Tamluk

অভিজিৎকে নিশানা করে তাঁরই যুদ্ধক্ষেত্র তমলুকে অনশনে চাকরিহারারা, আঙুল শুভেন্দুর দিকেও

কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে চাকরি যাওয়ার জন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দায়ী করে আন্দোলনে নামলেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৪ ১৯:৩৯
অনশনে চাকরিহারাদের একাংশ।

অনশনে চাকরিহারাদের একাংশ। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে চাকরি যাওয়ার জন্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দায়ী করে আন্দোলনে নামলেন চাকরিহারা শিক্ষকদের একাংশ। শুভেন্দুর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক জেলা সদরে অনশন শুরু করেছেন তাঁরা। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি, তাঁরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। ঘটনাচক্রে, এসএসসি নিয়োগ মামলার শুনানি দীর্ঘ দিন যাঁর এজলাসে হয়েছে, লোকসভা ভোটে সেই অভিজিৎকেই তমলুক কেন্দ্রের প্রার্থী করেছে বিজেপি। এই কারণেই তমলুককে আন্দোলনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।

Advertisement

গত রবিবার থেকে তৃণমূলের শিক্ষক সেলের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করেন চাকরিহারা শিক্ষকেরা। তমলুকের হাসপাতাল মোড় সংলগ্ন এলাকায় মঞ্চ বেঁধে অবস্থান শুরু হয়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে আন্দোলনকারীদের। তাঁদের দাবি, ২০১৬ সালের যোগ্য চাকরিপ্রাপকদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। অবিলম্বে এই যোগ্যদের কাজে ফেরাতে হবে। না হলে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাবে। আন্দোলনে শামিল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতিও।

আন্দোলনকারীদের দাবি, অভিজিৎ-শুভেন্দুর আঁতাঁতের ফলেই ২৬ হাজার মানুষ চাকরিহারা হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি মইদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আগে থেকেই শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের যোগসাজশ ছিল। তা এখন প্রমাণিত হয়েছে। এই কারণেই বিচারপতির কাজে আগাম ইস্তফা দিয়ে অভিজিৎ বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। চাকরিহারাদের দাবি আদায়ে তাই শুভেন্দু অধিকারীর জেলা এব‌ং অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কেন্দ্রকেই আমরা বেছে নিয়েছি। প্রয়োজন হলে আমরা এই দুই নেতার বাড়িতেও অভিযান চালাব।’’

মইদুলের মতে, ‘‘আমাদের আন্দোলনের পাশে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি, আমরা সুবিচার পাব। তবে যাঁরা এতগুলো মানুষের চাকরি খেয়েছেন, তাঁদের আমরা কোনও ভাবেই রেয়াত করব না। তমলুকে আগামী সোমবার পর্যন্ত ধর্না ও অনশন কর্মসূচি চলবে। এর পর পরবর্তী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

আন্দোলন মঞ্চে উপস্থিত থাকা ব্রজেন্দ্রলাল গিরি জানান, তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের বাসিন্দা গুড়গুড়ি পাল হাই স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। আদালতের রায়ে তাঁর চাকরি গিয়েছে। ব্রজেন্দ্র বলেন, ‘‘আমরা নিয়ম মেনেই প্রতি ধাপে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছি। যোগ্য তালিকায় নাম থাকায় শিক্ষকতা পেয়েছি। অথচ অযোগ্যদের সঙ্গে আমাদের গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। এর সুবিচার চাইতেই আমরা তমলুকে আন্দোলনে শামিল হয়েছি। আমাদের প্রতিনিয়ত সামাজিক ভাবে হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে। এর থেকে আমরা নিস্তার চাই। যারা অযোগ্য, তাদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের দ্রুত কাজে ফিরিয়ে আনা হোক, এই দাবিতেই আমরা একত্রিত হয়েছি।’’ আর এক আন্দোলনকারী হাওড়ার উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা সুমিতা দাস বলেন, ‘‘আমরা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। হাই কোর্টের নির্দেশে একলপ্তে যে ভাবে হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছে, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর যাঁরা এই চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধেই আমাদের আন্দোলন চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement