Central Scheme

ছেলেখেলা

গত বছর কেন্দ্র টাকা বন্ধ করার পরে রাজ্য সরকার কাজ দিতে পেরেছিল বিয়াল্লিশ লক্ষ কর্মপ্রার্থীকে। লক্ষ্যপূরণের যে মাত্রা দেখা যাচ্ছে, তাতে এ বছরও সংখ্যার বৃদ্ধি আশা করা কঠিন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৩১

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তার কেন্দ্রীয় প্রকল্প বন্ধ থাকার ক্ষতি রাজ্যের দ্বারা পূরণ করা দুঃসাধ্য হবে, এমন আশঙ্কা ছিলই। এ বার মিলল পরিসংখ্যান। রাজ্যের টাকাতেই হবে একশো দিনের প্রকল্পের কাজ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণার পরে রাজ্য সরকারের সব ক’টি দফতরের কাছে নির্দেশ গিয়েছিল, জব কার্ডে করার মতো কাজ কাকে কত তৈরি করতে হবে। সংবাদে প্রকাশ, লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছে মাত্র দুটো দফতর, পঞ্চায়েত এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি। পিডব্লিউডি, সেচ প্রভৃতি দফতর লক্ষ্যের এক-চতুর্থাংশেও পৌঁছতে পারেনি। এ বছর একুশে অগস্টের মধ্যে পঞ্চাশ লক্ষ শ্রমিককে কাজ দেওয়ার কথা ছিল; কাজ পেয়েছেন মাত্র আটাশ লক্ষ। কেন্দ্রের তথ্য, ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২, এই দুই অর্থবর্ষে রাজ্যের এক কোটিরও বেশি গ্রামবাসী কাজ পেয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পে, চার লক্ষেরও বেশি পরিবার একশো দিন কাজ সম্পূর্ণ করতে পেরেছিল। আর, গত বছর কেন্দ্র টাকা বন্ধ করার পরে রাজ্য সরকার কাজ দিতে পেরেছিল বিয়াল্লিশ লক্ষ কর্মপ্রার্থীকে। লক্ষ্যপূরণের যে মাত্রা দেখা যাচ্ছে, তাতে এ বছরও সংখ্যার বৃদ্ধি আশা করা কঠিন। একুশে জুলাই কলকাতার দলীয় সভায় মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বিকল্প প্রকল্পের নাম দিয়েছেন, ‘খেলা হবে’। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, এ খেলা কার সঙ্গে, কেনই বা? রাজ্যের নেতারা কেন্দ্রের প্রতিস্পর্ধী হয়ে ‘খেলা’ করতে নামলে উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে বিপর্যস্ত এগরা থেকে শুরু করে মিজ়োরামে দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের শোকে নিথর মালদহের গ্রাম, সর্বত্র শোনা গিয়েছে একশো দিনের কাজের অভাবে বিপন্নতার কথা।

Advertisement

কাজ তৈরিতে এই ঘাটতি প্রত্যাশিতই ছিল। যে কোনও সরকারি প্রকল্পের নির্মাণ বস্তুত একটি গাছের বীজ থেকে মহীরুহ হয়ে ওঠার মতো— তেমন ভাবেই নির্দিষ্ট এবং অনিবার্য প্রক্রিয়ায় ঘটে তার সূচনা, বৃদ্ধি এবং ফলদান। যে ফলের সম্ভাবনা নিয়ে সে জন্মেছে, প্রকল্প সেই ফলই দেয়। প্রচলিত প্রকল্পগুলির উপরে অন্য প্রকল্পের লক্ষ্য চাপিয়ে দেওয়া গাছের ডালে চিনা লণ্ঠন ঝুলিয়ে দেওয়ার মতো। তা বাইরে থেকে দেখতে বেশ, কিন্তু ফুল-ফল যেমন গাছের অন্তরের রসে পুষ্ট হয়, আরোপিত বস্তু তা হবে না। সেচ, পূর্ত, কৃষি বা মৎস্য দফতরের প্রকল্পগুলি তাদের নিজের লক্ষ্যে, নিজের প্রয়োজনে নির্মিত, সেখানে জব কার্ডের বোঝা চাপাতে চাইলে তারা গ্রহণ করতে পারবে কেন? প্রতিটি বিভাগেরই কাজের নিজস্ব ধারা রয়েছে, তা থেকে অন্য দিকে সম্পদ বা শক্তি ঘোরাতে চাইলে আখেরে লাভের চাইতে ক্ষতি বেশি।

গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পটিও একটি বিশেষ আদর্শ ও ভাবনার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। মজুরি পাওয়াই কেবল নয়, নিজের গ্রামের পথ নির্মাণ, পুকুর খনন, বনসৃজন ‘গ্রামবাসীর দ্বারা গ্রাম পরিকল্পনা’-র অঙ্গ। এই সামগ্রিক ভাবনা থেকে কেবল শ্রমশক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে, ঠিকাদারের অধীনে তাকে নিয়োগ করলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে গ্রামবাসীর সম্পর্কটি হয়ে দাঁড়ায় মালিক-শ্রমিকের। এ-ও এক মস্ত ক্ষতি। সংবিধানে বিধৃত মূল্যবোধ, এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আইন ও নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে রাজ্যের যে কোনও প্রকল্পকে। না হলে প্রকল্প ঘোষণা নেহাত ছেলেখেলা হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন
Advertisement