অরণ্য শহরে আবর্জনা, ধমক পুরপ্রতিনিধিদের
Mamata At Jhargram

পানীয় জলের দাবি দিদিকে 

বুধবার দুপুর সোয়া দু’টো নাগাদ ঝাড়গ্রাম হেলিপ্যাডে নামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপ্টার। হেলিপ্যাডের পাশেই রয়েছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের লোধা-শবর অধ্যুষিত কাঁটাবাড়ি বস্তি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:৫৬
পুরনো ঝাড়গ্রামের কাঁটাবাড়ি এলাকার হেলিপ্যাডে স্থানীয় লোধা-শবরদের সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পুরনো ঝাড়গ্রামের কাঁটাবাড়ি এলাকার হেলিপ্যাডে স্থানীয় লোধা-শবরদের সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র।

চলতি বছরে প্রথম ঝাড়গ্রাম সফরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার অরণ্য শহরে পৌঁছনোর পরেই তাঁকে শুনতে হল শহরের লোধা-শবর বস্তিতে পানীয় জল নেই। নিজে দেখলেন পর্যটন শহর ঝাড়গ্রামের অপরিচ্ছন্নতা। তারপরে পুরপ্রতিনিধিদের (কাউন্সিলর) সঙ্গে বৈঠক করে সেই নিয়ে কার্যত তিরস্কার করলেন তাঁদের।

Advertisement

লোকসভা ভোটের আগে আজ, বৃহস্পতিবারের ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের প্রশাসনিক জনসভা থেকে জেলার জন্য প্রায় পাঁচশো কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার দুপুরে ঝাড়গ্রামে চলে আসেন তিনি। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন। হাতির হানায় মৃতের পরিজনদের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেবেন। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি পরিষেবাও তুলে দেবেন উপভোক্তাদের হাতে।’’

বুধবার দুপুর সোয়া দু’টো নাগাদ ঝাড়গ্রাম হেলিপ্যাডে নামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপ্টার। হেলিপ্যাডের পাশেই রয়েছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের লোধা-শবর অধ্যুষিত কাঁটাবাড়ি বস্তি। মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে হেলিপ্যাডের এক পাশে জড়ো হয়েছিলেন লোধা-শবরেরা। বাঁশের ব্যারিকেডের অপরপ্রান্তে তাঁদের দেখে এগিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তখন লোধা-শবর মহিলারা তাঁদের নানা সমস্যার কথা বলতে শুরু করেন। কেউ বলেন, শৌচাগার নেই। কেউ জানান বাড়ি না থাকার কথা। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের প্রশ্ন করেন, ‘‘রেশন পাও না? লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাও না?’’ তখন মহিলারা পানীয় জলের সমস্যার কথা জানান। জলের কল বসিয়ে দেওয়ার আবেদন করেন এক লোধা মহিলা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা পুরসভা তো? একটা জলের কল বসিয়ে দিতে বলছি।’’ মুখ্যমন্ত্রী লোধা-শবরদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘লোধা বোর্ড তৈরি হয়েছে। আস্তে আস্তে সব হবে।’’ লোধা পাড়ার গীতা মল্লিক, সুভাষ মল্লিকরা বলেন, ‘‘জলের সমস্যা বহুদিনের। আমাদের শৌচাগারও নেই। অনেকের বাড়িও নেই। দিদিকে বলেছি।’’

সন্ধ্যায় রাজবাড়ি টুরিস্ট কমপ্লেক্সে পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ, উপ পুরপ্রধান সুখী সরেন-সহ ঝাড়গ্রাম পুরসভায় তৃণমূলের ১৭ জন পুরপ্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে ছিলেন দুই মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন ও বিরবাহা হাঁসদা। ছিলেন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারও। সূত্রের খবর, সেখানে অরণ্য শহরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিয়ে ঊষ্মাপ্রকাশ করেন মমতা। তিনি নাকি বলেন, ‘‘এবার দেখছি আমাকে ঝাড়গ্রাম পুরসভা ঝাঁট দিতেও আসতে হবে।’’ পরিষেবা দিতে না পারার জন্য পুরপ্রতিনিধিদের ধমক দেন। জানিয়ে দেন, ভোটের ফল দেখে পুরসভাকে বরাদ্দ দেওয়া হবে। জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও ইন্দ্রনীল সেনকে যুক্ত করে পুরপ্রতিনিধিদের নিয়ে ‘গ্রিন ঝাড়গ্রাম’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। শহরে কোথাও জঞ্জাল থাকলে সংশ্লিষ্ট গ্রুপে পোস্ট করে নজরে আনার সঙ্গে সঙ্গে তা পরিষ্কার করার কথা জানান। প্রতি ওয়ার্ডে পাঁচজন করে সাফাই কর্মী নিয়োগ করার নির্দেশও দেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরো বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব দেওয়া হয় পুরপ্রতিনিধি আর্য ঘোষ ও নবু গোয়ালাকে।

ওই বৈঠকে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সোনা মল্ল মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, শহরের গরিব মানুষেরা সরকারি বাড়ি পাচ্ছেন না। সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সচিবকে ফোন করে পুরপ্রতিনিধিদের জানান, বাড়ি বরাদ্দ করা হবে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি গৌরাঙ্গ প্রধান তাঁর ওয়ার্ডের কুষ্ঠ আশ্রমের বেহাল অবস্থার কথা জানালে বিষয়টি জেলাশাসককে দেখতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুর বোর্ডের বৈঠকে একাংশ পুরপ্রতিনিধির গরহাজিরা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

কারা পুরসভার কাজে অসহযোগিতা করছেন, সেই পুরপ্রতিনিধিদের নামের তালিকা চান তিনি। পুরবোর্ডের বৈঠক এড়ালে সংশ্লিষ্ট পুরপ্রতিনিধিকে শো-কজ় করার জন্যও পুরপ্রধানকে নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদাকে জেলায় বেশি সময় দিতে বলেন। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক শেষ হওয়ার পর এক পুরপ্রতিনিধিকে তাঁর কাজকর্মের জন্য ধমক দেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।

আরও পড়ুন
Advertisement