Religious politics

সাবধান

তৃণমূল কংগ্রেস রামনবমীর প্রশ্নে গত কয়েক বছর এক বিপজ্জনক রাজনীতি করে এসেছে— বিজেপির হিন্দুত্বকে পাল্টা হিন্দুত্বে প্রতিহত করার চেষ্টার রাজনীতি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:০২

রামনবমীকে কেন্দ্র করে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হতে পারে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে, এই আশঙ্কা এখন কার্যত সর্বজনীন। গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, প্রতি বছরই এই উৎসব উদ্‌‌যাপনে হিন্দুত্ববাদী সুর চড়েছে, বেড়েছে আস্ফালন, হুঙ্কার। তবে এ বছর রাজ্যের গৈরিক নেতারা যে ভঙ্গিতে প্রকাশ্যেই বিভাজনের বার্তা দিয়ে চলেছেন, তা অভূতপূর্ব। আশঙ্কা হয় যে, সেই রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসাবে— সাম্প্রদায়িকতার সুর আরও চড়ানোর উপলক্ষ হিসাবে— রামনবমীর দিনটিই বেছে নেওয়ার চেষ্টা হবে। কারণটি সহজ: বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন, তার আগে শেষ রামনবমী এটিই। ফলে, ভোটের বাজার গরম করার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না অনেকে। প্রতিবেশী বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সামাজিক অস্থিরতা বাড়তি সুবিধা জোগাচ্ছে, সে কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই। আশার কথা, সামাজিক স্তরে যেমন সম্ভাব্য অশান্তি সম্বন্ধে আশঙ্কা তীব্রতর হচ্ছে, রাজনৈতিক স্তরেও তেমনই হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস রামনবমীর প্রশ্নে গত কয়েক বছর এক বিপজ্জনক রাজনীতি করে এসেছে— বিজেপির হিন্দুত্বকে পাল্টা হিন্দুত্বে প্রতিহত করার চেষ্টার রাজনীতি। এ বছরও সে প্রবণতা অব্যাহত। পাশাপাশি, সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বানও শোনা গিয়েছে তাদের মুখে। কংগ্রেস এবং বামপন্থী দলগুলিও তাদের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছে। কিছু বামপন্থী সংগঠন জানিয়েছে, অশান্তি প্রতিহত করার জন্য তারা প্রত্যক্ষ ভাবে সচেষ্ট হবে। আশঙ্কা প্রকাশ করা, বা সম্প্রীতি বজায় রাখার সক্রিয়তায় আদৌ কোনও কাজ হয় কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে একটি কথা বলার— এতে অন্তত গণপরিসরে একটি আলোড়ন উঠছে। গৈরিক বাহিনী অশান্তি তৈরি করার আগে অন্তত এটুকু ভাববে যে, তাদের ছকটি ইতিমধ্যেই মানুষের জানা।

Advertisement

পরিস্থিতি যাতে কোনও মতেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রথমত এবং প্রধানত প্রশাসনের। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এ বছর নতুন কোনও মিছিল বা উদ্‌যাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না। সিদ্ধান্তটি যুক্তিযুক্ত। গৈরিকপন্থীরা নিশ্চিত ভাবেই প্রশ্ন করবেন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠের কি অধিকার নেই নিজেদের মতো করে নিজেদের ধর্মীয় উৎসব পালন করার? এর প্রশাসনিক উত্তরটি স্পষ্ট— যেখানে গোলমালের আশঙ্কা এতই প্রকট, সেখানে নতুন করে গজিয়ে ওঠা উৎসব পালনের আকাঙ্ক্ষাকে অন্তত একটি বছরের জন্য প্রশ্রয় না দেওয়াই বিধেয়। যে মিছিলগুলি অনুমতি পাচ্ছে, সেগুলি থেকেও যাতে অশান্তি ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। গত কয়েক বছরে সশস্ত্র মিছিল রামনবমীর বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগেভাগেই তা ঠেকাতে হবে। রাজ্যের সীমানা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে অস্বাভাবিক বহিরাগত অনুপ্রবেশ না ঘটে। পাশাপাশি লাগাতার প্রচার চালিয়ে যেতে হবে, যাতে কেউ কোনও উস্কানিতে পা না দেন।

দায়িত্ব সাধারণ মানুষেরও। কোনও প্রশ্নেই সামাজিক-সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা যে রাজ্যের সার্বিক স্বার্থের অনুকূল নয়, এ কথাটি মনে রাখতে হবে। এমনকি, যে ধর্মের রাজনীতি এই অশান্তি তৈরি করবে, সে ধর্মাবলম্বীরাও শেষ পর্যন্ত এই অশান্তিরই শিকার হবেন। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে সামাজিক সংহতি এখনও তুলনামূলক ভাবে বেশি। সেই সামাজিক স্থিতিশীলতাকে রক্ষা করা রাজ্যবাসীর কর্তব্য। আরও একটি কথা রাজ্যের মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। বাঙালি হিসাবে তাঁদের যে পরিচিতি, তার কিছু দিক্‌চিহ্ন রয়েছে। রাম আদৌ এ রাজ্যের পূজ্য দেবতা ছিলেন কি না, আপাতত সে তর্কে ঢোকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু, উত্তর ভারতীয় গন্ধমাখা রামনবমী এ রাজ্যের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নয়, কোনও দিন ছিল না। সে সংস্কৃতি আমদানি করা হয়েছে। এবং, তা সাধু উদ্দেশ্যে নয়। উগ্রতার এই ফাঁদটিকে এড়িয়ে চলা রাজ্যবাসীর কর্তব্য।

Advertisement
আরও পড়ুন