kashmir

উপত্যকার বিপদ

গত কয়েক মাসে আততায়ীর লক্ষ্য খানিক পাল্টে গিয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দিকে গুলি ছুটছে, বার বার।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২২ ০৫:০১

কাশ্মীর উপত্যকা যে আবারও কিছু কাল ধরে বধ্যভূমিতে পরিণত, এতে হয়তো নতুন কোনও বিস্ময় নেই। সংবাদ হিসেবেও যেন এর আর তেমন ধার নেই! তবু একটি বিষয় লক্ষণীয়। গত কয়েক মাসে আততায়ীর লক্ষ্য খানিক পাল্টে গিয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দিকে গুলি ছুটছে, বার বার। কখনও রাজস্থান থেকে বদলি হওয়া ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বা স্থানীয় শিক্ষিকা বুলেটবর্ষণে ঝাঁঝরা। কখনও পরিযায়ী শ্রমিক। কখনও বা ওষুধের দোকানদার। সব মিলিয়ে, গত ডিসেম্বর থেকে আজ অবধি ২৯ জন হত, এবং প্রায় সকলেই হিন্দু। অনেকে ভাবতে পারেন, এ আর নতুন কী! কাশ্মীর তো হিন্দুদের পক্ষে বরাবরই বিপজ্জনক, সে দিনই কাশ্মীর ফাইলস সিনেমায় দেখানো হয়েছে, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জঙ্গিরা কেমন বেছে বেছে কোতল করত, হিন্দু পণ্ডিতবেশী অনুপম খেরের শত আর্তনাদেও চিঁড়ে ভিজত না। তবে কিনা— শুভবোধসম্পন্ন ভারতীয় নাগরিক নিশ্চয় জানেন যে, উদ্দেশ্যমূলক প্রচারধর্মী সিনেমা আর কাশ্মীরের বাস্তব এক নয়। পুরনো বিতর্কিত ইতিহাসের গহনে না ঢুকে এইটুকুই বলা যায় যে, কিছু কাল ধরেই হিন্দু পণ্ডিতরা কাশ্মীরে ফিরে গিয়ে ঘরসংসার গুছিয়ে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, সরকারি সহায়তায়। গত দশকে তাঁরা অনেকটা সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরাই আবার উপত্যকা ত্যাগ করতে চাইছেন, এবং বলছেন, নব্বইয়ের দশকেও হয়তো পরিস্থিতি এত খারাপ ছিল না। বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে তাই বর্তমান সরকারের নীতি ও বন্দোবস্তের ভূমিকাটিকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অর্থাৎ, জম্মু-কাশ্মীরকে আলাদা তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে ও ৩৭০ ধারা রদ করে যে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার উপত্যকার পরিস্থিতি পাল্টাতে পারেনি, নিরাপত্তা ফেরাতে পারেনি— কেবল এটুকুই নয়। তার সঙ্গে নতুন করে সেখানকার হিন্দুদের জন্য পরিস্থিতি বিপজ্জনক করে সফল হয়েছে। দিল্লির বিরুদ্ধে রাগকে হিন্দু পণ্ডিতদের বিরুদ্ধে অভিযানে পর্যবসিত করছে। ২০০৮ সাল থেকেই হিন্দু পণ্ডিতরা ফেলে-আসা ভিটেমাটিতে ফিরতে শুরু করেছিলেন। ফিরতে ইচ্ছুক পরিবারগুলির জন্য আর্থিক প্যাকেজ স্থির হয়েছিল। প্রথম পর্বে কোনও অসুবিধা হয়নি, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে পাশাপাশি থাকার ঐতিহ্য বা কাশ্মীরিয়তই যে উপত্যকার ঐতিহ্য— তার নিদর্শনই যেন দেখা গিয়েছিল। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক হিন্দু পণ্ডিত-নিধন যজ্ঞের বিরুদ্ধে যাঁরা মুখর, তাঁরা সকলেই মুসলমান নেতা, কেউ অনন্তনাগের ইমাম, কেউ বা শ্রীনগরের মুফতি। এই গ্রীষ্মেও কাশ্মীর পর্যটক-কাকলিতে পরিপূর্ণ। পর্যটকরা স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা পাননি, এমন দৃষ্টান্ত অনুপস্থিত, অভাবনীয়। কাশ্মীর এই ভাবেই বার বার ইতিহাসকে পিছনে ফেলে এগোতে চায়। আর নেতারা চান কাশ্মীর ফাইলস জাতীয় মন্দ ইতিহাসকে জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক স্বার্থ গুছিয়ে নিতে।

Advertisement

অর্থাৎ নেতারা যেন পণ করেছেন যে, তাঁদের স্বার্থভাবনার বলি যে সাধারণ মানুষ, এ তাঁরা বুঝবেন না। কেন্দ্রের বিভিন্ন নীতিতে অসন্তুষ্ট ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ যে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সমঝোতার রাস্তা থেকে, তাঁরা দেখবেন না। জঙ্গিরা যে আবার হিন্দু পণ্ডিত নিধনে ফিরে দিল্লিকে বার্তা পাঠাতে চায়, তার নিরাময় তাঁরা ভাববেন না। এ যেন এক পা এগিয়ে এসে পাঁচ পা পিছনে ফেরা। এই সামগ্রিক পশ্চাদপসরণের দায় কেন্দ্রীয় সরকারকে নিতেই হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া শান্তির আশা নেই, কিংবা স্থানীয় নেতাদের বন্দি করে রেখে স্থানীয় শান্তি ফেরানো যায় না, বুঝতে হবে। ৩৭০ ধারা বিলোপ করে সমস্যার সমাধান হয়েছে, না কি সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে, বুঝতে হবে। না বুঝলে আলোর পথের আশা ছেড়ে অন্ধকারের পথ ধরেই হাঁটা ভিন্ন গতি নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আরও পড়ুন
Advertisement