Manoranjan Byapari

‘দিশাহীন’ বলাগড়ের বিধায়ক

মনোরঞ্জন নাম না করে খারাপ ফলের জন্য দলের চার নেতানেত্রীকে দুষেছেন ফেসবুক-পোস্টে। ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে তাঁদের ‘বলাগড় বিধানসভার অভিশাপ শনি রাহু কেতু আর বিষাক্ত মা মনসা’ বলেছেন।

Advertisement
প্রকাশ পাল
বলাগড় শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৪ ০৮:৩২
মনোরঞ্জন ব্যাপারী।

মনোরঞ্জন ব্যাপারী। —ফাইল চিত্র।

অতঃকিম্‌? লোকসভা নির্বাচন মিটতেই তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এই প্রশ্ন ঘুরছে বলাগড়ে।

Advertisement

গত ৮ মে বলাগড়ে নির্বাচনী জনসভার মঞ্চে তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি মনোরঞ্জনকে বলেন, তিনি যেন ভোটের প্রচারে না আসেন। তিন নেতা নবীন গঙ্গোপাধ্যায়, অসীম মাঝি এবং শ্যামাপ্রসাদ রায় বন্দ্যোপাধ্যায়দের উপরেই ভরসার কথা জানান। মনোরঞ্জন আর প্রচারে আসেননি। হুগলি লোকসভায় তৃণমূল জিতলেও বলাগড়ে বিজেপির থেকে হাজার পাঁচেক ভোটে পিছিয়ে।

এর পরেই মনোরঞ্জন নাম না করে খারাপ ফলের জন্য দলের চার নেতানেত্রীকে দুষেছেন ফেসবুক-পোস্টে। ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে তাঁদের ‘বলাগড় বিধানসভার অভিশাপ শনি রাহু কেতু আর বিষাক্ত মা মনসা’ বলেছেন।

কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক
ভবিষ্যৎ কী?

মনোরঞ্জন যেন কিছুটা দিশাহীন! তিনি বলেন, ‘‘দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই প্রচার থেকে সরেছিলাম। এখন দিদি যা বলবেন, তাই করব। যদি বলেন আগের মতো কাজ করতে, করব। যদি বলেন রাজনীতি ছেড়ে দিতে, দেব।’’

বলাগড়ের মনোরঞ্জন-বিরোধী এক নেতার বক্তব্য, ‘‘এখানে ওঁর ভবিষ্যৎ আছে বলে মনে হয় না। অন্য দলে দেখতে পারেন।’’ দলের সঙ্গে যুক্ত কর্পোরেট সংস্থাই বা মনোরঞ্জন সম্পর্কে কতটা আগ্রহী, সেটাও প্রশ্নও। মনোরঞ্জনের দাবি, থাকলে তৃণমূলেই, অন্য কোথাও নয়।

মনোরঞ্জনের জীবন নানা ঘাত-প্রতিঘাতে ভরা। স্বশিক্ষিত এই সাহিত্যিক ২০২১ সালের বিধানসভায় বলাগড়ে প্রায় ৬ হাজার ভোটে জেতেন। তার দু’বছর আগেই লোকসভায় বিজেপি এগিয়েছিল ৩৪ হাজার ভোটে। বিধানসভা ভোটে চতুর্দিকে তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ স্লোগানের মাঝে মনোরঞ্জন বলেছিলেন, ‘লেখা হবে’। বলাগড়ের নতুন ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলেন ‘লেখোয়াড়’ (নিজের এ ভাবেই পরিচয় দিতেন)। বর্তমানে অবশ্য দলে তিনি ‘একঘরে’।

বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, দলের ক্ষমতাসীনদের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে মুখ খুলেই ব্রাত্য মনোরঞ্জন। সাধারণ মানুষের একাংশের প্রশ্ন, মনোরঞ্জন দলীয় নেতাদের সম্পর্কে যা বলেছেন, সব ভুল? কারও আবার ধারণা, গোলমাল ভাগ-বাটোয়ারায়।

মনোরঞ্জন জানান, মানুষকে পরিষেবা দিতে বাঁশবেড়িয়ায় ভাড়াবাড়িতে একাই থাকছেন। মাঝেমধ্যে জিরাটে বিধায়কের কার্যালয়েও যান। মনোরঞ্জনের কথায়, ‘‘এখনও সময় আছে। সংগঠনের খোলনলচে বদলে পুরনো নেতাদের সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দিতে হবে। পুরনোদের উপরে মানুষ ভরসা করলে দিদির ৬৩টা প্রকল্প সত্ত্বেও তৃণমূল হেরে যায়!’’

রবিবার মনোরঞ্জন সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, তাঁর মনে হয় রাজনীতিতে আসা ভুল হয়েছিল। দাবি করেছেন, দক্ষিণপন্থী দলে এসেও তাঁর ‘বামপন্থী’ পরিচয়ের গায়ে কাদা-কালির দাগ লাগতে দেননি। তাঁর সব ‘অপারেশন’ চলেছে ‘কট্টর বাম ঘরানায়’। পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, বলাগড়ে মাটি-বালি মাফিয়াদের জঙ্গলের রাজত্ব বন্ধের চেষ্টা করতে গিয়ে দেখেছেন, অপরাধীদের পিছনে তৃণমূলেরই নেতারা। লোকসভা নির্বাচনে দলের নেতারাই তাঁর নামে মমতাকে নালিশ করেন। মমতা ‘অত্যন্ত কঠোর ভাষায়’ তাঁকে প্রচার করতে নিষেধ করে। এতে তিনি ‘অপমানে মাটির মধ্যে সেঁধিয়ে গিয়েছিলেন’।

মনোরঞ্জন জানান, তিনি চেয়েছিলেন দলের বলাগড় ব্লক সভাপতি হতে। সে ক্ষেত্রে ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতেই সভাপতি পদে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কর্মীদের বসাতে পারতেন। দল তাঁকে সে সুযোগ দেয়নি। তাঁর অভিযোগ, বর্তমান অঞ্চল সভাপতিদের অধিকাংশই ‘অযোগ্য, ধান্দাবাজ’। বিধায়কের অনুগামীদের স্বচ্ছ্বতা নিয়েও অবশ্য তৃণমূলে প্রশ্ন রয়েছে।

ব্লক তৃণমূল সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বিধায়কের ভাবনার সঙ্গে একমত নন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ওঁকে (বিধায়ককে) চুপ থাকতে বলিনি। দলের সুপ্রিমো বলেছেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন। অঞ্চল সভাপতিদের নিয়ে কী বলেছেন, ওঁর ব্যাপার। এ নিয়ে মন্তব্য করব না। দল যদি মনে করে নতুনদের নিয়ে আসবে, স্বাগত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement