WBBSE Madhyamik Result 2024

নিত্য অনটনকে সঙ্গী করেই মাধ্যমিকে ৯২.৪ % নম্বর সুন্দরবনের সুমনার

সুমনা জানিয়েছে, প্রস্তুতি ভালই ছিল। পরীক্ষাও ভাল হয়েছিল। ৬৬০-৬৭০ মতো নম্বর আশা করেছিল সে। পেয়েছে ৬৪৭। তাই সামান্য আক্ষেপ রয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২৪ ১৭:৩৫
Madhyamik Result 2024

মায়ের সঙ্গে সুমনা হালদার। সংগৃহীত ছবি।

জীবনের আর এক নাম সংগ্রাম! এর মর্মার্থ প্রতিদিনই টের পায় সে এবং তার পরিবার। তার মধ্যেই এ বারের মাধ্যমিকে ৯২.৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ হল সুমনা। সুমনা হালদার। সুন্দরবনের মথুরাপুর অঞ্চলের বাসিন্দা। কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের ছাত্রী। সেই স্কুল থেকেই এ বার প্রথম হয়েছে সে।

Advertisement

কৃষ্ণচন্দ্রপুরেরই শীতলা রোডে একটা ছোট্ট ঘরে বসবাস সুমনাদের। বাবা সুভাষ হালদার বাতাসা কেটে বাজারে বিক্রি করেন। মা গৃহবধূ। তিন ভাই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান সুমনা। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ভাই ক্লাস ফাইভে পড়ে। এই অভাবের সংসারও তার ইচ্ছাশক্তিকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দাঁতে দাঁত চেপে সারা বছর ধরে পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে গিয়েছে সে। সুমনা জানিয়েছে, প্রস্তুতি ভালই ছিল। পরীক্ষাও ভাল হয়েছিল। ৬৬০-৬৭০ মতো নম্বর আশা করেছিল সে। পেয়েছে ৬৪৭। তাই সামান্য আক্ষেপ রয়েছে। তবে সে সব ভুলে আপাতত ভবিষ্যতের স্বপ্ন সফল করতে সে প্রস্তুত। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়। সে জন্য উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে নিজের স্কুলেই ভর্তি হবে সে। তবে শুধুই কি পড়ার প্রতি আগ্রহ তার? আর কী পছন্দ এই কিশোরীর? সুমনার কথায়, “অবসরে আমি আঁকতে ভালবাসি। শিখতেও যেতাম। পরীক্ষার আগে যদিও সে সব বন্ধ রেখেছিলাম।”

মেয়ের এতো ভাল ফলে স্বভাবতই আনন্দে উদ্বেল বাবা-মা। জানিয়েছেন, নিজের চেষ্টাতেই আজ ওর এই রেজ়াল্ট। তবে বরাবর পাশের ছিলেন স্কুলের শিক্ষকেরা। গৃহ শিক্ষকেরাও কেউ পয়সার বিনিময়ে, আবার কেউ বা বিনা পয়সাতেই মেয়েকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। তবে এতো আনন্দের মাঝেও কপালে চিন্তার ভাঁজ সুমনার মায়ের। ছলছল চোখে বললেন, “আমাদের আর্থিক অবস্থা তো তেমন ভাল নয়। নুন আনতে পান্তা ফুরনো সংসারে সুমনার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন কী করে পূরণ করব, এখন সেটাই শুধু চিন্তা।” মেয়ের পরিশ্রম যেন বৃথা না যায়, তার জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন সুমনার মা।

সুমনার এই ফলাফলে গর্বিত কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতিও। তিনি জানিয়েছেন, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী এই ছাত্রী বরাবরই অত্যন্ত মেধাবী। মাধ্যমিকে ইংরেজি বাদে বাকি সব বিষয়েই সে ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে। তাই সুমনার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তাঁর স্কুল সর্বতোভাবে পাশে থাকার চেষ্টা করবে। একই সঙ্গে তিনিও সুমনার পড়াশোনার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন সকলের কাছে।

আরও পড়ুন
Advertisement