CNG Crisis

জট অব্যাহত

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, শহরে সিএনজি জোগানের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। পাইপলাইনের মাধ্যমে এই গ্যাস শহর বা শহরতলিতে সরবরাহ করা সম্ভব না হওয়ায়, সিলিন্ডারে ভরে সড়কপথে তা নিয়ে আসতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩৫
An image of CNG

—প্রতীকী চিত্র।

কাজের দিনে কলকাতা অচল হয়েই থাকে। দিনকয়েক আগে, মাধ্যমিক পরীক্ষার মধ্যেই, চরম ভোগান্তির শিকার হলেন নিত্যযাত্রীদের একাংশ। শহরে কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি)-এর অপ্রতুলতার কারণে ওই গ্যাসচালিত ভাড়ার গাড়ির চালকদের বিক্ষোভের জেরে এমন হয়রানি। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, শহরে সিএনজি জোগানের সমস্যা দীর্ঘ দিনের। পাইপলাইনের মাধ্যমে এই গ্যাস শহর বা শহরতলিতে সরবরাহ করা সম্ভব না হওয়ায়, সিলিন্ডারে ভরে সড়কপথে তা নিয়ে আসতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ। শুধু তা-ই নয়, মাধ্যমিক চলাকালীন শহরে ভারী গাড়ি ঢোকার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকায় সাম্প্রতিক কালে আরও বেড়েছে সমস্যাটি।

Advertisement

গণপরিবহণের ক্ষেত্রে সিএনজি-র বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুদূষণের নিরিখে কলকাতা দেশের প্রথম সারিতে। এই দূষণ ঠেকাতে সিএনজি বা কোল-বেড মিথেনের মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানির উপর জোর দেওয়া জরুরি, বিস্তর টালবাহানার পরে বিশেষজ্ঞদের এই মত মেনে শেষ পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে সিএনজি চালু করায় উদ্যোগী হয় রাজ্য সরকারও। পরিবেশবান্ধব যানবাহন রাস্তায় নামানোর উদ্দেশ্যে নানা সুযোগসুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেয় পরিবহণ দফতরও। এই সুবিধাগুলি পাওয়ার আশাতেই সিএনজি যানবাহনের প্রতি ঝুঁকেছিলেন বহু মানুষ। কিন্তু খাস কলকাতাতেই সিএনজি গ্যাস সরবরাহের উপযুক্ত যথেষ্ট পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘গেল’ লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিভিন্ন সরকারি ও যৌথ উদ্যোগের বণ্টন সংস্থাকে গ্যাস সরবরাহ করে। কলকাতা এবং দুই ২৪ পরগনায় এই ভার ধার্য আছে যে সংস্থাটির উপরে, সেটির দুর্গাপুর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মহানগরীতে গ্যাস পৌঁছে দেওয়ার কথা। অথচ, বিবিধ কারণে এবং প্রশাসনিক জটিলতায় সেই পাইপলাইন তৈরির কাজ রয়েছে আটকে। জেলাগুলির অবস্থাও তথৈবচ। শহরতলি কিংবা জেলার পাম্পগুলিতে চাহিদা থাকলেও তারা সিএনজি-র জোগান ঠিকমতো দিতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে পাম্প থাকলেও, গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ায় সমস্যা বাড়ছে। অচল হচ্ছে গণপরিষেবা। পাশাপাশি রুজি-রোজগারে টান পড়ছে অটো, ক্যাব তথা বাস মালিকদেরও।

এমনিতেই রাজ্যের গণপরিবহণের চিত্রটি আশাব্যঞ্জক নয়। সরকারের ‘জনদরদি’ নীতির জেরে মহানগরীর সড়ক থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে বহু বাস। ধুঁকছে সরকারি পরিবহণও। তার উপরে যদি অটো বা ক্যাবের মতো গণপরিবহণগুলিকে জ্বালানি জোগাড় করতেই হয়রান হতে হয়, তার নেতিবাচক প্রভাব পরিবহণ ক্ষেত্রে পড়াই স্বাভাবিক। ইদানীং বহু মানুষ বিদ্যুৎচালিত গাড়ির প্রতি ঝুঁকলেও, তাদের সহায়তা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন আগামী দিনে গড়ে উঠবে কি না, স্বভাবতই তেমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পরিবেশ রক্ষার্থে বা অন্য কোনও সদুদ্দেশ্যে সরকার নীতি প্রণয়ন করবে, সেটাই স্বাভাবিক। তার জন্য প্রচলিত ব্যবস্থা ভেঙে বৃহত্তর সমাজকে নতুনতর ব্যবস্থার পথে হাঁটতে হবে, তাও সহজবোধ্য। কিন্তু, সরকার যদি কেবলই নীতি প্রণয়ন করে, কিন্তু তার প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর ব্যবস্থা না করে, তা হলে সেই নীতির সাফল্যের সম্ভাবনা খর্বিত হয়। সরকারের সদিচ্ছার জোর নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

আরও পড়ুন
Advertisement