সাউন্ড রেকর্ডিস্ট অনুপ মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রয়াত হলেন টলিপাড়ার বিশিষ্ট সাউন্ড রেকর্ডিস্ট অনুপ মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার সকালে ইছাপুরে নিজ বাসভবনে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত থেকে শুরু করে তপন সিংহ, গৌতম ঘোষ, তরুণ মজুমদার, অপর্ণা সেন, সন্দীপ রায় সহ একাধিক পরিচালকের ছবিতে কাজ করেছেন অনুপ। বাংলা ছবিতে শব্দগ্রহণ অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রথম যাঁদের হাতে রূপান্তর পায়, তাঁদের মধ্যে অনুপ ছিলেন অন্যতম।
পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের ছাত্র অনুপের সহপাঠী ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী, নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজ়মির মতো ব্যক্তিত্ব। কলকাতা দূরদর্শনেও কাজ করেছেন। পরবর্তী কালে কলকাতায় ‘এনএফডিসি’ এবং দূরদর্শনে দীর্ঘ দিন কর্মরত ছিলেন এই প্রতিভাবান শব্দশিল্পী। এক সময় এসআরএফটিআই-এর ডিনের পদেও ছিলেন অনুপ। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহের সাউন্ড ডিজ়াইনও তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। কাহিনিচিত্র এবং তথ্যচিত্রে শব্দগ্রহণের জন্য চার বার জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফেও পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি।
অনুপ মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বাংলা ছবির জগতে একটি যুগের অবসান হয়েছে বলেই মনে করছেন সন্দীপ রায়। পরিচালকের প্রথম ছবি ‘ফটিকচাঁদ’-এর সাউন্ড রেকর্ডিং করেছিলেন অনুপ। সেই সম্পর্ক এসে শেষ হল সন্দীপের সাম্প্রতিক ছবি ‘নয়ন রহস্য’তে। সত্যজিৎ-পুত্র বললেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমাদের পরিবারের চার দশকের সম্পর্ক। ‘ঘরে বাইরে’ ছবির মাধ্যমে বাবার সঙ্গে ওঁর কাজ শুরু হয়।’’ সন্দীপ জানালেন সম্প্রতি ‘নয়ন রহস্য’-এর ডাবিং শেষ করেছিলেন অনুপ। সন্দীপ বললেন, ‘‘অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল, শব্দ নিয়ে ওঁর মতো পাণ্ডিত্য খুব কম মানুষের ছিল। ফাইনাল আউটপুট ঠিক হবে কি না, সেটাও বিচক্ষণতার সঙ্গে বুঝতে পারতেন। কয়েক দিন আগেও দেখা হল। কিন্তু সেটাই যে শেষ দেখা হবে, বুঝতে পারিনি।’’
পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তীর ‘ছায়াময়’ ও ‘ধারাস্নান’ ছবিতে সাউন্ড রেকর্ডিস্টের ভূমিকা পালন করেছিলেন অনুপ। হরনাথ বললেন, ‘‘গৌতমদার (পরিচালক গৌতম ঘোষ) থেকে খবরটা পেয়েই মনখারাপ হয়ে গেল। ওঁর মতো গুণী মানুষ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব কমই রয়েছেন। সে দিনও চলচ্চিত্র উৎসবে অনুপদার সঙ্গে দেখা হল। ভাবতে পারছি না, অনুপদা নেই।’’