Celebrity Interview

চুম্বনদৃশ্যে অভিনয় করতে পারব না, তাই প্রথম সারির অনেক পরিচালককে না বলেছি: বাসবদত্তা

কয়েক দিন পরেই নতুন সিরিয়ালের শুটিং শুরু করবেন বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়। মাঝে রয়েছে কয়েক দিনের ছুটি। ১৩ বছর পার করে ফেলেছেন টলিউডে। এত বছরের অভিজ্ঞতাই আনন্দবাজার অনলাইনকে শোনালেন বাসবদত্তা।

Advertisement
উৎসা হাজরা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩ ১৫:২০
Basabdatta Chatterjee

বাসবদত্তা কি শান্তশিষ্ট, না কি মেজাজি? ছবি: ফেসবুক।

মধ্য কলকাতার ১৩৫ বছরের পুরনো বাড়িতেই কেটেছে তাঁর মেয়েবেলা। নিজের ভাইবোন না থাকলেও তুতো দাদা বোনেদের নিয়েই কেটেছে অনেকটা। তাই শুটিংয়ের ফাঁকে মেয়েকে সামলাতে হলে বাসবদত্তা চট্টোপাধ্যায়ের ভরসা তাঁর এই বোনেরাই। তাঁর স্বামী পেশায় সাংবাদিক। ফলে দু’জনেই ব্যস্ত। কী ভাবে কর্মজীবন এবং ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখছেন অভিনেত্রী? নতুন সিরিয়াল শুরু হওয়ার প্রাক্কালে বাসবদত্তার গল্প শুনতেই তাঁর এত বছরের পুরনো বাড়িতে হাজির আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রশ্ন: মেয়ে হওয়ার পর দায়িত্ব বেড়েছে। সঙ্গে আবার কাজও শুরু করেছেনএখন আপনার জীবনটা ঠিক কেমন?

Advertisement

বাসবদত্তা: এটা ঠিক, আগে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াতাম। এখন দায়িত্ব এসেছে, ফলে সেই সুযোগ নেই। তবে মায়ের কাছে এলে এখনও কিছুটা আরাম পাই। সব থেকে কষ্টকর হল, বাচ্চা মানুষ করার জন্য খুব ধৈর্যশীল হতে হয়। যেটা আমার মোটে নেই। মাঝেমাঝে ১১ মাসের মেয়েকে বকুনি দিয়েও ফেলি। প্রায় এক বছর হল ঘুমোতে পারিনি। সেটা সত্যিই বেশ কঠিন। কারণ, আমি ঘুমোতে খুব ভালবাসি।

প্রশ্ন: আপনাকে দেখে তো বেশ শান্তশিষ্ট মনে হয়। আপনি রাগ করেন?

বাসবদত্তা: না, আমি কিন্তু সব সময় শান্ত নই। খুব তাড়াতাড়ি আমি রেগে যাই, আবার সঙ্গে সঙ্গে তা কমেও যায়।

Basabdatta Chatterjee

কর্মজীবন এবং ব্যক্তিজীবনের মধ্যে কী ভাবে ভারসাম্য রাখেন বাসবদত্তা? ছবি: ফেসবুক।

প্রশ্ন: শুটিংয়ের সেটে কখনও রাগারাগি করেছেন?

বাসবদত্তা: হ্যাঁ, বহু বার করেছি। আমার সামনে কোন পরিচালক, প্রযোজক, প্রোগ্রামার আছে তাতে কোনও যায় আসে না। হয়তো বাজে ভাষা ব্যবহার করিনি। তবে ভুল দেখলে আমি আমি চুপ থাকি না। ভুলটা স্বীকার করলেই মিটে যায়। এ জন্য অনেকে মনে করেন আমি ঠোঁটকাটা, নাকউঁচু। সেই ভাবনা আমায় খুব একটা প্রভাবিত করে না। আবার অনেক সময় যে দিন ছুটি চেয়েছি সে দিনই যদি আমার ডেট দরকার হয়, তখন কথা কাটাকাটি তো হবেই। আর আমি আগে থেকে ছুটি নিয়েছি, তার পর যদি শেষ মুহূর্তে আমায় আসতে বলা হয়, আমি বাড়িতে বসে থাকব তবু ডেট দেব না।

প্রশ্ন: আপনি তো বিয়ে করেছেন সাংবাদিককে। আপনার পেশায়ও সময়ের কোনও ঠিক থাকে না। তা হলে সংসার সামলান কী ভাবে?

বাসবদত্তা: আমার বাবাও সাংবাদিক ছিলেন। সুতরাং সাংবাদিকদের জীবন সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহল। বাবা যদিও বিনোদন সাংবাদিক ছিলেন। তবে যখন তখন বেরোনো— সেগুলো নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না। আমি তো অভ্যস্ত।

প্রশ্ন: আপনার বাবা না হয় সাংবাদিক ছিলেন, আপনার জীবনের লক্ষ্য কী ছিল ছোটবেলায়?

বাসবদত্তা: বাবাকে দেখে আমারও প্রথমে সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছেই ছিল। সঞ্চালক হওয়ার শখ হয়েছিল। উচ্চ মাধ্যমিকের সময় থেকেই আমি সঞ্চালনার কাজ করতাম। কখনও পড়াশোনা করেই ওই ১০টা-৫টার চাকরির ইচ্ছে ছিল না। তার পর তো আচমকাই ‘গানের ও পারে’ সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ আসে। দেখতে দেখতে ১৩ বছর কাটিয়েও ফেললাম।

Basabdatta Chatterjee

১৩ বছরের অভিনয় জীবন থেকে কী কী শিখলেন বাসবদত্তা? ছবি: ফেসবুক।

প্রশ্ন: কিন্তু ১৩ বছরের কেরিয়ারে এত কম সিনেমা বা সিরিয়াল করেছেন। ধীর গতিতে এগোচ্ছেন বলে মনে হয়?

