USA Presidential Election

তর্কে মিলায় বস্তু?

১১ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার বিতর্কসভার শেষে সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষা বলছে, কমলা হ্যারিস আছেন উপরে। অনুষ্ঠানের পর দেশের অধিকাংশ ভোট সমীক্ষাতেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় এগিয়ে গিয়েছেন কমলা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০০

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে। ১১ সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার বিতর্কসভার শেষে সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষা বলছে, কমলা হ্যারিস আছেন উপরে। জানা গিয়েছে, অনুষ্ঠানের পর দেশের অধিকাংশ ভোট সমীক্ষাতেই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুলনায় এগিয়ে গিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী। অথচ গত জুনেই চিত্রটি ছিল উল্টো। প্রথম দফার বিতর্কসভায় ট্রাম্পের হাতে কার্যত নাস্তানাবুদ হন ও প্রেসিডেন্ট পদের দৌড় থেকে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান তৎকালীন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী তথা বর্তমান আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অগস্টে তাঁর স্থানে সর্বসম্মতিক্রমে মনোনীত হন বিদায়ী ভাইস-প্রেসিডেন্ট হ্যারিস। নির্বাচনী দৌড়ে এত দেরিতে যোগ দেওয়ার ফলে সাম্প্রতিক বিতর্কসভার আগে হ্যারিসের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল দু’টি— এক, ট্রাম্পের সঙ্গে এই দ্বৈরথে পূর্বসূরির চরম ব্যর্থতার স্মৃতি মুছে ফেলা, এবং দুই, প্রেসিডেন্ট পদের যোগ্যতম প্রার্থী হিসাবে নিজেকে পেশ করা।

Advertisement

বিতর্কসভায় ট্রাম্পের পরিকল্পনা ছিল তাঁকে বাইডেন সরকারের আপত্তিকর জমানার অদক্ষ উত্তরসূরি হিসাবে তুলে ধরা। দেশের মন্থর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, অবৈধ অভিবাসন, সীমান্ত সমস্যা এবং আফগানিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ার ব্যর্থতা নিয়ে নানা ভাবে হ্যারিসকে খোঁচা দেন তিনি। সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি, উল্টে হ্যারিসের কৌশলী বক্তব্যে ধরাশায়ী হয়ে পড়েন প্রাক্তন প্রেসিডেন্টই। আদালত কক্ষে যে দক্ষতায় নিজের পক্ষে সওয়াল-জবাব করেন কৌঁসুলি হ্যারিস, ঠিক সেই দক্ষতাতেই গর্ভপাতের অধিকার-সহ বিবিধ বিষয়ে ট্রাম্পকে পিছিয়ে যেতে তিনি বাধ্য করলেন। ট্রাম্পকে ক্রমাগত নিজের জালেই এমন ভাবে জড়ান তিনি যে এক সময় অবৈধ অভিবাসীদের স্থানীয়দের পোষ্য খেয়ে ফেলার মতো ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিল না ট্রাম্পের কাছে। অন্য দিকে, সংযত হ্যারিস তাঁর বক্তব্যে আমেরিকার ভবিষ্যতের উপরে জোর দিয়ে ক্ষুদ্র শিল্পকে সহায়তা প্রদান, জীবনযাত্রার ব্যয় হ্রাস-সহ মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার পক্ষেই সওয়াল করেন।

এই ধরনের বিতর্কের ফলাফল আখেরে ভোটের আবহকে প্রভাবিত করতে পারে কি না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। তবে একটি কথা অনস্বীকার্য। সুস্থ বিতর্কের ঐতিহ্য এখন বিনষ্টপ্রায়, বিশ্বব্যাপী সমাজমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের প্রতাপে তর্কের থেকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণানো ও তাকলাগানো মুহূর্ত তৈরিতেই রাজনীতিকরা বেশি ব্যস্ত থাকেন। ট্রাম্প এই ধারার রাজনীতির অন্যতম পুরোধা। হ্যারিস কিন্তু দেখিয়ে দিলেন, কী ভাবে সুস্থ, সংযমী কিন্তু কৌশলী তর্কে কেবল নিশ্চিত ভোটদাতাদের আশ্বস্ত করা যায় না, সংশয়াচ্ছন্ন ভোটারদেরও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা যায়। হ্যারিসের কাছে মাত হওয়ার পরে ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থীর সঙ্গে আর কোনও বিতর্কসভায় যোগ দেবেন না তিনি। সাফল্যের সুবাদে বাড়তি আত্মবিশ্বাস পেলেন হ্যারিস ও ডেমোক্র্যাটরা। অন্য দিকে দেখা গেল, ট্রাম্পের উপরে দ্বিতীয় বার আততায়ী হামলার প্রয়াস হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইকে আরও নাটকীয় করে তুলছে।

আরও পড়ুন
Advertisement