Jadavpur University

দৃষ্টান্ত

রাজ্যের পক্ষেও তা হবে বিশেষ মঙ্গলজনক, কারণ পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষার পরিসরে গর্ব করার যে সামান্য কারণগুলি অবশিষ্ট আছে, তাদের মধ্যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেবল অন্যতম নয়, অগ্রণী।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২২ ০৭:১৯

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এই বিদ্যায়তনের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের কাছে আর্থিক সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন। আবেদনের কারণ— অর্থাভাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভান্ডারে টাকা আসে প্রধানত দু’টি উৎস থেকে: রাজ্য সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তথা কেন্দ্রীয় সরকার। দু’টি উৎসই ক্রমে ক্রমে শীর্ণ থেকে শীর্ণতর হয়েছে। শিক্ষক ও কর্মীদের বেতনাদি প্রাপ্য মিটিয়ে এবং প্রতিষ্ঠান চালানোর অত্যাবশ্যক প্রয়োজন পূরণ করে যে অর্থ পড়ে থাকে, তাতে পরিকাঠামো উন্নয়ন তো দূরস্থান, গ্রন্থাগার বা গবেষণাগারের নিয়মিত সংস্থানই দুষ্কর। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভাগগুলিতে এই ধরনের খরচের প্রয়োজন বেশি, তাই তাদের সঙ্কটও বেশি, তবে কার্যত সমস্ত বিভাগই অর্থাভাবে বিপন্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই কর্মজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত প্রাক্তনীদের একাংশ ব্যক্তিগত ভাবে সহযোগিতায় উদ্যোগী হয়েছেন। তাঁদের অন্তত একটি সংগঠন সম্প্রতি তেমন উদ্যোগ শুরু করেছে। উপাচার্যের আবেদনটি এই উদ্যোগে গতি সঞ্চার করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল। রাজ্যের পক্ষেও তা হবে বিশেষ মঙ্গলজনক, কারণ পশ্চিমবঙ্গে উচ্চশিক্ষার পরিসরে গর্ব করার যে সামান্য কারণগুলি অবশিষ্ট আছে, তাদের মধ্যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেবল অন্যতম নয়, অগ্রণী।

সমস্যাটি কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নয়। উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি বরাদ্দের ঘাটতি বহু দিন ধরেই বাড়ছে। সেই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যায় অধুনা যুক্ত হয়েছে একাধিক বিশেষ মাত্রা। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের অর্থাভাব অনেক কালই ঘোরতর, কিন্তু আরও বেশি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে শিক্ষার প্রতি বর্তমান শাসকদের সম্পূর্ণ অবহেলা। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় অবধি কোনও স্তরেই শিক্ষার প্রয়োজন সম্পর্কে তাঁদের কিছুমাত্র আগ্রহের লক্ষণ নেই, ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অর্থাভাব নিয়েও তাঁদের মাথাব্যথা নেই। এ কেবল রকমারি দানসত্র এবং উৎসব-মেলা-কার্নিভাল আয়োজনে অপচয়ের প্রশ্ন নয়, অগ্রাধিকার নির্বাচনের মৌলিক প্রশ্ন— শিক্ষা তাঁদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। সুতরাং, উচ্চশিক্ষার সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকার বিশেষ কোনও আয়োজন করবে, এমন প্রত্যাশা ক্ষীণ। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় শাসকরা উচ্চশিক্ষার সমগ্র ধারণাটিকেই পাল্টে ফেলতে বদ্ধপরিকর। শিক্ষার্থীরা টাকা খরচ করে কেরিয়ার-বান্ধব বিদ্যা কিনবেন এবং অতঃপর সেই বিদ্যার জোরে অর্থ উপার্জন করবেন— এটাই তাঁদের শিক্ষা-নীতির সারাৎসার। শিক্ষার বেসরকারিকরণ তার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, কিন্তু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এই বাজারের যুক্তিই ক্রমশ বলবৎ হচ্ছে। এর পরিণাম সহজেই অনুমেয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের পর থেকে ইউজিসি-র অনুদান কার্যত ‘স্রেফ উধাও’ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সরকার অপারগ, অনাগ্রহী অথবা বিরূপ; বেসরকারি উদ্যোগ— কিছু ব্যতিক্রম সাপেক্ষে— অর্থকরী বিদ্যা ভিন্ন অন্য শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যয়ে নারাজ; এই পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যদি জ্ঞানান্বেষণের স্বধর্ম পালন করতে হয়, তবে অর্থ সংস্থানের বিকল্প উপায় ভাবতে হবে। যে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত এবং সামর্থ্যবান, তাঁদের সহযোগ একটি সম্ভাবনাময় বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। দুনিয়ার অনেক নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই প্রাক্তনীদের বড় রকমের অবদান ছিল এবং আছে। কেবল আর্থিক সাহায্য নয়, যোগাযোগ সৃষ্টিতেও তাঁদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, যে যোগাযোগ আর্থিক সহযোগিতার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য বিদ্যায়তনগুলিকে উদ্যোগী হতে হবে। এই কারণেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উদ্যোগটি কেবল অভিবাদনযোগ্য নয়, একটি কার্যকর দৃষ্টান্তও বটে।

আরও পড়ুন
Advertisement