Sitaram Yechury

সিপিএমে ‘জয় সীতারাম’! কেরল ছাড়া সর্বত্রই কংগ্রেস ‘বন্ধু’, প্রতিষ্ঠিত ইয়েচুরি লাইন

সিপিএমের প্রয়াত প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের জমানার পরে প্রকাশ কারাট এবং সীতারাম ইয়েচুরির মধ্যে দ্বন্দ্বের মূল বিষয় ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক।

Advertisement
শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪৩
CPM is in alliance with Congress in many states except Kerala

সীতারাম ইয়েচুরি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তেমন কোনও বিতর্ক তৈরি হল না। তেমন কোনও উথালপাথালও হল না। কার্যত নির্বিবাদেই সিপিএমে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল সীতারাম ইয়েচুরির লাইন। ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে’ টরেটক্কার মধ্যে গেল না প্রকাশ কারাট শিবিরও। বরং দেখা গেল, রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার ইয়েচুরি লাইনেই প্রকাশ্য কর্মসূচিতে নামছেন কারাট শিবিরের নেতারা। এমনকি, তাতে যুক্ত হচ্ছেন স্বয়ং প্রকাশ এবং বৃন্দা কারাটও। তবে ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবে রয়ে গিয়েছে কেরল। সেখানেও অবশ্য ইয়েচুরি লাইনের কথাই বলছেন সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা।

Advertisement

২০১৬ সাল থেকে বাংলায় সিপিএম এবং কংগ্রেসের ‘বন্ধুত্ব’ শুরু হয়েছিল। মাঝে ছাড়াছাড়ি হলেও এখন ফের এই রাজ্যে মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরিরা ‘বন্ধুত্বপূর্ণ, সহযোগিতামূলক’ সমঝোতার পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোটে কংগ্রেসের সঙ্গেই রয়েছে সিপিএম। সেখানেও তারা ‘বন্ধু’। ত্রিপুরায় গত বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের সমঝোতা হয়েছিল। এ বারের লোকসভাতেও একটি করে আসনে লড়ছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। গত ডিসেম্বরে রাজস্থানের নির্বাচনে কংগ্রেসের তুমুল বিরোধিতা করেছিল সিপিএম। সেই মরুরাজ্যেই এ বার জোট হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সম্পাদক অমরা রাম প্রার্থী হয়েছেন সিকার কেন্দ্রে। তাঁর সমর্থনে মঙ্গলবার একসঙ্গে জনসভা করেছেন সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা এবং কংগ্রেস সরকারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। বিহারের খাগাড়িয়াতেও আরজেডি, কংগ্রেস জোটের শরিক হিসাবেই প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম।

সিপিএমের প্রয়াত প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের জমানার পরে প্রকাশ এবং সীতারামের দ্বন্দ্বের মূল বিষয় ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক। কারাট যখন দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেই সময় থেকেই কংগ্রেস সম্পর্কে ‘কট্টর’ মনোভাব নেওয়া শুরু করেন। ইউপিএ-১ জমানায় মনমোহন সিংহ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়া, তৎকালীন স্পিকার তথা অধুনাপ্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা— ধারাবাহিক ভাবে তা চলেছিল। অনেকে বলেন, কারাটের ওই সিদ্ধান্তই বাংলায় কংগ্রেস এবং তৃণমূলকে কাছাকাছি এনে দিয়েছিল। যা বাম সরকারের পতন সুনিশ্চিত করেছিল ২০১১ সালে। ২০১৬ সালে যখন বাংলায় বাম এবং কংগ্রেসের সমঝোতা হয়, তখনও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ছিল না। সেই সময়ে দেখা গিয়েছিল, সিঙ্গুরের একটি সভায় মঞ্চে অধীর চৌধুরী রয়েছেন বলে সেই মঞ্চে ওঠেননি ইয়েচুরি। বসেছিলেন অদূরে একটি চায়ের দোকানে। অধীর মঞ্চ ছাড়ার পর মঞ্চে ওঠেন তিনি। যাকে সিপিএমের অনেকে ঘরোয়া আলোচনায় বিদ্রুপও করেছিলেন।

এখন আর সে সব নেই। কারাট শিবিরের নেতারা তাঁদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, ইয়েচুরির লাইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিস্থিতির কারণে। আবার ইয়েচুরি শিবিরের নেতাদের বক্তব্য, পরিস্থিতি যে এই রকম হতে পারে, তা আগে আন্দাজ করেই কংগ্রেসের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বের’ লাইনে হাঁটা শুরু হয়েছিল। ঘটনা হল, সীতারাম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে সিপিএমের মহাসম্মেলন বা পার্টি কংগ্রেসে তিনটি মৌলিক বিষয়ে বদল আনা হয়েছিল। এক, বিজেপি এবং কংগ্রেসের সঙ্গে সমদূরত্বের লাইন থেকে সরে আসা। দুই, সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপিকেই প্রধান ‘শত্রু’ হিসাবে চিহ্নিত করা এবং তিন, নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়টি রাজ্য স্তরের বাস্তবতার উপর ছেড়ে দেওয়া। মূলত এই তিন সূচকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে, যেখানে যেখানে সিপিএমের কিছু হলেও শক্তি রয়েছে, সেখানে তারা কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় এবং সমঝোতার পথে এগিয়েছে। যদিও রাজ্যের বাস্তবতার সূচকেই কেরলে সিপিএমের মূল প্রতিপক্ষ এখনও কংগ্রেস। ফলে ইয়েচুরি লাইন গোটা দেশে পাতা হয়ে গেলেও কেরলে এখনও তার সামনে ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ডই ঝুলছে।

আরও পড়ুন
Advertisement