SUCI

জয় আসে না, তবুও পঞ্চম বার ভোটে লড়ছেন বিজয়, এসইউসির অধ্যাপক নেতা তবু নন ‘বিদ্রোহী রণক্লান্ত’

২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালেও লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বিজয়। প্রতি বারেই তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এ বারও তার অন্যথা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তা-ও লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে চান না তিনি।

Advertisement
শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪ ০৮:০০
Bijay Kumar Dalui is contesting from Bolpur seat as a SUCI candidate for the fifth time

বিজয় কুমার দলুই। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তিনি যখন ২০০৪ সালে বোলপুর কেন্দ্রে এসইউসির প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স ৩৪ বছর। প্রতিপক্ষ ছিলেন সিপিএমের সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সে বার ৩৪ বছরের তরুণ এসইউসি প্রার্থী বোলপুর লোকসভায় ভোট পেয়েছিলেন সাকুল্যে সাড়ে পাঁচ হাজার। জামানত জব্দ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। কিন্তু সেই যে তিনি ভোটে লড়া শুরু করেছিলেন, তা থামাননি। এ বারও তিনিই বোলপুরের এসইউসিআই প্রার্থী। নাম: বিজয় কুমার দলুই। পেশা: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক।

Advertisement

২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালেও ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বিজয়। প্রতি বারেই তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এ বারেও তার অন্যথা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তা-ও লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে চান না তিনি। ভোটে দাঁড়ান, হেরে যান, তা-ও আবার দাঁড়ান কেন? বিজয়ের জবাব, ‘‘ভোট আমাদের কাছে দলের রাজনীতির প্রচারের একটি মাধ্যম। নির্বাচনী প্রচারের মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করি। তার পর তাঁদের সংগঠিত করার কাজ করি।’’

এ বারের লোকসভা ভোটেও বাংলার ৪২টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে এসইউসি। সাধারণ শ্রেণিভুক্ত আসনে প্রার্থী হতে গেলে নির্বাচন কমিশনে গচ্ছিত রাখতে হয় ২৫ হাজার টাকা। সংরক্ষিত আসনে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। প্রতি বার মোটামুটি সব আসনেই জামানত যায় এসইউসির। যদিও ব্যতিক্রম ছিল ২০০৯ সালের জয়নগর কেন্দ্র। সে বার তৃণমূলের সমর্থনে সাংসদ হয়েছিলেন এসইউসির চিকিৎসক নেতা তরুণ মণ্ডল । তবে বোলপুরের প্রার্থীর কোনও বারই জামানত থাকেনি। ২০০৯ সালে তাঁর ভোট পৌঁছেছিল সাড়ে ১৫ হাজারে। ২০১৪ সালে সামান্য কমে হয় কমবেশি ১৫ হাজার। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে তা আরও কমে চলে যায় ১০ হাজারেরও নীচে।

তবু বিজয় লড়ে যান অন্য জয়ের আশায়। কথা বলতে বলতে মেনে নিলেন, যে ভাবে অন্য দলগুলির কাছে নির্বাচনী বন্ডের টাকা রয়েছে, তাতে এই লড়াই কিছুটা ‘অসম’। গত লোকসভা ভোটে নির্বাচন কমিশনে যে হিসেব বিজয় দিয়েছিলেন, তাতে তাঁর ভোটে লড়ার খরচ হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা। যা এই বাজারে কিছুই নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই পরিমাণ অর্থ বড় দলগুলির কাছে কয়েকটি বুথের খরচ। কিন্তু এসইউসির অত বৈভব নেই। তবে সেই না থাকাকে ‘গর্ব’ হিসেবেই দেখালেন এই অধ্যাপক নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কর্মীরা দেওয়াল লেখেন। শুভানুধ্যায়ীরা অর্থ দেন। যাঁরা উপার্জনশীল, তাঁরাও দলকে টাকা দেন— সব মিলিয়ে হয়ে যায়।’’

বোলপুর শহরের জামবনি এলাকার সারদাপল্লির বাসিন্দা বিজয়। পরিবার বলতে স্ত্রী এবং ২০ বছর বয়সি পুত্র। স্ত্রী এসইউসিরই সর্বক্ষণের কর্মী (হোলটাইমার)। ছেলেও যুক্ত দলের ছাত্র সংগঠন ডিএসও-এর সঙ্গে। অর্থাৎ ‘পার্টি পরিবার’। চার বার জামানত গেলেও পঞ্চম বার ভোটের লড়াইয়ে ক্লান্তিহীন বিজয়। তাঁর একটাই কথা, ‘‘আমাদের রাজনীতির কথাটা বলে যেতে হবে। নতুন নতুন মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে হবে।’’ ক্ষমতার মোহে আদর্শ আলমারিতে তুলে অনেকেই যখন দলবদলকে প্রায় রুটিনে পরিণত করেছেন, তখন বিজয় দলুই ব্যতিক্রমীই বটে।

আরও পড়ুন
Advertisement