বাসবদত্তা: দোষ কিছুটা আমার। আমি বেছে কাজ করতেই পছন্দ করি। তিনটে সিরিয়ালে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছি। একটা সিরিয়াল শেষ হওয়ার পর নিজের জন্য একটু সময় দরকার হয় আমার। আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও ঘটেছে কাজের কথা অনেক এগিয়ে যাওয়ার পরেও কাজটা আর হয়নি।

প্রশ্ন: এমন কোনও ঘটনার কথা বলা যাবে?

বাসবদত্তা: আমার সঙ্গে এমন ঘটনা প্রচুর হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা প্রথম সারির পরিচালক। বড় ব্যানারে ছবি তৈরি করছেন। তাঁরাই এমনটা করেছেন। এক জনের নাম নিতে চাই না। আমি তখন ‘নেতাজি’ সিরিয়াল করছি। তিনি দু’বছর ধরে আমার সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন। শুটিংয়ে কত দিন আমায় দরকার, সেটাও কথা হয়ে গেল। চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল যে চরিত্রটা আমিই করছি। সেটে আমি কথাও বলে রাখলাম। তার পর দু’দিন পরে আমি কাগজে পড়েছি সেই পরিচালক অন্য অভিনেত্রীকে নিয়ে ছবির কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তার পর আমি তাঁকে মেসেজ করে লিখেছিলাম, আপনি যেটা করলেন, আমি আর কখনও আপনার সঙ্গে কাজ করব না। এখানে জানানোর ভদ্রতাটুকু মানুষের নেই।

প্রশ্ন: ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা আপনাকে কী শেখাল? এই ঘটনাগুলো ঘটার মূল কারণ কী?

বাসবদত্তা: এমন অপেশাদার মনোভাব আমি কলকাতায়ই লক্ষ করেছি। মুম্বইয়ে আমি অনেকগুলো বিজ্ঞাপনী ছবিতে কাজ করেছি। ওখানে কিন্তু এমন নয়। না প্রয়োজন হলে জানিয়ে দেওয়া হয়।

প্রশ্ন: এই কারণেই কি আপনাকে তথাকথিত ইন্ডাস্ট্রির প্রথম সারির পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে দেখা যায় না?

বাসবদত্তা: সব সময় সেটা নয়। ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে কিছুতেই ম্যাচ করল না। এমনটা বার বার হয়েছে। তাই মাঝেমাঝে আক্ষেপও হয়।

প্রশ্ন: সিরিয়াল, সিনেমায় তো কাজ করেছেন। ‘ওটিটি’-প্ল্যাটফর্মে কাজের সুযোগ এসেছে?

বাসবদত্তা: ‘ওটিটি’র থেকে কাজের সুযোগ পরিমাণে কম এসেছে। যখন ‘মন নিয়ে কাছাকাছি’ সিরিয়ালটিতে অভিনয় করতাম তখন ‘হইচই’ থেকে বেশ কিছু কাজের সুযোগ আসে। কিন্তু ওদের কনটেন্ট আমার জন্য ঠিক নয় বলে মনে হয়েছিল। তাই না করে দিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: চরিত্র বাছাইয়ে সময় আপনি কি অনেক শর্ত রাখেন? ছোট পোশাক পরা বা চুম্বনদৃশ্যে অভিনয় করতে নারাজ?

বাসবদত্তা: হ্যাঁ, তা আপনি বলতেই পারেন। হাঁটুর উপরে পোশাক পরতে আমার তেমন সমস্যা নেই। তবে দৃশ্য নিয়ে সমস্যা আছে। যেমন উদাহরণ দিই। ‘উড়োজাহাজ’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য আমায় ডেকেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। দেখাও করেছিলাম। কিন্তু সেখানেও একটি দৃশ্য ছিল, যেটা শুনে বলেছিলাম আমি ওই দৃশ্যে অভিনয় করতে পারব না। এমন আরও একটি কাজ এসেছিল, যেখানে একটি ‘লিপলক’-এর দৃশ্য ছিল। তাই সেটাও না করে দিই। আমার নিজের কিছু নীতি আছে সেটা থেকে সরতে পারব না। এত কিছুর পরেও তো ভাল কাজ করছি।

প্রশ্ন: নিজের গণ্ডি ছোট করে দিচ্ছেন বলে মনে হয় না?

বাসবদত্তা: অবশ্যই মনে হয়। হয়তো খুব ভাল কাজ হাতছাড়া করার জন্য প্রথমে মনখারাপ হয়। তার পর আবার ঠিক হয়ে যায়। মনে হয়, একটা দু’মিনিটের দৃশ্যের জন্য এত ভাল কাজ হাতছাড়া হয়ে গেল! খুব আক্ষেপও হয়। কিন্তু ওই জায়গায় আত্মত্যাগ করতে পারব না।

প্রশ্ন: আপনার কখনও ‘মশলা’ ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছে হয়নি? বিদেশি লোকেশনে শিফন শাড়িতে নায়কের সঙ্গে রোম্যান্স করার ইচ্ছে হয়নি?

বাসবদত্তা: আমার কোনও দিন ইচ্ছে করে না। কখনও নিজের কেরিয়ারকে এই ভাবে দেখিনি। আর তা ছাড়া আমার পেশিবহুল হিরো পছন্দ নয়। আমি যা করেছি তাতেই খুব তৃপ্ত এবং খুশি।

আরও পড়ুন
Advertisement