আনন্দী, শিব, দাদিসা— একে একে নক্ষত্রপতন
একই ধারাবাহিকের তিন চরিত্রের মৃত্যু। প্রত্যুষা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুরেখা সিক্রির পর এ বার সিদ্ধার্থ শুক্লর। সুরেখার মৃত্যু নিয়ে ততটা আলোড়ন না পড়লেও বাকি দুই শিল্পীর মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না দেশ। সুরেখার সময়ে এত কথাবার্তা না হওয়ার মূল কারণ বয়স। সুরেখা এই বছর প্রয়াত হয়েছেন ৭৬ বছর বয়সে। সে জায়গায় ২৪ বছর বয়সে প্রত্যুষার জীবনযাত্রা শেষ। সিদ্ধার্থর পথ চলা থমকে গেল ৪০ বছর বয়সে।
২০১৬ সালে মৃত্যু হয় ‘বালিকা বধূ’-র মুখ্য চরিত্র প্রত্যুষার। মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাঁকে। পুলিশ তাঁর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দেওয়ার পরে আজও বিচারের জন্য লড়াই চালাচ্ছেন ‘আনন্দী’ (‘বালিকা বধূ’-তে তাঁর চরিত্র)-র পরিবার। সে সময়ে অভিনেত্রী কাম্যা পাঞ্জাবি ও প্রযোজক বিকাশ গুপ্ত জানিয়েছিলেন, প্রত্যুষার তৎকালীন প্রেমিক অভিনেতা রাহুলরাজ সিংহ তাঁকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে নির্যাতন করতেন। এমনকি তিনি প্রত্যুষাকে জনসমক্ষে মারধর করতেন বলেও জানা যায়। তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। সেই মামলা আজও চলছে।
চলতি বছরের ১৬ জুলাই মৃত্যু হয় সুরেখা সিক্রির। ‘বালিকা বধূ’ ধারাবাহিকের ‘দাদিসা’ ২০১৮ সাল থেকেই অসুস্থ ছিলেন। ২০১৮ সালে স্ট্রোক হওয়ার পর পক্ষাঘাত হয়ে যায় সুরেখার। ২০২০ সালে ফের ব্রেন স্ট্রোক হয়। তার পর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রীকে। ব্রেন স্ট্রোক হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় জানা যায়, অর্থকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। সে সময়ে বলি-তারকা সোনু সুদ, সুরেখার ‘বধাই হো’ ছবির সহ-অভিনেতা গজরাজ রাও এবং পরিচালক অমিত শর্মা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন। যদিও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে এক বারও নিজের অর্থকষ্টের কথা প্রকাশ্যে আনেননি বর্ষীয়ান অভিনেত্রী। বরং কাজে ফেরার জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন।
তার পর ২ সেপ্টেম্বর। মৃত্যু হল সিদ্ধার্থর। একই ধারাবাহিকে ‘আনন্দী’-র দ্বিতীয় স্বামীর (শিবরাজ শেখর) চরিত্রে অভিনয় করতেন তিনি। প্রত্যুষা এবং সিদ্ধার্থ দু’জনেই এই ধারাবাহিক থেকেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। চিকিৎসকদের প্রাথমিক অনুমান, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ময়নাতদন্ত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু রিপোর্ট এখনও মেলেনি। রাতে ঘুমনোর আগে একটি ওষুধ খেয়েছিলেন। সকালে আর ঘুম ভাঙেনি তাঁর। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তাঁকে কুপার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করা হয়। শোকস্তব্ধ মুম্বই থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যে তাঁর অনুরাগীরা। আপাত ভাবে সুস্থ সবল এক জন মানুষ হঠাৎ আর নেই— এ কথা মেনে নিতে পারছেন না কেউই।