কালীপদ ওরফে খেরওয়াল সরেন। ফাইল চিত্র।
জনজাতি সংরক্ষিত ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হলেন সাঁওতালি সাহিত্যিক কালীপদ সরেন। যিনি পাঠক মহলে ‘খেরওয়াল সরেন’ ছদ্মনামে পরিচিত। ইতিপূর্বে ২০১৯ সালে খেরওয়াল বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। পরের বছর তৃণমূলে যোগ দেন।
সূত্রের খবর, তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা খেরওয়ালকেই প্রার্থী করা যুক্তিযুক্ত বলে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিল। খেরওয়াল যে প্রার্থী হচ্ছেন, তার আভাস দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভামঞ্চে ‘পদ্মশ্রী’ খেরওয়ালের হাতে রাজ্যের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ তুলে দিয়েছিলেন মমতা। সে দিন মুখ্যমন্ত্রী খেরওয়ালকে মঞ্চের প্রথম সারিতে তাঁর পাশে বসিয়েছিলেন।
সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে যে ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিরোধীরা সরব হচ্ছে, তাতে ঝাড়গ্রামের মত গুরুত্বপূর্ণ আসনে (গত বার ফস্কে যাওয়া) স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মুখ খেরওয়ালকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। বিজেপি এখনও ঝাড়গ্রাম আসনে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার তিনটি আসনে গেরুয়া শিবিরের বিদায়ী সাংসদরাই ফের বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। এরপরই শুক্রবার ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম জেলা ও রাজ্য সভাপতিকে চিঠি দিয়ে দলত্যাগ করছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। যদিও কুনার ব্যক্তিগত কারণে দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা জানিয়েছেন। তবে সাংসদ পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেননি। বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমের সঙ্গে খেরওয়ালের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভাল। ২০২২ সালে খেরওয়াল ভারত সরকারের পদ্মশ্রী সম্মান পান। শোনা যায়, এর নেপথ্যে সাংসদ কুনারের ভূমিকা ছিল। পুরুলিয়া আসনে কুড়মি সম্প্রদায়ের শান্তিরাম মাহাতোকে প্রার্থী করেছে শাসক দল। ঝাড়গ্রামে বেছে নেওয়া হয় সাঁওতালি প্রার্থী। অর্থাৎ আদিবাসী কুড়মির ভারসাম্যের দিকটি খেয়াল রাখা হয়েছে। খেরওয়াল বলছেন, ‘‘নেত্রী ভরসা করে দায়িত্ব দিয়েছেন। মানুষের সমর্থনে দলের প্রত্যাশা পূরণ করব।’’
তবে খেরওয়াল প্রার্থী হতেই কটাক্ষ শুরু করেছে বিরোধী শিবির। ২০১৯ সালের ৬ জুলাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন খেরওয়াল। ওই দিন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে ঝাড়গ্রাম শহরের পাঁচ মাথা মোড়ে এক অনুষ্ঠানে খেরওয়ালের হাতে বিজেপি-র দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন বিজেপির তৎকালীন জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী। এরপরই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বিনপুরের বাঁদরবনি গ্রামে তৃণমূলের দলবদল কর্মসূচিতে খেরওয়ালের হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দিয়েছিলেন তৎকালীন জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিরবাহা সরেন টুডু ও তৎকালীন জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো। বর্তমানে অজিত জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলছেন, ‘‘দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে সর্বশক্তি নিয়ে আমরা মাঠে নামছি। উনি বিপুল ভোটে জিতবেন।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথী বলছেন, ‘‘উনি (খেরওয়াল) সেকেন্ড পজিশনে থাকবেন। সেজন্য আগাম শুভেচ্ছা রইল।’’