Uttam Kumar Birthday

উত্তম অন্যায় সহ্য করেননি, থাকলে প্রতিবাদীদের সমর্থন করতেন, মত রত্না-প্রভাত-দুলালের

উত্তমকুমার নিজে অনেক অব্যবস্থার প্রতিবাদ করেছেন। টেকনিশিয়ানদের সুযোগসুবিধা দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। ইন্ডাস্ট্রির মেয়েদের সম্মানরক্ষার উপরে জোর দিতেন। বেঁচে থাকলে এখনও প্রতিবাদ জানাতেন?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৮
Image Of Ratna Ghoshal, Probhat Roy, Uttam Kumar

(বাঁ দিক থেকে) রত্না ঘোষাল, প্রভাত রায়, উত্তমকুমার। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।

আরজি কর-কাণ্ডকে কেন্দ্র করে আরও এক বার কলকাতা প্রতিবাদী। উত্তাল শহর আন্দোলনের পাশাপাশি স্মরণ করছে উত্তমকুমারের জন্মদিনও। বেঁচে থাকলে মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ৯৮ বছরে পা রাখতেন। শহরের এই বিপ্লবী রূপ দেখে কী প্রতিক্রিয়া হত তাঁর? বয়সের কারণে হয়তো বিনোদন দুনিয়ার বাকি খ্যাতনামীদের মতো পথে নামতে পারতেন না, মানসিক ভাবে কি আন্দোলনকারীদের পাশে থাকতেন? গলা মিলিয়ে ন্যায় চাইতেন নির্যাতিতার জন্য? কৌতূহল এই প্রজন্মের।

Advertisement

সেই জিজ্ঞাসা নিয়েই আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করে পরিচালক প্রভাত রায়, অভিনেত্রী রত্না ঘোষালের সঙ্গে। প্রভাত শক্তি সামন্তের সহকারী হিসেবে ‘আনন্দ আশ্রম’, ‘অমানুষ’-এ ছিলেন। সেই সূত্রে বেশ কিছুটা সময় কাছ থেকে দেখেছেন তাঁকে। সেই জায়গা থেকে বর্ষীয়ান পরিচালকের বক্তব্য, “উত্তমদা কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেন না। টেকনিশিয়ানদের একসঙ্গে নিয়ে খেতে বসার রীতি তিনিই তৈরি করেছিলেন। কেউ কাজ পাচ্ছেন না বা কাউকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে— সকলের আগে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মহানায়ক।” প্রভাত আরও জানিয়েছেন, খ্যাতির কারণে তিনি চট করে পথে নামতে পারতেন না। সেই সময় পথে নামার প্রয়োজনও পড়ত না। কিন্তু মানসিক ভাবে সমর্থন জানাতেন তিনি।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের নির্যাতন-মৃত্যু নতুন করে দেশে নারী নির্যাতনের মতো জ্বলন্ত ইস্যু নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। সেই জায়গা থেকে বিনোদন দুনিয়ার প্রতিটি স্তরের সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের হেনস্থা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। দক্ষিণী বিনোদিনী দুনিয়ার হেমা কমিটি সেখানকার তাবড় পরিচালক-প্রযোজকদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। টলিউডে নারী-শিশু সুরক্ষার জন্য চালু হচ্ছে ‘সুরক্ষা বন্ধু’। খবর, সেখানেও অনেকেই হেনস্থার শিকার হয়েছেন। উত্তমকুমারের আমলেও কি বাংলা বিনোদন দুনিয়া এ রকমই ছিল? নায়কের সঙ্গে নায়িকা বা বাকি অভিনেত্রীদের সম্পর্ক কেমন ছিল?

আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন আর এক বর্ষীয়ান অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল। তিনি ‘মৌচাক’-সহ একাধিক ছবিতে উত্তমকুমারের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর কথায়, “বাড়ির বড় দাদা যেমন হন, আমাদের কাছে উত্তমদা ছিলেন ঠিক সে রকম। ভীষণ মাইডিয়ার। সব কথা বলতে পারতাম। মজাও করতেন আমাদের সঙ্গে। কিন্তু কখনও সীমা লঙ্ঘন করতেন না। বয়সে ছোটদেরও সম্মান করতেন।” পাশাপাশি এ-ও জানিয়েছেন, যে কোনও সমস্যায় সকলের আগে উত্তমকুমার উপস্থিত থাকতেন। সেই সময় বন্যা হত বেশি। তিনি বাংলা বিনোদন দুনিয়ার সকলকে নিয়ে একাধিক বার পথে নেমেছেন। ত্রাণ সংগ্রহ করেছেন। সেই জায়গা থেকেই রত্না মনে করেন, “৯৮ বছর বয়সে পথে নামা সম্ভব নয়। নেপথ্যে থেকে যতটা সহযোগিতা করা যায়, বেঁচে থাকলে সেটাই করতেন মহানায়ক।”

প্রশ্নের সূত্র ধরে এ দিন দুলাল লাহিড়ী ফিরে গিয়েছিলেন অতীতে। বললেন, “টেকনিশিয়ান থেকে নতুন শিল্পী— সকলের জন্য লড়াই করে গিয়েছেন মহানায়ক। নতুন শিল্পীদের জন্যই তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শিল্পী সংসদ, যাতে কেউ কোনও অন্যায়ের শিকার না হন।” একই সঙ্গে জানান, সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবিতে মুখ্য চরিত্র ‘অরিন্দম মুখোপাধ্যায়’ তাঁর বন্ধুকে জানিয়েছিলেন, ছায়াজগতের মানুষেরা প্রকাশ্যে বিপ্লব করতে পারেন না। এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন উত্তমকুমারও। তাই তাঁর প্রতিবাদ বা আন্দোলন অনেক সময়েই আড়ালে থেকে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement