অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
সোমবার কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করার রায় দিয়েছিল। তার অব্যবহিত পরেই রায়গঞ্জের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই রায়কে ‘বেআইনি’ বলে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু ওই রায়দানের পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও পরে মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির জনসভা থেকে আদালতের রায় নিয়ে কোনও মন্তব্যই করলেন না তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার অভিষেক যখন দার্জিলিং লোকসভার প্রচারে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন প্রায় কাছাকাছি সময়েই বীরভূম লোকসভার তারাপীঠে ভাষণ দিচ্ছিলেন মমতা। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘‘বিজেপির একটা কথায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকার চাকরি গিয়েছে! তাদের বলছে কিনা ৮ বছরের মাইনে সুদ-সহ ফেরত দাও!’’ কিন্তু অভিষেক সেই প্রসঙ্গে ঢোকেনইনি। বরং কেন্দ্রের বঞ্চনা এবং রাজ্য সরকারের উন্নয়নের তুলনামূলক আলোচনাতেই নিজের বক্তৃতাকে সীমাবদ্ধ রাখেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী। কেন অভিষেক ওই বিষয়ে কোনও কথা বললেন না, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে।
অভিষেক তাঁর বক্তৃতায় এক বার বলেছেন, ‘‘অনেক ভাবেই তো চেষ্টা হচ্ছে। তাতেও তৃণমূলকে হারাতে পারছে না।’’ সেই ‘চেষ্টা’ কী, সে ব্যাপারে বিশদে কিছু বলেননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। অনেকের মতে, হতে পারে এটাই মমতা-অভিষেকের ‘পারস্পরিক বোঝাপড়া’। কারণ, হাই কোর্ট রায় দিয়েছে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে। মমতা মুখ্যমন্ত্রী। তাই তিনিই জবাব দিচ্ছেন। চাকরিপ্রার্থীদের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন। মমতা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে। পক্ষান্তরে, অভিষেক সংগঠন এবং দল দেখেন। সরকারে তাঁর কোনও প্রকাশ্য ভূমিকা নেই। ফলে তিনি ওই সরকারি বিষয় থেকে দূরে থেকেছেন। অভিষেক তাই কেন্দ্রের ‘ঢক্কানিনাদ’ এবং রাজ্যের ‘উন্নয়ন বাস্তবায়ন’-এর প্রেক্ষাপটেই বক্তৃতা করেছেন।
আগামী শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় ভোটে দার্জিলিঙে ভোটগ্রহণ। গত ১৫ বছর ধরে ওই আসনটি বিজেপির দখলে রয়েছে। মঙ্গলবারের সভা থেকে অভিষেক বলেন, ‘‘দার্জিলিঙে সব দলকে আপনারা সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কেউ কিছু করেনি। এক বার তৃণমূলকে জেতান! আপনাদের কাছে পাঁচ বছর নেব না। দু’বছরের মধ্যে যদি কাজ না করতে পারি তা হলে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে আপনারা যা বদলা নেওয়ার নিয়ে নেবেন।’’ নকশালবাড়ির সভা থেকে অভিষেক দাবি করেছেন, প্রথম দফায় রাজ্যের যে তিনটি আসনে ভোট হয়েছে, সেই আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে ‘আশাপ্রদ’ ফল করবে তৃণমূল। অভিষেকের কথায়, ‘‘আমি হাওয়ায় কথা বলি না। আমি আপনাদের বলছি, প্রথম দফায় যে তিনটি আসনে ভোট হয়েছে, সেখানকার মানুষ বাংলা বিরোধীদের ঘরে ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে এসেছে। আগামী দিনে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দায়িত্ব আপনাদের।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম দফায় ওদের মাথা ভেঙেছি। দ্বিতীয় দফায় কাঁধ ভাঙব। তৃতীয় দফায় কোমর, চতুর্থ দফায় হাত ভাঙব, পঞ্চম দফায় পা আর একেবারে শেষে বলো হরি, হরি বোল।’’