Lok Sabha Election 2024

বিজেপির প্রথম তালিকায় প্রার্থী নন প্রজ্ঞা, প্রবেশ বা রমেশরা, ‘ঘৃণাভাষণ’ই কি কাল হল এই সাংসদদের?

বিজেপির প্রথম প্রার্থিতালিকায় নাম নেই সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর, প্রবেশ সাহিব সিংহ বর্মা, রমেশ বিধুরির। ভোপাল, পশ্চিম দিল্লি, দক্ষিণ দিল্লির মতো জেতা আসনে তাঁদের প্রার্থী করেনি দল। কেন?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৩:০৩
image of pragya

(বাঁ দিক থেকে) প্রজ্ঞা ঠাকুর, রমেশ বিধুরি, পরবেশ সাহিব সিংহ বর্মা। — ফাইল চিত্র।

লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রথম প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের থেকেও বেশি নজরে যাঁরা নেই। প্রথম প্রার্থিতালিকায় নেই বিদায়ী সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর, প্রবেশ সাহিব সিংহ বর্মা, রমেশ বিধুরি। কিন্তু কেন? বিজেপির একটি সূত্র বলছে, ‘ঘৃণাভাষণ’ বা বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে যাঁরা বার বার শিরোনামে এসেছেন, আসন্ন ভোটে তাঁদের আর টিকিট দিচ্ছে না দল। তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসতে বিজেপি সুসংহত সাংসদদের দল চাইছে। ঠিক সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গেও এমন কাউকে প্রার্থী করা হয়নি, যাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ রয়েছে। রাজ্য বিজেপির একটা অংশ মনে করছে, মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে জেতা আসনে একই কারণে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দিলীপ ঘোষের নামও।

Advertisement

মধ্যপ্রদেশের ভোপালে প্রজ্ঞার পরিবর্তে এ বার প্রার্থী করা হয়েছে অলোক শর্মাকে। ২০০৮ সালে মালেগাঁও বিস্ফোরণের অন্যতম অভিযুক্ত প্রজ্ঞা। ২০১৯ সালে তাঁকে ভোপালের প্রার্থী করার পরেও তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। তার পর থেকে একাধিক বার সংসদের ভিতরে এবং বাইরে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন প্রজ্ঞা। মালেগাঁও মামলায় শারীরিক অসুস্থতার কারণে আদালতে জামিন পান তিনি। তার ঠিক পর পরই একটি কর্মসূচিতে কবাড্ডি খেলতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এক অনুষ্ঠানে গরবা নাচতেও দেখা গিয়েছিল।

যদিও সেখানেই থামেননি প্রজ্ঞা। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে ‘দেশপ্রেমী’ বলেছিলেন তিনি। তার পরেই সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। এই ঘটনায় মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছিলেন, ‘‘গান্ধীজি বা নাথুরাম গডসেকে নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছিল, তা খুবই খারাপ। তিনি ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু আমি পুরোপুরি ক্ষমা করতে পারব না।’’ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগেই পুলিশ অফিসার হেমন্ত কারকারেকে নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার সময় প্রাণ গিয়েছিল হেমন্তের। প্রজ্ঞা মন্তব্য করেছিলেন, তাঁর ‘অভিশাপ’-এই নিহত মুম্বই এটিএসের প্রাক্তন প্রধান। ভোপালের বিদায়ী সাংসদের অভিযোগ ছিল, মালেগাঁও মামলায় যখন তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলেন কারকারে। পাশাপাশি, বিজেপির একটা অংশের অভিযোগ, নিজের লোকসভা কেন্দ্রে একেবারেই সক্রিয় নন প্রজ্ঞা। ভোটাররা অখুশি। সে কারণেই টিকিট দেওয়া হল না তাঁকে।

