সুচিত্রা সেনের সাজে দর্শনা বণিক। ছবি: সংগৃহীত।
দর্শনা বণিক ‘সুচিত্রা সেন’! কথাটা শুনে টলিউড যতটা অবাক, অভিনেত্রী নিজেও ততটাই হতচকিত। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি প্রথমে। তার পরেই উত্তেজনায়, আনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠেছিলেন। পারলে ফোনের অন্য প্রান্ত থেকেই পরিচালক কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে জড়িয়ে ধরেন আর কি! পরিচালকের চর্চিত আগামী ছবি ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’-তে দর্শনা বাংলা ছবির কালজয়ী নায়িকার ভূমিকায়। ছবিটি কৌতুক অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে তৈরি। আনন্দবাজার অনলাইনকে দর্শনা জানিয়েছেন, সেখানেই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির অতি পরিচিত দৃশ্য এবং সংলাপ “মাসিমা, মালপো খামু”র দৃশ্যের পুনর্নিমাণ করা হয়েছে। দুটো দৃশ্যে তিনি ‘সুচিত্রা সেন’।
দর্শনার কথায়, “আমি তখন দার্জিলিংয়ে। ফেব্রুয়ারির ঠান্ডা গায়ে জড়িয়ে টয়ট্রেনে। তখনই কৃষ্ণেন্দুদার ফোন এসেছিল। সবটা শোনার পরে না বলার প্রশ্নই ওঠেনি। এ রকম একটা চরিত্রে অভিনয় করতে পারব জেনে মন ভাল হয়ে গিয়েছিল।” কলকাতায় ফিরে নিশ্চয়ই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ দেখতে বসে গিয়েছিলেন? প্রশ্ন ছিল তাঁর কাছে। তিনি জানিয়েছেন, আগেই অনেক বার দেখেছেন। চরিত্রটি পাওয়ার পর অবশ্যই আবারও দেখেছেন। তাঁর মতে, “সাধারণত পরিচালকেরা বিখ্যাত কোনও দৃশ্য নতুন করে আবার ক্যামেরায় ধরার আগে পুরনো ছবি না দেখার অনুরোধ জানান। কৃষ্ণেন্দুদা কিন্তু উল্টোটাই করেছিলেন। তিনি বেশি করে ওই দুটো দৃশ্য দেখতে বলেছিলেন। কারণ, আমরা হুবহু ওই দৃশ্য পর্দায় দেখাতে চলেছি।”
দর্শনা জানিয়েছেন, “মাসিমা, মালপো খামু” দৃশ্য দিয়েই ছবির প্রথম শুটিং শুরু। মুখ্য চরিত্রাভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় নাকি চাপা দুশ্চিন্তায় কেঁপেছেন। একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন অভিনেত্রীও। তাঁর মনে হয়েছিল, “কোথায় সুচিত্রা সেন কোথায় আমি! চেহারাতেও কোনও মিল নেই। কী করে কী হবে, বুঝতে পাচ্ছিলাম না।” দ্বিধা নিয়েই রূপটানশিল্পী সোমনাথ কুন্ডুর হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। শিল্পীর হাতের ছোঁয়া, একরঙা শিফন, মাথায় লেসের ফিতের বো— সব কিছু তাঁকে যেন সেই যুগে পৌঁছে দিয়েছিল। দৃশ্য অনুযায়ী শাশ্বত দর্শনাদের ঘরে এসেছেন। অভিনেত্রী তাঁকে যত্ন করে বসাতেই তাঁর পর্দার মায়ের কাছে অভিনেতার মালপো খাওয়ার আবদার। সে সব না হয় হল। পর্দায় দর্শনার উত্তমকুমার কে হলেন? প্রশ্ন রাখতেই অভিনেত্রীর গলায় আফসোস, “সে আর হল কই! ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির ওই দৃশ্যে তো উত্তমকুমার ছিলেন না। রূপটান শেষে নিজেকে দেখার পর তাই মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল। নকল ‘সুচিত্রা’ যদি ‘আসল’ উত্তমকে এক বার পেতেন!”