(বাঁ দিকে) অজয় দেবগনের সঙ্গে রুদ্রনীল ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।
জন্মদিনে অজয় দেবগন প্রসঙ্গে লিখতে গেলে দ্রুত শেষ করা কঠিন। কারণ আমি তাঁর যে সান্নিধ্য পেয়েছি, সেখানে প্রচুর স্মৃতি। প্রচুর অভিজ্ঞতা।
২০১৯ সালে অজয় দেবগনের সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ। অবশ্যই যোগসূত্র ‘ময়দান’ ছবিটি। মুম্বইয়ের যশরাজ স্টুডিয়োয় সেট তৈরি হয়েছে। প্রথম দিনেই ওঁর সঙ্গে বেশ কঠিন কয়েকটি দৃশ্যের শুটিং হবে। এটুকু বলতে পারি, বলিউডের একজন সুপারস্টার হয়েও কখনও আমাকে বুঝতে দেননি যে আমি বাংলা থেকে গিয়ে ওখানে কাজ করছি।
ব্যক্তিগত জীবনে দেখেছি, মানুষটি মিতভাষী। কিন্তু কাউকে পছন্দ হলে তাঁর সঙ্গে মন খুলে গল্প করেন। আমার ক্ষেত্রেও কিছুটা এ রকমই ঘটেছিল। প্রথম দিকে সংলাপের বাইরে আমার সঙ্গে কথা বলতেন না। কিন্তু পরে আমার অভিনয় পছন্দ হওয়ায় একাধিক বার আলাদা করে আড্ডা দিয়েছেন। কলকাতা এবং বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ নিয়ে তাঁর কৌতূহল দেখেছি। বিশেষ করে বুম্বাদাকে (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন। তাই পরবর্তী সময়ে কলকাতায় ‘ময়দান’-এর শুটিংয়ের ফাঁকেই অজয়জি ওঁর নতুন ছবি ‘তানাজি: দ্য আনসাং ওয়ারিয়র’ ছবির বিশেষ প্রদর্শনে আমাদের পাশাপাশি বুম্বাদাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
শুটিংয়ের সময় এবং পরবর্তী সময়ে আমার সঙ্গে দেখা হলেও সব সময় আমাকে ‘শুভঙ্করজি’ (ছবিতে রুদ্রনীলের চরিত্রের নাম) বলেই সম্বোধন করতেন। একবার বলেছিলেন, ‘‘আমি আপনাকে দেখে চিনতে পারি না। কারণ আপনার অভিনয় গুণে এখনও আমার মনে আপনার ওই শুভঙ্কর চরিত্রটাই বসে রয়েছে।’’ শুনে খুবই লজ্জা পেয়েছিলাম। আবার ভালও লেগেছিল।
‘ময়দান’ ছবির প্রচারে রুদ্রনীল ঘোষের (বাঁ দিকে) সঙ্গে অজয় দেবগন। ছবি: সংগৃহীত।
এখনও অজয়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। মুম্বই গেলেই আমাকে দেখা করতে বলেছেন। এমনকি পরবর্তী সময়ে ওঁর একটা ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও দেন। কিন্তু কোনও কারণে সময় বার করতে পারিনি। কী সহজ ভাবে বলেছিলেন, ‘‘কোনও ব্যাপারই নয়। ভবিষ্যতে আবার একসঙ্গে কাজ করব।’’ একই সঙ্গে ভালও লেগেছিল। আসলে বড় তারকাদের থেকে অনেক কিছু শেখা যায়। যেমন আমি শিখেছি মিঠুন চক্রবর্তীর থেকেও। অজয়ও তাই। খ্যাতির শীর্ষে থেকেও মাটিতে কী ভাবে পা রেখে চলতে হয়, কী ভাবে এখনও নিজেকে অভিনয় শিল্পের একজন ছাত্র হিসেবেই প্রকাশ করতে হয়, সেটা কিন্তু একটা দায়িত্ব। সেটা না হলে হয়তো বড় হওয়ার রাস্তাটা ঈশ্বর খুলে দেন না। অজয় সেটা কিন্তু দিনের পর দিন করে চলেছেন।
আজকের পরিণত অজয় দেবগন কিন্তু এখন আর ‘ফুল অউর কাঁটে’র সেই মানুষটি নেই। আমার কাছে তিনি সাধারণ মানুষের সুপারস্টার। এমন একজন অভিনেতা যিনি এখনও দর্শককে চমকে দেন। আজ ওঁর জন্মদিন। বাংলা বা বলিউড, কোনও পুরুষ তারকার বয়স নিয়ে আমি মাথা ঘামাতে চাই না। বুম্বাদার বয়স নয়, তিনি কতগুলো ছবিতে অভিনয় করছেন, সেটাই যেন আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে। জন্মদিনে এটাই চাই অজয় দেবগন যেন সুস্থ থাকেন। ওঁর থেকে আরও ভাল কাজের অপেক্ষায় থাকব।
(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)