‘‘এই যে জীবনটা নিয়ে বাঁচছি, এটা আমার স্বপ্ন ছিল না, কিন্তু এটাই এখন বাস্তব।’’
প্রঃ দর্শক সংখ্যার বিচারে ‘সনক’ এখন এক নম্বরে। দেবের সঙ্গে ছ’মাসের ঝগড়া তা হলে কাজে দিল?
রুক্মিণী: সত্যি। ‘সনক’এর সাফল্যের পর দেবের কথা, অনেক পুরনো কথা মনে পড়ছে।
প্রঃ পুরনো কথা বলতে?
রুক্মিণী: বাবাকে আমার প্রথম ছবি মুক্তির এগারো দিন আগে হারাই। এক দিকে ‘চ্যাম্প’ মুক্তি পাচ্ছে। অন্য দিকে বাবার শ্রাদ্ধের কাজ করছি। সে দিন ছবির প্রদর্শনের প্রেক্ষাগৃহে দেরিতে গিয়েছিলাম। কোথাও না কোথাও কাজের জন্য আমরা সবাই লড়াই করছি। আমি যেমন মনের লড়াই…
প্রঃ কলকাতার মেয়ে মুম্বইতে কাজ করে ফেলল। সুযোগ কী ভাবে পেল?
রুক্মিণী: আমি কিন্তু নিজে থেকে কোথাও ছবি পাঠানো বা কাউকে কাজের জন্য বলা— কোনওটাই করিনি। প্রযোজনা সংস্থা থেকেই যোগাযোগ করা হয়। আমি তখনও বিষয়টাকে গুরুত্ব দিইনি। তখন লকডাউন চলছে। এক মাস পরে ওখান থেকে আবার ফোন আসে।
প্রঃ মুম্বই থেকে ডাক এল, তার পরেও আপনি ভাবছিলেন?
রুক্মিণী: এই জায়গায় আমাকে একটু আলাদা করে বুঝতে হবে। মুম্বইয়ের মতো অচেনা শহরে অভিনেতারা যেমন আবেগ নিয়ে কাজ করতে যায়, আমার তা ছিল না। ওখানে পরিবার থেকে আলাদা থাকতে হবে। করোনার মতো সময়ে যেতে হবে। তার মধ্যেই নিজের কোভিড। অচেনা শহরে হাসপাতালে যাওয়া। মা আমার সঙ্গে… সব মিলিয়ে ওই সময়ে কাজ করাটাই খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া, মুম্বইতে কাজ করছি, সে অভিজ্ঞতা কেমন হবে? সেই ভাবনাও থাকত।
প্রঃ ‘সুইৎজারল্যান্ড’ থেকে ‘সনক’-এ। ভেবেছিলেন এ ভাবে একের পর এক...
রুক্মিণী: একেবারেই ভাবিনি। বিশ্বাস করুন, আমার জীবনে কিছুই পরিকল্পনা করে হয় না। এই যে জীবনটা নিয়ে বাঁচছি, এটা আমার স্বপ্ন ছিল না। কিন্তু এটাই এখন আমার জীবনে বাস্তব। অনেকে এই জীবন পাওয়ার জন্যই স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু যে ভাবে কাজ আসে, ঘটনা ঘটে— তা থেকে মনে হয় উপর থেকে কেউ সব সাজিয়ে রেখেছেন। হয়ত বাবা সাহায্য করছে…
প্রঃ মুম্বইয়ে সেটে চন্দন আর বিদ্যুৎ জামালের সঙ্গে খুব মজা করেছেন?
রুক্মিণী: চন্দনকে অনেক ছোট থেকে চিনি। শ্যুটে আমরা সারাদিন ধরে খাওয়ার গল্পে মজে। পরিচালক কনিষ্ক বর্মা আমার মন ভাল রাখার জন্য শ্যুটে বাংলা খাবার আনাতেন। ওরা আমার ভাল থাকার জন্য সব কিছু করেছে। শ্যুটে আলু পোস্ত এলে সবাই পাগল হয়ে যেত!
প্রঃ আর বিদ্যুৎ?
রুক্মিণী: ও রকম বড় মাপের অভিনেতা, কিন্তু কী সহজ! অসাধারণ মানুষ। আমার মন খারাপ হলে ঠিক বুঝতে পারত। বলত ‘তুমি বাড়ির লোকজনকে মিস করছ। কিন্তু এটা শুধু তোমার সময়। এই সময়টাকে উপভোগ কর।‘
প্রঃ এই সময়কে উপভোগ করতে করতেই এক বছর থেকে গেলেন!
