শাশ্বত-কন্যা হিয়ার নতুন যাত্রা। ছবি: সংগৃহীত।
ছ’মাস বয়স থেকে লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের সঙ্গে তাঁর আলাপ। আর প্রথম আলাপেই প্রেম। হিয়া চট্টোপাধ্যায়ের সেই ভালবাসাই এ বার পরিণতি পেতে চলেছে। বাংলা ছবিতে কাজ করবেন তিনি। শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের নাতনি, শাশ্বতর মেয়ে হিয়া সকলের খুবই চেনা। রাহুল মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবির মাধ্যমেই নায়িকা হিয়াকে পেতে চলেছেন দর্শক। ছবি শুরুর আগে প্রথম আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে আড্ডায় শাশ্বত-কন্যা।
প্রশ্ন: প্রথম ছবির কাজ। শুভেচ্ছা।
হিয়া: ধন্যবাদ। আমার কিন্তু একটু একটু ভয় লাগছে।
প্রশ্ন: শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে, শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের নাতনি বলে?
হিয়া: বাবা (শাশ্বত) বা দাদুর (শুভেন্দু) হাঁটুর যোগ্যও নই আমি এখন। চাপ তো অনুভব করছিই। অনেক বড় দায়িত্ব। আমি পরিশ্রম করছি।
প্রশ্ন: কী রকম?
হিয়া: সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ২০২৩ সালে স্নাতক পাশ করেছি। তার পর টানা দু’বছর বেণীদির (দামিনী বেণী বসু) কাছ থেকে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রথম ছবিতেই দর্শকের কতটা আমায় ভাল লাগবে জানি না। কিন্তু চেষ্টা করব মন দিয়ে কাজটা করার।
বড় পর্দায় শাশ্বত-কন্যা হিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: কবে থেকে অভিনেত্রী হওয়ার ইচ্ছা মনে তৈরি হল?
হিয়া: ছ’মাস বয়স থেকে বাবার সঙ্গে আমি সিনেমার সেটে যাই। সেই ছোটবেলা থেকে অভিনয় মাধ্যমটার সঙ্গে আমার পরিচয়। যখন থেকে আমার জ্ঞান হয়েছে তখন থেকে আমি জানি অভিনয়ই করব।
প্রশ্ন: বাবা ‘সেলিব্রিটি’ বলে কি ছোটবেলাটা একটু অন্য রকম কেটেছে আপনার?
হিয়া: এটা ঠিক, শহরের নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে আমি পড়াশোনা করেছি। কিন্তু আমার বেড়ে ওঠাটা আর পাঁচটা সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েদের মতোই। মা নিজেও শিক্ষিকা। তাই আমায় এমন ভাবে বড় করেননি যেখানে মনে হয় বাবা তারকা বলে আমি বাকিদের থেকে আলাদা।
প্রশ্ন: শাশ্বতর মেয়ে বলে কোথাও কোনও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাননি?
হিয়া: আলাদা সুযোগ-সুবিধা! কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আসলে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত তো সোশ্যাল মিডিয়ার এত বাড়বাড়ন্ত ছিল না। তাই অনেকেই জানত না শাশ্বতর মেয়েকে কেমন দেখতে। তাই বিশেষ সুযোগ পাওয়ার কোনও প্রশ্নই ছিল না।
রাহুল মুখোপাধ্যায়ের নতুন ছবিতে দেখা যাবে। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: রিল্সে ভিউ না কি পর্দায় নিজেকে দেখতে পাওয়া— কোনটা বেশি আকর্ষণ করে?
হিয়া: চরিত্র। ছোট থেকে একটা বিষয় আমার দারুণ লাগত। বাবা এই আমার সঙ্গে মজা করছে, গল্প করছে। তার পর ক্যামেরা রোল হতেই অন্য মানুষ হয়ে গেল। সেটা দেখতে ভাল লাগত।
প্রশ্ন: চরিত্রের এই সুইচ অন-অফ ব্যাপারটা ছোট থেকে বুঝতে পারতেন?
হিয়া: জানি না কী কারণে ছোট থেকেই অদ্ভুত ভাবে বুঝতে পারতাম বিষয়টা। বন্ধুরা আমায় বলত টিভির মধ্যেই কি সবাই থাকে? আমি ওদের নানা ভাবে বোঝাতাম।
প্রশ্ন: কার ছবিতে কাজ করবেন, সিদ্ধান্ত কে নিল? বাবা?
