মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে) এবং নরেন্দ্র মোদী। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে এনআইএ-র তদন্তকারীদের উপরে হামলার ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। তৃণমূল বনাম বিজেপির সেই লড়াই উস্কে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার পুরুলিয়ার দলীয় সমাবেশ থেকে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে আক্রমণ করেন। সরাসরি মমতার নাম না নিলেও ভূপতিনগরের সঙ্গে সন্দেশখালি মিলিয়ে আক্রমণ করলেন মোদী। একই সঙ্গে তোপ দাগলেন এনআইএ এবং ইডির উপরে হামলার অভিযোগ নিয়ে।
রবিবার দুপুরে পুরুলিয়া জেলার হুড়ার জনসভা থেকে এনআইএ-সহ কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে কটাক্ষ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ির সভা থেকে সেই কটাক্ষেরই জবাব দিলেন মোদী। দাবি করলেন, তোলাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের রক্ষা করতে তৃণমূল কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির উপর হামলা চালাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ভূপতিনগরে একটি বিস্ফোরণ মামলার তদন্ত করছে এনআইএ। তারই তদন্তে শনিবার ওই এলাকায় যায় এনআইএ-র কর্তারা। স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গাড়িতে তোলার পরেই এনআইএ-র গাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। শনিবারই ভূপতিনগর থানায় হামলার লিখিত অভিযোগ দায়ের করে এনআইএ। তবে সেই ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। তার মধ্যেই শনিবার রাতে ভূপতিনগর থানায় এনআইএ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছে ধৃত এক তৃণমূল নেতার পরিবার। এফআইআর দায়ের করে সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতর চলছে।
শনিবারই তোপ দেগেছিলেন মমতা। রবিবারও ভূপতিনগরের ঘটনা নিয়ে সরব হন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘মানুষ প্রতিবাদ করলে এনআইএকে ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। মধ্যরাতে মহিলা ঘরে ঘুমাচ্ছেন। গদ্দারের এলাকায় মধ্যরাতে পুলিশকে না জানিয়ে চলে গেল। আগে পুলিশের উর্দি পরে সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে অনেকেই বদমায়েশি করেছে। মেয়েরা কী করে বুঝবেন? মা-বোনেরা প্রতিবাদ করলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ডায়েরি করা হল। বলছে তৃণমূলের সব বুথ এজেন্টদের গ্রেফতার করো।’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “এনআইএ, সিবিআই, বিজেপির ভাই। ইডি আর ইনকাম ট্যাক্স। বিজেপির টাকা তোলার বক্স। আমাদের আছে লক্ষ্মীর ভান্ডার। ওদের আছে ইডির ভান্ডার। আমাদের আছে কৃষির ভান্ডার। ওদের রয়েছে সিবিআই ভান্ডার। বলছে বিজেপি করো। কেন বিজেপি করবে? অত্যাচারী সরকার।’’
ধূপগুড়ির মঞ্চকে মমতার আক্রমণের জবাব দেওয়ার জন্য বেছে নেন মোদী। বলেন, ‘‘তৃণমূল চায় ওদের গুন্ডাদের সন্ত্রাস করার লাইসেন্স মিলুক। তদন্তকারীরা তদন্ত করতে গেলে ওদের উপর হামলা করে। অন্যদের দিয়ে হামলা করায়। আইন এবং সংবিধানকে নষ্ট করার দল।’’ তার পরেই সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, ‘‘সন্দেশখালিতে আপনারা দেখেছেন, কী হয়েছে। এখানে প্রত্যেক ঘটনায় আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।’’ উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মোদী বলেন, “সন্দেশখালির অপরাধীদের কঠোর সাজা কি আপনারা চান? তাঁদের সারা জীবনের জন্য জেলে দেখতে চান?” হাত তুলে সম্মতিসূচক জবাব দেয় উপস্থিত জনতা। রাজ্যের রেশন ‘দুর্নীতি’ এবং শিক্ষক নিয়োগ ‘দুর্নীতি’র প্রসঙ্গ তুলেও তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করেন মোদী। একই সঙ্গে বাংলায় তদন্তে গতি আনার ‘গ্যারান্টি’ও দেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজের গ্যারান্টির কথা বলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্ত টাকা দুর্নীতির টাকা জমিয়েছিলেন, ইডির বাজেয়াপ্ত করা সেই ৩০০০ কোটি টাকা, আমি গরিবদের ফিরিয়ে দেব।” রবিবার পুরুলিয়ার জনসভা থেকে মমতা আবার ‘মোদীর গ্যারান্টি’কে কটাক্ষ করে বলেন, “মোদীবাবুর গ্যারান্টি শুধু নিজের ছবি দেখা। পাঁচ কেজির খাবারের বস্তাতেও মোদীবাবুর ছবি। কোনও দেশে এ রকম হয় না। আমি যে চাল, গম দিই, তাতে কি এ রকম ছবি দিই?’’ তবে মমতার বক্তৃতায় বেশি তোপ ছিল ভূপতিনগরের ঘটনা নিয়েই। আবার মোদীর বক্তৃতাতেও গুরুত্ব পেয়েছে ভূপতিনগর। সেই সূত্রেই তিনি দলীয় নেতা, কর্মীদের উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘‘এই ভোটে তৃণমূলকে সবক শেখানো খুব জরুরি। এক একটি বুথে তৃণমূলের জামানত জব্দ করতে হবে।’’