Cleanliness

দায়সারা

সদিচ্ছা এবং উদ্যোগ থাকলে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজটি যে সম্ভব, তারও প্রমাণ আছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৫০

—প্রতীকী ছবি।

কাকে বলে সৌন্দর্যায়ন? তার মধ্যে তো শহরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকটিতে নজর দেওয়াও পড়ে? তা হলে কলকাতার ‘সৌন্দর্যায়ন’-এ বিশ্বাসী প্রশাসনকে ব্যর্থ বলতে হয়। কলকাতা শহরের বিভিন্ন রাস্তা, বিশেষত ফুটপাত এবং একাধিক উড়ালপুলের নীচের অংশের পরিস্থিতি দেখে বোধ হয় না যে, পুর-প্রশাসনের আদৌ এই বিষয়ে কোনও ভাবনা আছে। মশার বাড়বাড়ন্ত থেকে একের পর এক অসুখের প্রকোপ বাড়ছে। এই মরসুমে ডেঙ্গির কবলে পড়েছে শহরের বিভিন্ন অংশ। অথচ, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় প্লাস্টিকের ছাউনিতে বৃষ্টির জল জমে তাতে এন্তার মশার লার্ভা জন্মাচ্ছে। এই জল জমার পরিণতি কী হতে পারে, পুর-প্রশাসনের কি তা অজানা? গড়িয়াহাটের অগ্নিকাণ্ড-পরবর্তী কালে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ফুটপাত থেকে প্লাস্টিকের ছাউনি তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই কাজ বিশেষ এগোয়নি। সম্প্রতি মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার আশ্বস্ত করেছেন, পুরসভা সমস্ত রাস্তার দোকান থেকে ধাপে ধাপে প্লাস্টিকের ছাউনি সরিয়ে ফেলবে। যেখানে সমস্যা এবং সমাধানের পথটি জানা, সেখানেও যদি এখনও কাজ প্রতিশ্রুতির স্তরেই আটকে থাকে, কাজটি আদৌ হবে তো?

Advertisement

সমস্যা শুধুমাত্র প্লাস্টিক ছাউনি ঘিরেই নয়। কলকাতার ফুটপাত এবং রাস্তা অসংখ্য মানুষের বাসস্থানও বটে। তাঁদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য বস্তু, বাতিল ফ্লেক্স, প্লাস্টিকের বোতল, কাচের শিশি, কাঠের টুকরোর ছড়িয়ে থাকা— এই শহরের চিরপরিচিত ছবি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই বছরের গোড়ার দিকে কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, তিনি শহরের পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে বলেছেন, ফুটপাতে বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে তাঁদের আশ্রয়হীনদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় প্রেরণ করতে। সেই কাজ কত দূর অগ্রসর হয়েছে? অভিযোগ, মেয়রের এ-হেন নির্দেশের পরও বহু জায়গায় পুলিশ আসে, রাস্তার বাসিন্দাদের শুধুমাত্র নামটুকু লিখেই বিদায় নেয়। ফুটপাত দখলমুক্ত করা, সেখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি প্রশ্ন রাজনৈতিক এবং পরিকাঠামোগত কারণে বড়। এই মুহূর্তে সেই প্রশ্নের সার্বিক ও সুসংহত উত্তর খোঁজার মতো অবস্থায় যদি পুরসভা বা সরকার না-ও থাকে, তার জন্য শহরের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত
করার কাজটি আটকে থাকতে পারে না। ফুটপাতে বাধাহীন ভাবে হাঁটার অধিকারের দাবি যদি নাগরিকরা আপাতত ত্যাগও করেন, সেখানে জমে থাকা নোংরায় জন্মানো মশার কামড় খেতে তাঁদের বাধ্য করা চলে না।

সদিচ্ছা এবং উদ্যোগ থাকলে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার কাজটি যে সম্ভব, তারও প্রমাণ আছে। কলকাতার গুরুদ্বারগুলিকে পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সমাজ অনেকটাই এগিয়ে, এ দিকে সেই একই ছবি শহরের অন্যান্য ধর্মস্থানে অনুপস্থিত। যেখানে প্রতি বছর ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধিতে জনস্বাস্থ্য বিপর্যস্ত হয়, সেখানে পরিচ্ছন্নতার মূল বিধিগুলির প্রতি যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। পুর-প্রশাসনকে এই বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট দল তৈরি করতে হবে, যাঁরা সারা বছর ধরে কাজটি করবেন। নিয়ম-অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তি বিধানও জরুরি। শুধুমাত্র জল জমার ক্ষেত্রগুলিকে নির্দেশ করে এবং নাগরিক অসচেতনতার দোহাই দিয়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় না।

আরও পড়ুন
Advertisement