বিজেপির একটি অংশ বলছে, পশ্চিম দিল্লির সাংসদ প্রবেশের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। দু’বার সাংসদ হয়েছেন। বাবা সাহিব সিংহ বর্মা ছিলেন দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। এলাকায় সংগঠনও মজবুত প্রবেশের। তার পরেও তাঁকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। কারণ ‘ঘৃণাভাষণ’। ২০২০ সালে শাহিন বাগে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিলেন বহু মানুষ। ওই বছরই ছিল দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন। প্রবেশ বলেছিলেন, দিল্লিতে ভোটে জিতে বিজেপি ক্ষমতায় এলে এক ঘণ্টার মধ্যে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দেবে। ২০২২ সালে আবার সংখ্যালঘুদের নিশানা করে ‘কুমন্তব্য’ করেন প্রবেশ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যেখানেই ওঁদের দেখবেন, ওঁদের মাথা ঠিক করতে চাইছে, সিধে করতে চাইলে, পুরোপুরি বয়কট করুন। যাঁরা আমাকে সমর্থন করেন, হাত তুলুন।’’

মনে করা হচ্ছে, দক্ষিণ দিল্লির সাংসদ রমেশ বিধুরিকেও একই কারণে প্রার্থী করেনি বিজেপি। গত বছর সেপ্টেম্বরে লোকসভায় আচমকাই আমরোহার সাংসদ দানিশ আলিকে আক্রমণ করেন রমেশ। তাঁর সেই মন্তব্যের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ক্ষমা চান সাংসদ। যদিও দল যে তাতে সন্তুষ্ট হয়নি, তা লোকসভার প্রথম প্রার্থিতালিকা থেকেই এক প্রকার স্পষ্ট।

দিল্লিতে বিদায়ী সাংসদ মীনাক্ষী লেখি এবং হর্ষ বর্ধনকেও টিকিট দেয়নি বিজেপি। দলের একটি অংশ মনে করছে, গত লোকসভায় দিল্লিতে সাতটির মধ্যে সাতটি আসনে জিতলেও এ বার খুব একটা লড়াই সহজ হবে না। কারণ, এ বার দিল্লিতে আপ এবং কংগ্রেস জোট বেঁধেছে। চারটিতে লড়ছে আপ, তিনটিতে কংগ্রেস। বিরোধীরা যাতে সুবিধা পায়, এমন কোনও পদক্ষেপ করতে চাইছে না বিজেপি। আর দলের একটা অংশের মতে, রমেশ, পরবেশদের মন্তব্য বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। সেই সুযোগ আর বিরোধীদের দিতে চাইছে না দল। বরং মোদীর ‘বিকশিত ভারত @২০৪৭’-কে মূল মন্ত্র করেই এগোতে চাইছে বিজেপি। সে কারণে প্রার্থিতালিকায় নাম নেই রমেশ, প্রবেশের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিল্লি বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘‘এ বার জয়ই লক্ষ্য বিজেপির। দেখা গিয়েছে, অনেক নেতা নিজের কেন্দ্রে জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন।’’

ওই নেতা আরও বলেন, ‘‘প্রজ্ঞা, রমেশ, প্রবেশদের ঘৃণাভাষণ বার বার দলকে বিপাকে ফেলেছে। তাঁদের টিকিট না দিয়ে ভোটারদেরও বার্তা দিতে চাইছে বিজেপি যে, শালীনতা বজায় রাখতেই হবে। অতীতে প্রধানমন্ত্রীও ঘৃণাভাষণ নিয়ে বার বার কড়া বার্তাই দিয়েছেন।’’ শনিবার বিজেপি যে প্রথম প্রার্থিতালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ১৯৫ জনের নাম রয়েছে। তবে সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ৩৩ জন বর্তমান সাংসদ। বিজেপির একটা অংশ মনে করছে, তৃতীয় বার লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পথে কোনও ধরনের বাধা আর রাখতে চাইছেন না শীর্ষ নেতৃত্ব। বিরোধীদের হাতে একটা তাসও তুলে দিতে চাইছেন না। ঠিক সে কারণেই প্রথম তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রজ্ঞারা।

আরও পড়ুন
Advertisement