গত দেড় দশকে ভারতে সর্বমোট বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ১০ লক্ষ। আশা, শুধু ২০২২ সালেই ততগুলি বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রয় হইবে। অদূর ভবিষ্যতে ভারত-সহ গোটা বিশ্বে পেট্রল-ডিজ়েলের ন্যায় জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত গাড়ির পরিবর্তে বৈদ্যুতিক গাড়িই সম্ভবত প্রধান জায়গাটি লইবে। তাহার একটি বড় কারণ, পেট্রল-ডিজ়েলের ক্রমবর্ধমান দাম। একটি সমশক্তিসম্পন্ন পেট্রলচালিত গাড়ির তুলনায় বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে খরচ প্রায় ৮০ শতাংশ কম হয়। তাই, জ্বালানির অগ্নিমূল্যের যুগে দ্বিতীয়টির বিক্রয় বৃদ্ধি অপ্রত্যাশিত নহে। তবে শুধুমাত্র জ্বালানি সাশ্রয় নহে, পরিবেশগত কারণেও বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি প্রয়োজন। বৈদ্যুতিক গাড়ির দূষণ ক্ষমতা কম। লন্ডনের স্থানীয় প্রশাসন একদা স্বীকার করিয়াছিল, রাজধানীর বায়ুদূষণের প্রায় অর্ধেকের জন্যই পথ পরিবহণ দায়ী। সুতরাং, ব্রিটেনে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যাবৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হইয়াছে। ভারতেও দিল্লি, কলিকাতার ন্যায় বৃহৎ শহরগুলিতে বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাইলে মাত্রাছাড়া বায়ুদূষণ কিছু নিয়ন্ত্রিত হইবে। কিন্তু বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব কি না, তাহা প্রশ্নসাপেক্ষ। সাধারণত, এই গাড়িগুলি বিদ্যুতের চাহিদা মিটাইতে স্থানীয় বৈদ্যুতিক পরিকাঠামোকেই ব্যবহার করে। ভারতের ন্যায় দেশে স্থানীয় বৈদ্যুতিক পরিকাঠামো এখনও জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর। সুতরাং, গাড়ি দূষণ কম করিলেও চার্জ দিবার উৎসটি যত ক্ষণ না পরিবেশবান্ধব হইবে, তত ক্ষণ এই গাড়িকে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব বলা অনুচিত। ভবিষ্যতে এই বিষয়ে আরও ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন।
ভারতে বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসার লইয়া ভাবনা নূতন নহে। ২০১০ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার বিদ্যুৎচালিত পরিবহণের উপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়াছিল। ফলত সেই সময় বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রয় যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পরিকল্পনাটি স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়ায় কিছু কাল পরেই বিক্রয়ের রেখাটি মুখ থুবড়াইয়া পড়ে। ২০১৩ সালে ভারী শিল্প মন্ত্রক ‘ন্যাশনাল ইলেকট্রিক মোবিলিটি মিশন প্ল্যান ২০২০’ নামক যে পরিকল্পনা করিয়াছিল, তাহাতে ১৪০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হইয়াছিল ভারতে বিদ্যুৎচালিত পরিবহণের পরিকাঠামো তৈরি ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য। বর্তমান ‘ফেম’ পরিকল্পনাটিও এই মিশনেরই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, জমি পূর্বেই প্রস্তুত হইয়াছিল। তাহার উপরেই দাঁড়াইয়া বিজেপি সরকার সাম্প্রতিক ‘ফেম-২’ পরিকল্পনাটি গ্রহণ করিয়াছে। ইহাতে ভর্তুকি দেওয়া হইতেছে দ্রুত গতির দ্বি-চক্রযান, বাণিজ্যিক পরিবহণ এবং গণ পরিবহণের উপর। দেখা গিয়াছে, পেট্রলচালিত দ্বি-চক্রযানের সঙ্গে ভর্তুকিযুক্ত বৈদ্যুতিক দ্বি-চক্রযানের দামের তফাত অধিক নহে। সুতরাং, স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয়টির প্রতি আগ্রহ বাড়িতেছে। তবে ইহাও সত্য, সামগ্রিক ভাবে এখনও বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রয়মূল্য এক বিরাট সংখ্যক ক্রেতার নাগালের বাহিরে। এবং চার্জিং স্টেশনের অপ্রতুলতাও বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের অন্যতম অন্তরায়। সুতরাং, আগামী দিনে পরিকাঠামো বৃদ্ধি এবং বৈদ্যুতিক গাড়িকে মধ্যবিত্তের আয়ত্তের মধ্যে লইয়া আসিবার সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। একমাত্র তবেই বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে চালকের আসনে বসিতে পারিবে।