বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমিতে নবনির্মিত গ্রন্থাগার নিজস্ব চিত্র।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বসতবাড়িতে শুরু হতে চলেছে ছ’মাসের সার্টিফিকেট কোর্স। বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমির তরফ থেকে এই সার্টিফিকেট কোর্স করানো হবে। যেখানে বিদ্যাসাগরকে নিয়ে গবেষণার সুযোগ থাকছে ছাত্রছাত্রীদের।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই সার্টিফিকেট কোর্সটি করাবে তারা। যাতে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পড়ুয়ারাও বিদ্যাসাগরের লেখা ও সাহিত্য চর্চা নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। শুধু গবেষণার সুযোগ নয় বসতবাড়ির একতলায় তৈরি করা হচ্ছে প্রদর্শনশালাও। যেখানে বিদ্যাসাগরের ব্যবহৃত বহু জিনিসপত্র-সহ ঐতিহাসিক ছবিও থাকবে।
বিদ্যাসাগরের বসতবাড়ির সঙ্গে লুকিয়ে রয়েছে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি। ১৮৭৪ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কলকাতা অর্থাৎ তৎকালীন সুতানুটিতে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। ১৮৭৬ সালে এই বাড়িটির নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছিল, এবং ১৮৭৭ সালে এই বাড়ির দোতলায় থাকতে শুরু করেছিলেন বিদ্যাসাগর। ১৮৯১ সালে বিদ্যাসাগর প্রয়াত হন কলকাতার এই বাড়িতে, তারপর থেকে এই বাড়িটি দখলদারদের হাতে চলে যায়। পরবর্তীকালে ১৯৯৮ সালে সকল আইনি জটিলতা কাটিয়ে এই বাড়িটার অধিগ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, পাশাপাশি শুরু হয় সংস্কারের কাজ। ২০২১ সালে এই বসত বাড়িতেই গঠন করা হয় বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমি।
বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমির ডিরেক্টর শৈলেশ মুখোপাধ্যায় বলেন ‘‘বাড়িটির সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ। বিদ্যাসাগরকে নিয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে আগ্রহ বৃদ্ধি ও গবেষণার সুযোগ করে দেওয়াই এখন লক্ষ্য বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমির। পাশাপাশি বিদ্যাসাগরের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র ও ছবি সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে প্রদর্শনশালাও স্থায়ী ভাবে তৈরি করা হচ্ছে এই বসত বাড়িতে।’’
এই বাড়ির দোতলায় ছিল এই মনীষীর গ্রন্থাগার। পরবর্তীকালে বাড়িটি সংস্কার করা হলেও গ্রন্থাগারের স্থান পরিবর্তন করা হয়নি। বিদ্যাসাগরের নিজের লেখা অথবা বিদ্যাসাগরের উপরে লেখা প্রায় ২০০টি বই রয়েছে এই লাইব্রেরিতে। বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত ও পার্সি-সহ নানা ভাষায় লেখা বিদ্যাসাগরের সংগ্রহে ছিল প্রায় ২৪ হাজার বই। বর্তমানে এই বইগুলি উদ্ধার করা হয়েছে এবং সেগুলি রাখা হয়েছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সংগ্রহের এই পুরোনো বই ও তার লেখা বিভিন্ন নথির ডিজিটাল সংস্করণের মাধ্যমে পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন ও গবেষণার সুযোগের জন্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তুলে ধরবে বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমি। বিদ্যাসাগরের ২০৩ তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করা হয় নবনির্মিত বিদ্যাসাগর অ্যাকাডেমিতে।
সেখানে ‘বিদ্যাসাগর-দিনময়ী’ পুরস্কার দেওয়া হয় কেতকী কুশারী ডাইসন ও ব্রায়ান এ হ্যাচার-কে। জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বিদ্যাসাগর ও বাঙালি আধুনিকতা’ এই বিষয়ের উপর একটি রচনার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল, এই প্রতিযোগিতায় পুরুলিয়া ও আলিপুরদুয়ারের সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা অংশগ্রহণ করেন।
এই অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছিল ‘বিদ্যাসাগর: ফিরে দেখা’। বিদ্যাসাগরের উপর রচনা প্রতিযোগিতায় এই দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ছ’জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। এ ছাড়াও ‘মহাসাগর বিদ্যাসাগর’ নামে প্রথম প্রকাশনা সংস্থা তৈরি করা হয়েছে।