Sonia Gandhi

অগণতান্ত্রিক

সনিয়া গান্ধী তাঁর চিঠিতে ন’টি জরুরি বিষয়ের উল্লেখ করে বলেছেন যে, সংসদের অধিবেশনে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হোক।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:০৬
sonia gandhi.

সনিয়া গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

বিরোধী পক্ষের সংসদীয় দলের সভানেত্রী চিঠি লিখেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে; আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কী কী বিষয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন, তার একটি তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন। ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র’-র পক্ষে এর চেয়ে চমৎকার বিজ্ঞাপন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে, অধিকাংশ বিজ্ঞাপনের মতোই এটিও যতখানি সত্য প্রকাশ করে, গোপন করে তার চেয়ে ঢের বেশি। প্রথম সত্য হল, হঠাৎ বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হল কেন, সে সম্বন্ধে বিরোধী দলগুলি দীর্ঘ দিন সম্পূর্ণ অন্ধকারে রইল। বহু পরে সরকারি ভাবে কর্মসূচি জানানো হলেও সে অন্ধকার খুব কাটল না। গণতন্ত্রের মূল কথা হল আলোচনার ভিত্তিতে শাসন— দেশের পরিচালনা পদ্ধতি সম্বন্ধে নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা। যেখানে সরকারপক্ষ একটি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করার আগে বিরোধী দলের সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করারও প্রয়োজন বোধ করে না, সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে গণতন্ত্রের ধারণাটিকেই প্রহসন মনে হয়। ঘটনা হল, বর্তমানে সংসদে বিজেপির যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাতে বিরোধী বা শরিক, কোনও পক্ষের মতামতের তোয়াক্কা না করেই দেশ পরিচালনা করা সম্ভব। কিন্তু যা সম্ভব, তার সমস্তটাই উচিত নয়। বিরোধী পক্ষকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করার এই অভ্যাসটিই যেমন ভয়ানক রকম অনুচিত। জি২০-র আসরে বিশ্বনেতাদের সামনে প্রধানমন্ত্রী যতই গণতন্ত্র নিয়ে গর্ব প্রকাশ করুন, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার সু-অভ্যাসটি নাগপুরের পাঠশালায় তাঁরা রপ্ত করেননি। ফলে, ১৮ তারিখ থেকে যে অধিবেশন শুরু হবে, তার আলোচ্যসূচি এখনও কেউ জানে না। তবে একটি আশঙ্কা দেশবাসীকে ঘোর উদ্বেগে রেখেছে— দেশের নাম পাল্টানোর জন্যই এই অধিবেশন নয় তো?

Advertisement

সনিয়া গান্ধী তাঁর চিঠিতে ন’টি জরুরি বিষয়ের উল্লেখ করে বলেছেন যে, সংসদের অধিবেশনে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হোক। সেই বিষয়গুলিই এই মুহূর্তে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য কি না, তা নিয়ে তর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু যা তর্কাতীত, তা হল, কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই এই সংসদে আলোচনা হয় না। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিল কার্যত বিনা আলোচনায় পাশ হয়ে যায়— কয়েক বছর আগেও অধ্যাদেশ জারি করে দেশ পরিচালনা কার্যত সরকারের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল— গণতান্ত্রিক অংশীদারির ধারণাটিকে অত্যন্ত সচেতন ভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। যে প্রশ্ন কোনও আইন সংক্রান্ত নয়, কিন্তু দেশের স্বার্থেই যে বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন, সরকারপক্ষকে সেই আলোচনায় রাজি করানোও কার্যত অসম্ভব। মণিপুরের অচলাবস্থাই হোক অথবা চিনের ভারতীয় জমি দখলের অভিযোগ, অথবা কোনও এক বিশেষ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ, কোনও প্রশ্নই সরকার আলোচনা করতে নারাজ। ফলে, সংসদের অধিবেশনগুলি প্রকৃত প্রস্তাবে নিতান্ত অবান্তরের উদ্‌যাপন হয়ে দাঁড়ায়।

গণতন্ত্রের প্রতি এই অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের দায়টি কার্যত সম্পূর্ণ ভাবেই সরকারপক্ষের। এক দশক আগে, কেন্দ্রে যখন দ্বিতীয় দফার ইউপিএ সরকার ক্ষমতায়, তখন বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল ছিল সংসদ অচল করে দেওয়া। যে প্রশ্নের উত্তর সংসদের অভ্যন্তরে আলোচনার মাধ্যমে সন্ধান করা বিধেয় ছিল, সুতীক্ষ্ণ ভাষণে সরকারপক্ষকে নাজেহাল করে তাকে যথাযথ পথে হাঁটতে বাধ্য করা উচিত ছিল, বিজেপি সেই প্রশ্নগুলিকেই ব্যবহার করে সংসদ অচল করে দিত। আর, ক্ষমতায় আসার পর থেকে সংসদে আলোচনার প্রক্রিয়াকে কার্যত বাতিল করে দিয়েছে তারা। সবচেয়ে বড় কথা, যে দল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ‘মৌনমোহন’ বলে ব্যঙ্গ করত, তাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে কথা বলেছেন তাঁর পূর্বসূরির অর্ধেকেরও কম। কাজেই, বিশেষ অধিবেশনে গণতন্ত্রের উদ্‌যাপন ঘটবে, সেই দুরাশা পোষণ না করাই ভাল।

আরও পড়ুন
Advertisement