Kolkata Doctor Rape-Murder Case

আমিও বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, রাতবিরেতে কাজ করি, আমার ভয়ই আজ স্লোগান হয়ে উঠছে গলায়

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী ‘নায়িকাসুলভ’ চেহারা তাঁর নয়, তাই যেন টলি পাড়ার অন্যমুখ শ্রুতি দাস। রবিবার সন্ধ্যায় পথে নেমেছিলেন বিচার চেয়ে। আরজি কর-কাণ্ড নিয়ে মুখ খুললেন আনন্দবাজার অনলাইনে।

Advertisement
শ্রুতি দাস
শ্রুতি দাস
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৪ ১৪:১০
Image of Shruti Das

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ। ছবি: সংগৃহীত।

বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, পড়াশোনা করে বড় হতে চেয়েছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে নিজের প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি হয়তো ছিল মানবকল্যাণের আকাঙ্ক্ষাও! কিন্তু সেখানেই বাদ সাধল তাঁর পরিচয়, তিনি মহিলা। তাই নিজের শিক্ষালয়, কর্মক্ষেত্রেই নির্যাতনের শিকার হলেন তিনি। আমিও আমার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। চোখে আমারও অনেক স্বপ্ন। তাই ভয় হয়, তাই প্রতিবাদ উঠে আসে আমার গলায় স্লোগান হয়ে।

Advertisement

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার জন্য সারা বাংলা নেমেছে পথে। সকলেই নিজের সাধ্যমতো প্রতিবাদী আন্দোলনে শামিল হচ্ছেন। এই সময় আমাদের সকলকেই ভাবতে হবে, যেন ঘটনাটা ঘটেছে আমার সঙ্গে, আমার পরিবারে। না হলে কবে যে এই ঘটনা আমার পরিবারে ঘটে যাবে, আমরা জানি না। এই যে আমি, শ্রুতি দাস, অভিনয় করে রোজগার করি, প্রতি রাতে বাড়ি ফিরি, শুটিংয়ের পর আবার যাই কোনও না কোনও অনুষ্ঠানের মঞ্চে, আমার কি সত্যিই নিরাপত্তা রয়েছে? নেই। ভয় হয় প্রতি মুহূর্তে।

সেই ভয় কাটিয়ে উঠতেই আমি পথে নেমেছি। রবিবার সহকর্মীদের সঙ্গে পথে নেমে মিছিলে হেঁটেছি, স্লোগান দিয়েছি, বিচার চেয়েছি। জীবনে প্রথম বার এই ভাবে কোনও প্রতিবাদী মিছিলে পথ হাঁটলাম। এর আগে ২০১২ সালে, আমি তখন বেশ ছোট, দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনায় নির্যাতিতার মৃত্যুর পর মোমবাতি মিছিলে পথে হেঁটেছিলাম। তখন হয়তো সবটা বুঝিনি। তবু একটা চাপা কষ্ট ছিল। এ বার আর সেই কষ্টটা চেপে রেখে মোমবাতির আলো নিয়ে হাঁটার কথা ভাবিনি। কারণ কোথায় যেন মনে হচ্ছে, এ বার বিপদ একেবারে আমার ঘরে। তাই বিচার চেয়ে গলা ফাটানোর প্রয়োজন রয়েছে।

অনেকেই বলেছেন, আমি খুব সাফল ভাবে মিছিলের প্রথমে হেঁটেছি। কিন্তু এই প্রশংসায় আমি যে খুব খুশি হয়েছি, এমন নয়। আমার ভিতরের আগুন বেরিয়ে এসেছে, সেটা ঠিক। কিন্তু যে কারণে এই মিছিল করতে হল, সেটা মর্মান্তিক। আর মিছিলের উদ্দেশ্যই হল, যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করা।

এ সব প্রতিবাদে রাজনীতি বা অরাজনীতি বলে কোনও আদৌ বিষয় থাকার কথা নয়। আমি নিজে কোনও দলের সক্রিয় সদস্য নই। নিজের আদর্শে জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কখনও কোনও দলের সঙ্গে মতের মিল হতে পারে, কখনও কোনও দলের সঙ্গে নয়। আবার আমি এটাও মনে করি, সব দলেরই সবটা ভাল বা খারাপ না-ও হতে পারে। তাই ভালটুকু নিতে আমি মনের দরজা খুলে রাখি।

মিছিলে প্রতিবাদী স্লোগান উঠছে ন্যায়ের জন্য। বিচারের জন্য। কোনও ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে নয়। বরং দোষীদের শাস্তি হোক, যাঁরা দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন, তাঁদেরও একটা বিচার প্রয়োজন। যাতে ভবিষ্যতে এমন আর না ঘটে। কিন্তু, তার জন্য আমি ভয় পাই না। আমি মনে করি না, একজন নবীন অভিনয় শিল্পী হিসাবে এই প্রতিবাদ মিছিলে হেঁটেছি বলে আমার পেশাগত জীবনে কোনও প্রভাব পড়তে পারে। আর তা যদি হয়, তা হলে তো কিছু বলারই নেই! তবু বিচার হোক, ন্যায্য বিচারের দাবিতে আমি রাস্তায় থাকতে প্রস্তুত।

Advertisement
আরও পড়ুন