Unemployment

অর্থব্যবস্থার অসুখ

কর্মসংস্থানের প্রশ্নটির রাজনৈতিক গুরুত্ব কেন্দ্রীয় শাসকরা বিলক্ষণ জানেন। গত দশ বছরে যে হাঁড়ির হাল হয়েছে, তা ধামাচাপা দিতে দেশ জুড়ে রোজগার মেলা ইত্যাদির আয়োজন হচ্ছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৮

—প্রতীকী ছবি।

আবারও দশ শতাংশের চৌকাঠ অতিক্রম করল দেশে সার্বিক বেকারত্বের হার। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি-র (সিএমআইই) প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে, গ্রামাঞ্চলে সেই হার আরও খানিক বেশি। এ বছরের গোড়া থেকে বেকারত্বের হার মোটামুটি সাত থেকে আট শতাংশের গণ্ডিতে ঘোরাফেরা করছিল, অক্টোবরে তা বেশ অনেকখানিই বাড়ল। অবশ্য, তা নিয়ে বিস্ময়ের বিশেষ অবকাশ নেই। ভারতে কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান, পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে-র লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট-এর পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট। কিন্তু, যাঁরা কাজ খুঁজছেন, তাঁদের শ্রমশক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার মতো জোর অর্থব্যবস্থার নেই। ভারতে কর্মসংস্থানের সিংহভাগই হয় অসংগঠিত ক্ষেত্রে— প্রতি সাত জন কর্মরত ভারতীয়র মধ্যে ছ’জনই কাজ করেন এই গোত্রের ক্ষেত্রে। ফলে, ভারতের কর্মসংস্থানের অধোগতির খোঁজ করতে হলে অসংগঠিত ক্ষেত্রের দিকে তাকাতেই হবে। একাধিক অর্থনীতিবিদের মতে, ভারতে সংগঠিত ক্ষেত্র অতিমারির ধাক্কা সামলে উঠতে পারলেও অসংগঠিত ক্ষেত্রের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। তার প্রভাব পড়ছে কর্মংস্থানের হারেও। কিন্তু, ধাক্কার সূত্রপাত ঘটেছে অতিমারির ঢের আগেই। নরেন্দ্র মোদীর সরকার অর্থব্যবস্থার উপরে বহুবিধ ভুল সিদ্ধান্তের বোঝা চাপিয়েছে গত দশ বছরে— তার মধ্যে অসহতম বোঝাটি চাপানোর সাত বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ, ৮ নভেম্বর। ২০১৬ সালে এই দিনটিতেই প্রধানমন্ত্রী নোট বাতিলের ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করেছিলেন। যে দেশের অর্থব্যবস্থার সিংহভাগ অসংগঠিত, এবং সেই ক্ষেত্রটির মূল চালিকাশক্তি হল নগদ— সেই দেশে কয়েক ঘণ্টার নোটিসে মোট নগদের ৮৫ শতাংশ প্রত্যাহার করে নিলে সে দেশে যে বিপুল অভিঘাত সৃষ্টি হবে, তা সহজবোধ্য। শাসকরা বোঝেননি, তা অন্য কথা। কিন্তু, নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের ধাক্কা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ ভারতের অসংগঠিত ক্ষেত্র পায়নি। ছ’মাসের মাথায় তড়িঘড়ি জিএসটি ব্যবস্থা চালু হল, যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়াই। তার ধাক্কা লাগল অর্থব্যবস্থার গায়ে। তার থেকে সম্পূর্ণ নিস্তার পাওয়ার আগেই এল অতিমারি। এক ধাক্কা থেকে অন্য ধাক্কায় জেরবার অর্থব্যবস্থায় যে যথেষ্ট কর্মসংস্থান হবে না, তাতে সন্দেহ থাকার কথা নয়।

Advertisement

কর্মসংস্থানের প্রশ্নটির রাজনৈতিক গুরুত্ব কেন্দ্রীয় শাসকরা বিলক্ষণ জানেন। গত দশ বছরে যে হাঁড়ির হাল হয়েছে, তা ধামাচাপা দিতে দেশ জুড়ে রোজগার মেলা ইত্যাদির আয়োজন হচ্ছে। কিন্তু, নেহাত অন্ধ ভক্ত ছাড়া সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করবেন যে, কয়েক লক্ষ সরকারি চাকরি দিয়ে (যার মধ্যে আবার সিংহভাগই পুরনো পদ— কর্মী অবসর নেওয়ায় স্বাভাবিক নিয়মেই আসন খালি হয়েছে, এবং স্বাভাবিক নিয়মেই তাতে নতুন নিয়োগ হত) দেশজোড়া বেকারত্বের সমস্যার সমাধান করা যায় না। তার জন্য অর্থব্যবস্থার স্বাস্থ্যোদ্ধার করতে উদ্যোগী হতে হয়। সে কাজে পরিশ্রম আছে, ফলে কেন্দ্রীয় সরকার সে দিকে তাকাতে বিশেষ ইচ্ছুক নয়। বেহাল অর্থনীতি সংক্রান্ত যে কোনও প্রশ্নেই অতিমারির দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে দেওয়া যায়। কিন্তু, যে কথাটি কেন্দ্রীয় নেতারা ভুলিয়ে দিতে চান, তা হল, অতিমারি আরম্ভ হওয়ার আগেই অর্থব্যবস্থার বৃদ্ধির হার পড়তির দিকে ছিল, চাহিদা তলানিতে এসে ঠেকেছিল, গ্রামীণ ভারতে প্রকৃত ভোগব্যয় কমছিল। অর্থব্যবস্থার মূল সমস্যা তো অতিমারির ফলে ঘটেনি, তার সূত্রপাত অনেক আগেই হয়েছিল। ফলে, সমাধানের চেষ্টাও দীর্ঘমেয়াদি হওয়া বিধেয় ছিল। অসংগঠিত ক্ষেত্রের জন্য বিশেষ ভাবনা, প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থানের প্রয়াস, বিশেষত অতিমারির সময়ে চাহিদা বাড়াতে নগদের সংস্থান ইত্যাদি নীতির প্রয়োজন ছিল। তার কিছুই না করে শুধুমাত্র অসুখ লুকানোর চেষ্টা করে গেলে সমস্যা বাড়বেই। বেকারত্বের বর্ধমান হার তার একটি প্রকাশমাত্র।

আরও পড়ুন
Advertisement