে।
সৌরভী তরফদারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন সম্প্রতি। কেন এত চুপিসারে বিয়েটা সারলেন তিনি? জানা গেল, ঘটা করেই বিয়ে করার কথা ছিল। জুন মাস থেকেই চলছিল বিয়ের পরিকল্পনা। কিন্তু সৌরভীর দাদা সাংহাইয়ে থাকেন বলে বিয়েটা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। যদিও শেষমেশ করোনার দাপটে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। তাই আর উপায় থাকল না। ছোট করে অনুষ্ঠান সারতে হয়। অনিন্দিতা বসু, সৌরভ দাস, গৌরব চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমার, গৌরব চক্রবর্তী, রিদ্ধিমা ঘোষ প্রমুখ নিমন্ত্রিত ছিলেন। ইন্দ্রাশিস জানালেন, করোনার দাপট কমলে এবং সৌরভীর দাদা ফেরার পর বড় করে অনুষ্ঠান করবেন তাঁরা।
প্রেমটা কবে থেকে?
১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধুত্ব সৌরভী ও ইন্দ্রাশিসের। ‘গানের ওপারে’ সিরিয়াল চলাকালীনই তাঁদের আলাপ। সৌরভী তখন ‘ভালবাসা ডট কম’ ধারাবাহিকে অভিনয় করতেন। ‘স্টার পরিবার অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে দেখা হত। তার পর বন্ধুত্ব গাঢ় হতে হতে কবে প্রেম হয়ে গেল নিজেরাও জানেন না। সৌরভী তার পর প্রেসিডেন্সি থেকে ‘পলিটিক্যাল সায়েন্স’ নিয়ে পড়াশোনা করে চাকরিতে ঢুকে যান। প্রায় দু’বছর হতে চলল তাঁদের প্রেমের। ‘ভালবাসি’ না বলেও ভালবাসতে শুরু করলেন একে অপরকে।
কিন্তু বিয়ের প্রস্তাব?
ইন্দ্রাশিস বললেন, ‘‘আমিই বিয়ের প্রস্তাব দিই। কিন্তু আমি খুবই আনরোম্যান্টিক একটা মানুষ। ফিল্মি পন্থায় ঘটেনি কিছুই। এক দিন গাড়িতে যেতে যেতে বললাম যে ‘এ বারে কি আমাদের সম্পর্কটাকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়?’ দেখলাম সৌরভীও রাজি হয়ে গেল। ব্যস!’’
সেই তাঁদের পথ চলা শুরু। দাম্পত্য জীবনের কথা জিজ্ঞেস করতে অভিনেতা জানালেন, ‘‘প্রচণ্ড অস্থির হয়ে পড়েছিলাম বিয়ের আগে। বিয়ের পর দেখলাম, সব ভীষণ শান্ত। আরামবোধ করছি। অন্য আর কিছু খুব একটা আলাদা নয়। আমরা যেন আগের মতোই বন্ধু, যাঁরা একে অপরকে খুব ভালবাসি। শুধু অফিসিয়ালি এক সঙ্গে থাকছি। এই আর কি।’’