Women Empowerment

আপনি আচরি

অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা হিসাব করে দেখিয়েছেন, যদি পুরুষদের সমান হারে মেয়েরা কাজে যোগ দিতে পারত, ভারতের জিডিপি বহু উন্নত দেশকে ছাড়িয়ে যেত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২২ ০৫:১১
নারীশক্তি।

নারীশক্তি।

তবে কি মাতৃত্বের শক্তিতেই আজও নারীশক্তির প্রধান প্রকাশ? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা শুনে এই প্রশ্ন জাগে। মেয়েদের অবমাননার নিরসনের আহ্বান করে মোদী নাম করেছেন সম্মাননীয় নারীদের— ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঝলকারী বাই, কর্নাটকের রানি চেন্নাম্মা বেগম, অযোধ্যার হজরত বেগম প্রমুখের। এঁরা প্রত্যেকেই নিজের সন্তানের রাজ্যলাভের জন্য ব্রিটিশের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। মোদীর মুখে এই মেয়েদের নাম হয়তো অপ্রত্যাশিত নয়— রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতি যে ভারতীয় নারীকে ‘আদর্শ’ বলে সামনে রেখে প্রচার চালায়, তিনি শিবাজির মা জিজাবাই। এ-ও লক্ষণীয় যে, এই লড়াকু মেয়েদের সামনে সব সময়ই থাকে কোনও ‘বহিরাগত’ শত্রু— হয় মুসলিম, নয় ইংরেজ। সাবিত্রীবাই ফুলে বা রোকেয়া বেগম যে বিজেপির প্রচারে আসেন না; প্রথমত তাঁরা দলিত এবং মুসলিম। এবং দ্বিতীয়ত, তাঁরা মেয়েদের উপর তার নিজের সংসার, নিজের সমাজের উৎপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সন্তান-সংসারের সুরক্ষায় প্রাণদানের কাহিনি তাঁদের নয়, তাঁরা মেয়েদের মানুষের মতো বাঁচতে শিখিয়েছেন। ভারতে আজ যখন মহিলা ও শিশুদের দারিদ্র ও অপুষ্টি বেড়ে চলেছে, দলিত-আদিবাসী মেয়েদের উপর ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে প্রতি বছর, নারী-নিরাপত্তার বিষয়টি কোনও গুরুত্ব পায়নি, তখনও প্রশাসনের শীর্ষকর্তার মুখে নারীশক্তির জয়গান বেসুরো লাগে না। কেননা নারীশক্তি বলতে তিনি কেবল ‘মাতৃত্বের শক্তি’র কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মেয়েদের সুযোগ দেওয়া হলে তারা দেশকে বহুগুণ ফিরিয়ে দেয়। অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা বার বার হিসাব করে দেখিয়েছেন, যদি পুরুষদের সমান হারে মেয়েরা কাজে যোগ দিতে পারত, তা হলে ভারতের জিডিপি বহু উন্নত দেশকে ছাড়িয়ে যেত। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় মেয়েদের কাজে যোগ দেওয়ার হার ক্রমশ কমছে। সাম্প্রতিকতম চিত্র, কর্মক্ষম পুরুষদের ছেষট্টি শতাংশ শ্রমের বাজারে সংযুক্ত, মেয়েদের মাত্র ৯ শতাংশ। শ্রমের বাজারে মেয়েদের যোগদান দ্রুত কমেছে নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে— একটি হিসাব, ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দু’কোটি মেয়ে সরে এসেছে কাজের জগৎ থেকে। নোটবন্দি এবং অতিমারির সময়ে লকডাউন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই দু’টি সিদ্ধান্তেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেয়েরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুলিশবাহিনীতে মেয়েদের যোগদানের কথা বলেছেন। কিন্তু, পরিসংখ্যান বলছে যে, ভারতে দশ জন পুলিশের মধ্যে মাত্র এক জন মহিলা, তাঁরাও অধিকাংশই নিচুস্তরের কর্মী।

Advertisement

যে সুযোগ মোদী ভারতের নাগরিককে দিতে বলছেন, তার পথ তিনি নিজে দেখিয়েছেন কি? মোদীর জমানায় কেরোসিনে ভর্তুকি উঠেছে, গ্যাস চলে গিয়েছে সাধ্যের বাইরে, অতএব কাঠকুটোর খোঁজে সময় যাচ্ছে মেয়েদের। ঘরে ঘরে পাইপ-বাহিত জল এখনও স্বপ্ন। শিশুপরিচর্যায় যা মায়ের সহায়ক, সেই অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পে সরকারি বরাদ্দ কমছে। ফলে ভারতে অগণিত মেয়ে কাজ খোঁজার চেষ্টা থেকেই সরে এসেছে। তৎসহ, আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, মিড-ডে মিলের রন্ধনকর্মীদের ‘স্বেচ্ছাকর্মী’ করে রেখে ন্যূনতম ভাতা না দেওয়ার জন্য নারীশ্রমের যে অবমূল্যায়ন ভারত সরকার করছে, তাতে ‘নারীশক্তি’-র জয়গান বড়ই বেমানান। আর সব শেষে বলতেই হয়— মুখে মাতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন যে প্রধানমন্ত্রী, তাঁর নিজের রাজ্যে, তাঁর নিজের মুখ্যমন্ত্রিত্ব আমলে ঘটে যাওয়া এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর উপর অমানুষিক, নৃশংস অত্যাচার করেও অপরাধীরা যখন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যায়, এবং তিনি বা তাঁর প্রশাসন থাকেন নিশ্চুপ, নীরব, কী ভাবে তাঁর দ্বিচারিতাকে দেখবে তাঁর দেশ?

আরও পড়ুন
Advertisement