রুক্মিণী: হ্যাঁ। মনে হয় এখানেও এখন পরিবার আছে আমার। আমার করোনার সময়ে গাড়ি করে ওরা পাশে পাশে যাচ্ছিল। যাতে আমি ভয় না পাই। বিপুল শাহ, আমার পরিচালক কনিষ্ক বর্মা, সবাই পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিল।
প্রঃ তাই বলে অভিজাত হোটেলেই এক বছর কাটিয়ে দিলেন?
রুক্মিণী: আরে এর পরেও তো ‘সনক’ এর সকলে বলছিলেন, তুমি খুব শিগগিরি ফিরে এস।
প্রঃ কবে ফিরছেন?
রুক্মিণী: আমার কোনও তাড়া নেই। চিত্রনাট্য শুনছি অনেক রকম। তবে এটা বিশ্বাস করি— যদি কোনও মারদাঙ্গার ছবি করি, তবে তা বিদ্যুৎ জামাল আর বিপুল শাহ-র সঙ্গেই করব। ওই জোট দুর্লভ।
প্রঃ বাংলায় কাজ করবেন তো?
রুক্মিণী: অবশ্যই। এত কষ্ট করে জায়গা তৈরি করলাম! আমি দক্ষিণী ছবিতেও কাজ করতে চাই।
প্রঃ দেব ‘সনক’ দেখে কী বলল?
রুক্মিণী: ‘সনক’ করার সময় মা আর দাদা ছাড়া দেবের মতামতকেই আমি সবচেয়ে বিশ্বাস করেছি। ও আমায় চোখ বুজে ‘সনক’-এ কাজ করতে বলেছিল। যে বিশ্বাস আমার নিজের মধ্যে ছিল না, সেটা দেবের আমাকে নিয়ে ছিল। ও আমার গুরু।
প্রঃ দেব যদি না থাকত?
রুক্মিণী: তা হলে রুক্মিণী মৈত্র অভিনেত্রী হত না। পনের বছর বয়সে দেবের সঙ্গে প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই দেব বলেছিল অভিনয় কর। আমি বলেছিলাম, করব না। তার পর ‘চ্যাম্প’-এ অভিনয় করার জন্য রাজি করাতে ছ’মাস ধরে ঝগড়া করেছিল। আমাকে অভিনয় করতে বাধ্য করে ও। এসভিএফ-এর মণিদা সে দিন বলছিলেন— “রুক্মিণী, আমরা তোমাকে প্রথম ডেকেছিলাম।”
প্রঃ সে সময়ে অনেক ছবিতে কাজ করার সুযোগও ছিল তো…
রুক্মিণী: ছবি পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়নি। ‘যোদ্ধা’, ‘প্রেম আমার’-এ কাজের সুযোগ ছিল। কিন্তু কী করব? সেটাই জানতাম না। দেব জানিয়েছে।
প্রঃ ‘সনক’ দেখার পর তো টুইটে, ইনস্টাগ্রামে রুক্মিণীর প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত দেব!
রুক্মিণী: হ্যাঁ। আমার কাজ ওর খুব ভাল লেগেছে। বিশেষত, বাংলা থেকে কোনও মেয়ে কাজ করল, এটা ওকে বেশি আনন্দ দিয়েছে। ও কী বলছে জানেন?
প্রঃ বলুন না…
রুক্মিণী: ও বলছে— আমি যে ঘোড়ায় টাকা লাগিয়েছি, সে যে দৌড়ে জিতছে, সেটাই আমার ভাল লেগেছে।
প্রঃ আপনি নাকি ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুক পছন্দ করেন না?
রুক্মিণী: না সেরকম নয়। তবে খুব বেশি পছন্দ করি না। বিশেষত যখন অভিনয়ে এলাম, তখন থেকে মনে হল— রোজ যা যা করছি, সকলকে ছবি দিয়ে জানাতে হবে কেন? রেখার কথাই ভাবুন না! আমি তো আজ পর্যন্ত জানি না, রেখাকে মেক আপ ছাড়া কেমন দেখতে! এই যে রহস্য, এটাই তো আসল।
প্রঃ ইনস্টাগ্রামে নিয়মিত ছবি দিয়ে অভিনেতারা পয়সা রোজগার করছেন। সেখানে আপনি…
রুক্মিণী: আমি দশ বছর ধরে মডেলিং করেছি। তার পরে অভিনয়ে এসেছি। আমি অভিনেতা হতে চাই, প্রভাবী নয়। সে ক্ষেত্রে সারাক্ষণ একটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয় বোধ হয়। আজ শ্যুটের ছবি দিলাম। কাল কী দেব। ও সব আমার দ্বারা হবে না। আমি তো রিলও করতে পারি না। থাক না…
প্রঃ কিন্তু বিয়েটা আর কত দিন দূরে থাকবে?
রুক্মিণী: যে দিন কেউ ভাববে না আমার বিয়ে কবে হবে? সে দিন আমি বিয়ে করব।