Lok Sabha Election 2024

‘টর্নেডো’র ক্ষত নিয়েই বুথে ভিড় গ্রামের

৩১ মার্চের ‘টর্নেডো’য় ঘরের টিন ও কাঠের কাঠামো ভেঙে পড়েছিল শম্পার পায়ের উপরে। ছেলে রোহিতেরও মাথায় লেগেছিল চোট। শম্পা বলেন, ‘‘১৮ দিন হাসপাতালে ছিলাম। ডাক্তার বলেছেন, ছ’মাস হাঁটাচলা করতে পারব না।”

Advertisement
কৌস্তভ ভৌমিক
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:২৭
ঝড়ে আহত শম্পা রায়কে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর স্বামী। ময়নাগুড়ির বার্নিশে।

ঝড়ে আহত শম্পা রায়কে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর স্বামী। ময়নাগুড়ির বার্নিশে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।

চোখমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আগামী ছ’মাস হাঁটাচলা একদম বন্ধ। মাথায় আঘাত পাওয়া তাঁর ১৪ বছরের ছেলেও এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি। তবে এমন পরিস্থিতিতেও টোটোয় চেপে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বার্নিশ কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শম্পা রায়।

Advertisement

৩১ মার্চের ‘টর্নেডো’য় ঘরের টিন ও কাঠের কাঠামো ভেঙে পড়েছিল শম্পার পায়ের উপরে। ছেলে রোহিতেরও মাথায় লেগেছিল চোট। শম্পা বলেন, ‘‘১৮ দিন হাসপাতালে ছিলাম। ডাক্তার বলেছেন, ছ’মাস হাঁটাচলা করতে পারব না। সে রাতটা আমাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো! আমাদের বাড়ি পুরো ভেঙে গিয়েছে। এখন এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছি। সেখানে থেকেই ভোট দিলাম।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শুধু একটি মাত্র চাওয়া। ভোটে যিনিই জিতুন না কেন, আমাদের গ্রামের পাশে থাকুন।’’

একই বক্তব্য ওই গ্রামের পরিতোষ রায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘কোনও রকমে ভাঙা ঘরে থাকছি। সরকারি ক্ষতিপূরণ মিলেছে। তবে তা দিয়ে হয়তো সব সারাই হবে না। যিনিই সাংসদ নির্বাচিত হোন না কেন, আশা করব, আমাদের জন্য নতুন কিছু তিনি নিয়ে আসবেন।’’

এ দিন সকাল থেকেই বার্নিশ, পুটিমারি-সহ ঝড়বিধ্বস্ত বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা উৎসাহের সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে যান। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের দক্ষিণ সুকান্তনগরেও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা ভোট দেন জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। তবে ঝড়ের ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা অনেকে পাননি বলে অভিযোগ তোলেন। ক্ষতিপূরণের সব টাকা পেয়েছেন আলিপুরদুয়ারের তপসিখাতার ঝড়ে বিধ্বস্ত পরিবারগুলি। এ দিন তাঁরাও সকলে ভোট দেন। কিছু দিন আগে টর্নেডোয় আলিপুরদুয়ার ১ ব্লকের তপসিখাতা গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ আশপাশের এলাকাও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে।

জলপাইগুড়ির ঝড় বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে পরের দিন ওই এলাকায় গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যান স্থানীয় বাসিন্দা জোৎস্না রায়ের বাড়িতে। জোৎস্না বলেন, “ঝড়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী-সহ সবার কাছেই আর্জি জানিয়েছিলাম, তাঁরা যেন আমাদের পাশে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের তরফে ক্ষতিপূরণের একটা অংশের অর্থ পেয়েছি। তাই কিছুটা চিন্তাহীন হয়েই এ দিন ভোট দিয়েছি।”

কোচবিহারের মাথাভাঙার বড় কাউয়ারডেরায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তেরাও ভোট দিয়েছেন। স্থানীয় গ্রামবাসী জ্যোতি বর্মণ বলেন, ‘‘আমরা চাই আমাদের ঘরবাড়ি ঠিক করে দেওয়া হোক।’’ কোচবিহার ২ ব্লকের মরিচবাড়ি এলাকার কয়েক জন গ্রামবাসী বলেন, ‘‘আমরা সবাই ভোট দিয়েছি। ঝড়ে যে ক্ষতি হয়েছে তার সবটা পূরণ হবে না জানি। সরকার সব সময় পাশে থাক এটা চাই।’’

তথ্য সহায়তা: পার্থ চক্রবর্তী, অভিষেক সেনগুপ্ত, নমিতেশ ঘোষ

আরও পড়ুন
Advertisement