West Bengal

শিল্প চাই

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, কোনও শিল্পপতি যদি জমির মালিকের থেকে কোনও জমি কিনতে চান, অ-কৃষি জমির ক্ষেত্রে আগ্রহী জমির মালিক তা বিক্রি করতে পারেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ ০৫:১৭
land.

শিল্পের জন্য জমি জোগাড় করার পথে রয়েছে রাজনৈতিক বাধা। প্রতীকী ছবি।

পশ্চিমবঙ্গের প্রধানতম সমস্যা কী, বছর দুয়েক আগেও এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর হত: জমি। শিল্প গড়ে তোলার জন্য জমি। গত দু’বছরে রাজ্য জু়ড়ে এমন সহস্রধারায় দুর্নীতির স্রোত বইছে যে, শিল্পের জমির প্রসঙ্গ তাতে বেমালুম ভেসে গিয়েছে বলেই সন্দেহ হয়। তবে দুর্নীতির এমন বাড়বাড়ন্ত হল কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধান করলেও জমির প্রশ্নে পৌঁছে যাওয়া যায়। রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ‘খাজনা আদায়’-এর প্রবণতা এতখানি বেড়েছে, তার কারণ, এ রাজ্যে রাজনীতি ভিন্ন অন্য কোনও ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বড়ই সঙ্কীর্ণ। শিল্প নেই, ফলে তাকে ঘিরে দক্ষ, আধা-দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমশক্তির বিভিন্ন স্তরে নিয়োগের সম্ভাবনাও নেই। শিল্প নেই, তার একটা বড় কারণ শিল্পের জন্য জমি জোগাড় করার পথে রাজনৈতিক বাধা। এই রাজনীতির যজ্ঞ থেকেই বারো বছর আগে রাজ্যের মসনদে উঠে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর তিনি বহু বার শিল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন, বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। সেই মঞ্চ থেকে প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়েছে। কিন্তু, এক যুগ কেটে যাওয়ার পরও জমির সমস্যার স্থায়ী সুরাহা হয়নি। ফলে, রাজ্যের শিল্প-সম্ভাবনাও রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, কোনও শিল্পপতি যদি জমির মালিকের থেকে কোনও জমি কিনতে চান, অ-কৃষি জমির ক্ষেত্রে আগ্রহী জমির মালিক তা বিক্রি করতে পারেন। এই ঘোষণটিকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হিসাবে দেখা মুশকিল— ক্রেতা এবং বিক্রেতা, উভয় পক্ষই আগ্রহী হলে জমি কেনা-বেচায় এত দিন কোনও বাধা ছিল কি? সমস্যা তো এক জনের থেকে জমি কেনায় নয়। পশ্চিমবঙ্গে জমির গড় মাপ সর্বভারতীয় গড়ের অনেক নীচে। ফলে, বড় শিল্পের জন্য যতখানি জমি প্রয়োজন হয়, প্রায় কখনও তা এক বা দু’তিন জন মালিকের থেকে কিনে নেওয়া সম্ভব হয় না। একই সঙ্গে বহু জমির মালিকের সম্মতি ভিন্ন বড় শিল্পের জমির ব্যবস্থা করা অসম্ভব। সেখানেই সমস্যা তৈরি হয়। এখানেই সরকারের উপস্থিতি প্রয়োজন। জমির ব্যবস্থা করা মানেই যে গায়ের জোরে অধিগ্রহণ, তা কিন্তু নয়। সম্মতি নির্মাণ করাও সরকারের কাজ। যথাযথ ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, অথবা অন্য কোনও দাবিদাওয়া বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাটি গ্রহণ করতে হবে সরকারকেই। মুখ্যমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’-এর কথা বলেন। সেই ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই যাতে এক অঞ্চলের জমির মালিক চাইলে নিজের জমির বদলে অন্য অঞ্চলে জমির মালিকানা পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থাটিও শিল্পের জন্য জমির বন্দোবস্ত করার গুরুত্বপূর্ণ দিক। রাজ্য সরকার এই বিষয়গুলিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে কি না, সেই সংশয় থাকা স্বাভাবিক। জমির প্রশ্নে যে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন ছিল, ঘাটতি থাকছে তাতে।

Advertisement

অনুমান করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, শিল্পের জন্য জমির সংস্থান করার বিষয়টিকে মুখ্যমন্ত্রী তার প্রাপ্য গুরুত্ব দেন না। কেন, সে আলোচনা অন্যত্র। কিন্তু তাঁকে বুঝতে হবে, যে গভীর অন্ধকারে পশ্চিমবঙ্গে নিমজ্জিত হচ্ছে, তার থেকে নিস্তারের একমাত্র পথ হল শিল্প। বৃহৎ শিল্প। রাজনৈতিক কারণে জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নটি পশ্চিমবঙ্গে এমনই অগ্নিগর্ভ যে, সরকারের হস্তক্ষেপ ব্যতীত বড় শিল্পের জন্য জমির ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব। অতএব, না-ছুঁই পানি ভঙ্গিতে জমির প্রশ্নটিকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বিপজ্জনক। এ প্রসঙ্গে লিজ়ে থাকা জমিতে মালিকানার অধিকার (ফ্রি হোল্ড) দেওয়ার নীতিটিও উল্লেখ করা প্রয়োজন। ব্যবস্থাটি ভাল, কিন্তু সেই জমি যাতে শেষ অবধি শিল্পের কাজেই ব্যবহৃত হয়, তা যেন আবাসন-মাফিয়ার হাতে সহজে জমি তুলে দেওয়ার পদ্ধতি হয়ে না দাঁড়ায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে। এই রাজ্যে শিল্প চাই। অবিলম্বে। তার জন্য যা করণীয়, মুখ্যমন্ত্রীকে সেই কাজগুলিতে আন্তরিক ভাবে আগ্রহী হতে হবে।

আরও পড়ুন
Advertisement