Gujarat High Court

‘না’ মানে না-ই

বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের পর্যায়ভুক্ত না করার পক্ষে ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি ছিল— এতে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে এবং স্বামীদের হেনস্থা করার জন্যও এটি একটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০৬
Gujarat High Court

গুজরাত হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

ধর্ষণ ধর্ষণই, সেটা অন্য কোনও পুরুষই করুক, অথবা নিজ ‘স্বামী’। এবং সেই ধর্ষণের জন্য ধর্ষণকারী পুরুষটি ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি পাওয়ার অধিকারী। সম্প্রতি এই সুরেই স্পষ্ট ভাষায় রায় দিয়েছে গুজরাত হাই কোর্ট। যে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ-হেন রায়, সেখানে অভিযোগকারিণী স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগের পাশাপাশি স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে গার্হস্থ হিংসার অভিযোগও এনেছেন। জানিয়েছেন, তাঁদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি তাঁর স্বামী মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করতেন এবং পর্নোগ্রাফিক ওয়েবসাইটে সেগুলি বিক্রি করে উপার্জন করতেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় তাঁর স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়িকে। সম্প্রতি মেয়েটির শাশুড়ি জামিনের আবেদন করেছিলেন হাই কোর্টে। সেই আবেদন খারিজ করেছেন গুজরাত হাই কোর্টের বিচারপতি দিব্যেশ জোশী। উদাহরণ-সহ দেখিয়েছেন আমেরিকার ৫০টি প্রদেশ, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জ়িল্যান্ড, কানাডা, এবং অন্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে বৈবাহিক ধর্ষণ আইনসিদ্ধ নয়। সুতরাং, ভারতীয় দণ্ডবিধিতে ব্যতিক্রম যা-ই থাকুক না কেন, নারীর অসম্মতিতে তাঁর সঙ্গে যে কোনও বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন ধর্ষণই।

Advertisement

রায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী নারীর অসম্মতিতে সমস্ত ধরনের যৌন সম্পর্ক স্থাপনকেই ধর্ষণের আওতাভুক্ত করা হয়েছে এবং তদনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম ২-এর আওতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে স্বামীকে। সুতরাং, বৈবাহিক ধর্ষণকে ‘ধর্ষণ’ বলা যায় কি না, সেই বিষয়ে অস্পষ্টতা এখনও যথেষ্ট। প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই ইলাহাবাদ হাই কোর্ট ঠিক এর বিপরীত রায় দিয়েছিল। সেখানে দেশে এখনও যে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের তালিকাভুক্ত করা হয়নি, সেই প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছিল, স্ত্রী’র বয়স যদি আঠারো বা তার অধিক হয়, তবে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ বলা যাবে না। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও স্পষ্ট করা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সি স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর স্বামীর যৌন সম্পর্ক স্থাপন ধর্ষণের সমতুল্য হবে। বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনের দৃষ্টিতে ‘ধর্ষণ’ বলে গণ্য করার আবেদন সংক্রান্ত মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।

বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের পর্যায়ভুক্ত না করার পক্ষে ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি ছিল— এতে বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে এবং স্বামীদের হেনস্থা করার জন্যও এটি একটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে। সবিনয়ে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, অপপ্রয়োগের ভয়ে কোনও শারীরিক বা মানসিক অত্যাচারকে বৈধতা দেওয়া যায় না। এবং বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের সম্মান ও পবিত্রতা যদি মেয়েদের কণ্ঠস্বরকে রোধ করে রক্ষা করতে হয়, তবে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সম্মতির পরোয়া না করে বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপন যদি ধর্ষণ এবং ‘অপরাধ’ হিসাবে গণ্য হয়, তবে তাতে কোনও ব্যতিক্রম থাকা উচিত নয়। নির্যাতিতার বয়স, নির্যাতনকারীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নির্বিশেষে তা অপরাধ-ই। এ ক্ষেত্রে তাই আইনটিকেও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। অন্যথায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবস্থান গ্রহণ জনসমাজের পক্ষে বিভ্রান্তিকর হয়ে উঠতে পারে। না মানে না-ই। সেই ‘না’-কে আইনি সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটি বিচারালয় গ্রহণ করুক, এমনটাই কাম্য।

আরও পড়ুন
Advertisement