Terrorist Attack in Jammu and Kashmir

ভয়ঙ্কর

পহেলগামের কাছে বৈসরন উপত্যকায় এক অভূতপূর্ব অমানবিকতার নজির তৈরি করল এ বারের ইসলামি জঙ্গিরা, যাদের দায় নিয়েছে লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফোর্স (টিআরএফ)।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:১৮

সাড়ে সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসে সন্ত্রাসে পর্যুদস্ত কাশ্মীর, কিন্তু তবু জানা ছিল না যে, এ বারের জঙ্গি হামলা এ-যাবৎ সমস্ত অভিজ্ঞতাকে ছাপিয়ে যাবে— ভয়াবহতায়, উন্মাদ হিংস্রতায়। পহেলগামের কাছে বৈসরন উপত্যকায় এক অভূতপূর্ব অমানবিকতার নজির তৈরি করল এ বারের ইসলামি জঙ্গিরা, যাদের দায় নিয়েছে লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফোর্স (টিআরএফ)। ইতিমধ্যে ভেসে আসা ছবি ও খবর গোটা দেশের মানুষের রাতের ঘুম উড়িয়ে দেওয়ার মতো। পর্যটকদের উপর এমন সরাসরি গুলিচালনা এর আগে ঘটেনি, বেছে বেছে ধর্ম জেনে নিয়ে নিধন— এও নয়। মানবিকতার শেষ লেশ পর্যন্ত বিলোপ হয়ে গেলে তবেই এমন নারকীয় সংহার করা যায়। পার্বত্য বনান্তে বরফের আভা এখনও মেলায়নি, বসন্তের শিহরন ধরেছে উইলো গাছের সারিতে: দেখতে গিয়েছিলেন প্রবীণ ভ্রমণপিপাসু কিংবা নববিবাহিত দম্পতি। এত মনোহরা প্রকৃতির ফাঁকে ফাঁকে লুকিয়ে থাকতে পারে এমন জিঘাংসু মানবপ্রবৃত্তি, তাঁরা জানতেন না। জঙ্গিরা নিজেরাই ধর্মপরিচয় দিয়ে বলার চেষ্টা করেছে তাদের কাছে এ হল ধর্মের জিঘাংসা। ধিক সেই আত্মপ্রবঞ্চনাকারী ‘ধর্মবোধ’কে: পৃথিবীর কোনও ধর্ম নিরীহ সাধারণ মানুষের প্রাণের বিনাশ চাইতে পারে না। প্রকৃত অর্থে, এই সন্ত্রাস আদ্যন্ত রাজনৈতিক, তাই তারা কাউকে হত্যা করে পাশের সঙ্গীকে বলতে পারে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে খবর দিতে। ধিক সেই ‘রাজনীতিবোধ’কে, যা এমন নৃশংস পথে বার্তা প্রেরণ করতে চায়।

এই সন্ত্রাসকে রাজনৈতিক বলে দেখতে হবে নানা কারণেই। বড় মাপের জঙ্গি আক্রমণ যে আসতে পারে, কাশ্মীরের খবরাখবর যাঁরা রাখেন, অনেকেই সেই অনুমান করছিলেন। ছোট ছোট হামলা লেগেছিল গত বছরখানেক ধরে। বয়ে চলেছিল উপত্যকার মানুষের ক্ষোভধারা। আগে বার বার দেখা গিয়েছে, উপত্যকার সাধারণ মানুষ জঙ্গি কাজকর্মে শামিল থাকেন না, কিন্তু তাঁদের ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসবাদীরা আক্রমণ শাণায়। ৩৭০ ধারা বিলোপের তীব্র দমনাত্মক ইতিহাস, কেন্দ্রীয় শাসনে কাশ্মীর অস্মিতার অবমাননা, বহিরাগতদের জমি কেনাকাটা ও স্থানীয় অধিবাসীদের প্রতি অবজ্ঞা ও অমর্যাদার ধারাবাহিক অভ্যাস— এ সবের ফলে ক্ষোভের উদ্গিরণ টের পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগাগোড়া নিজেদের পিঠ চাপড়াতে ব্যস্ত থেকেছেন, উপত্যকা কত ‘স্বাভাবিক’ ও সুষ্ঠু ভাবে চালিত, সেই দাবি করে গিয়েছেন। এক বিরাট মাপের প্রশাসনিক ভ্রান্তি ছিল এর মধ্যে। কাশ্মীরের শান্ত পরিস্থিতি যদি তাঁদের কৃতিত্ব হয়, তবে সঙ্কট ঘটলেই তাকে অন্যদের ব্যর্থতা বলা হবে কেন? মাত্র কয়েক জন জঙ্গি এসে সেনার বেশে পর্যটকদের উপর এত বড় হামলা চালিয়ে গেল— এ কি দেশের গোয়েন্দা দফতরের আকাশছোঁয়া ব্যর্থতা নয়? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া কে এই দায় গ্রহণ করবেন? অথচ, দেশের সীমাহীন দুর্ভাগ্য, এই দাবি তোলার মতো বিরোধী নেতৃত্বও বর্তমানে অনুপস্থিত।

এক দিকে শাসকের সংখ্যালঘুবিরোধী রাজনীতির ক্রমান্বিত আঘাত, অন্য দিকে বিরোধীদের দিশাহীন রাজনীতি, এর মধ্যে এই জঙ্গি হানা গোটা দেশেই সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের নতুন স্রোত তৈরি করে দিয়ে গেল। সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিস্ফোরণ বলে দিচ্ছে, কতটাই সফল তারা। ধর্মের নামে সন্ত্রাস হলেও ধর্মের সঙ্গে যে সন্ত্রাসের কোনও যোগ নেই, ক্রোধান্ধ মানুষ যেন তা ভুলতে বসেছে। আরও এক রকমের প্রাণঘাতী অবিশ্বাস তারা তৈরি করে দিয়ে গেল, অন্তত সাময়িক ভাবে— তা কাশ্মীর বিষয়েই। কাশ্মীরের সত্তা আরও এক বার নতুন করে সংশয়ের গভীরে তলিয়ে গেল। সেখানকার সাধারণ মানুষের রুজি-রোজগার, জীবনসংস্থানে এল চরম আঘাত। দরিদ্র পাহাড়ি উপত্যকা আজ হতাশায় স্তব্ধ, আতঙ্ককোষ্ঠে অবরুদ্ধ।

আরও পড়ুন