হিয়া: আগেও একটা ছবির জন্য রাহুলদা আমায় বলেছিলেন। কিন্তু পড়াশোনার জন্য তখন কাজটা করে উঠতে পারিনি। কিন্তু এ বার আমি আর মা গিয়েছিলাম চিত্রনাট্য শুনতে। আদ্যোপান্ত প্রেমের গল্প। মায়েরও ভাল লাগল। বাড়ি ফিরে রাতে বাবাকেও বললাম। আমার তো প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল। তার পর মা-বাবার গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে আমি হ্যাঁ করে দিলাম। বলা যেতে পারে এটা মিলিত সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে পরিবার, বাংলা ছবির ইতিহাস, পরম্পরা এই শব্দগুলো থাকবে। ভেবেছেন, কী ভাবে সামলাবেন?
হিয়া: ‘নেপোটিজ়ম’-এর ইঙ্গিত বলছেন তো! আমি সত্যিই এগুলো নিয়ে ভাবতেই চাই না। নিজের অভিনয়টা নিয়ে ভাবতে চাই। জানি আমার কাছ থেকে দর্শকের আশা থাকবে। তাই নিজেকে তৈরি করার দিকেই মন দিচ্ছি। পরে কী হবে সেটা দেখা যাবে।
ছোটবেলা থেকেই নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: বাবা কোনও পরামর্শ দিলেন?
হিয়া: বাবা কোনও ধরনের পরামর্শ দেওয়ায় বিশ্বাসী নন। আমায় বলেন, মাঠে নেমে খেলা শিখতে হবে। বাবা হিসাবে অবশ্যই পাশে থাকবেন। তাই এই যাত্রাটা পুরোটাই আমার একার।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার বন্ধুবান্ধব?
হিয়া: ঋতুপর্ণা (সেনগুপ্ত) আন্টির ছেলে অঙ্কন আমার ভাল বন্ধু। মিশুক (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়-অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়ের ছেলে তৃষাণজিৎ চট্টোপাধ্যায়), সারার (যিশু সেনগুপ্ত-নীলাঞ্জনা শর্মার মেয়ে) সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব রয়েছে। সবার সঙ্গেই যোগাযোগ রয়েছে।
প্রশ্ন: সারা তো মডেলিং করছেন। আপনার মডেলিং করার কথা মনে হল না?
হিয়া: আমি মডেলিংয়ের কাজ করেছি বেশ কিছু। কিন্তু অভিনেত্রী হওয়াই লক্ষ্য ছিল।
প্রশ্ন: অবসর সময়ে মা-বাবার সঙ্গে কী ভাবে সময় কাটে?
হিয়া: সবাই খুব খেতে ভালবাসি আমরা। কোথায় খেতে যাব, সারা সপ্তাহ ধরে এটাই পরিকল্পনা চলতে থাকে।
প্রশ্ন: টলিউডের কোন নায়িকা আপনার প্রিয়?
হিয়া: কোয়েল মল্লিক, মিমি চক্রবর্তী, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়— প্রত্যেকে আমার অনুপ্রেরণা। কাকে ছেড়ে কার নাম বলি!
প্রশ্ন: পর্দায় কোন নায়কের সঙ্গে প্রেম করার ইচ্ছা ?
হিয়া: আসলে আমি তো অভিনেতাদের মাঝেই বড় হয়েছি। এ রকম কিছু মনে হয়নি।
প্রশ্ন: বাবার মতো কলকাতার বাইরে কাজ করার ইচ্ছা আছে?
হিয়া: আমি যে কোনও ভাষায়, যে কোনও অঞ্চলে কাজ করতে রাজি। ভাল চরিত্র পেলেই রাজি হয়ে যাব।
প্রশ্ন: প্রথম পারিশ্রমিক পেয়ে কী করবেন?
হিয়া: মা, বাবা, দিনদিনকে কিছু একটা কিনে দেব। আমার বোন ব্র্যান্ডির (পোষ্য) জন্যও কিছু না কিছু কেনার ইচ্ছা আছে।
প্রশ্ন: আর ‘বয়ফ্রেন্ড’কে?
হিয়া: প্রেম করার সময়ই নেই আমার। ছোট থেকে মাথায় ঢুকে গিয়েছে আমায় নিজের কেরিয়ার তৈরি করতে হবে। তাই প্রেমের জন্য আলাদা করে সময় বার করা এখন আমার সম্ভবই নয়।
প্রশ্ন: আগামী পাঁচ বছরে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
হিয়া: নিজের এমন একটা জার্নি চাই, যাতে পিছন ফিরে তাকালে মনে হয় এই তো, ভালই তো চলছে সব কিছু।