Coronavirus

বিপদঘণ্টা

সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব একমাত্র যদি মানুষের অনভিপ্রেত আচরণগুলি সংযত হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ০৫:৪৮

বিশ্ব স্বাভাবিকতায় ফিরিতে চাহে: এ দিকে ভাইরাসের ছন্দ বার বার তাহাতে বাধ সাধিতেছে। আরও এক বার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংক্রমণ বৃদ্ধির সংবাদ। প্রায় দুই বৎসর ধরিয়া বিশ্ব এই মারণ-ভাইরাসের সঙ্গে যুঝিতেছে, টিকাকরণের কাজও চলিতেছে। কিন্তু শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই রাশিয়ায় কোভিডে আক্রান্ত হইয়া মৃত্যু হইয়াছে চুয়াল্লিশ হাজারের অধিক মানুষের। কেবল রাশিয়াই নহে, সামগ্রিক ভাবে ইউরোপের সংক্রমণও ঊর্ধ্বমুখী। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাইতেছে চিনেও। করোনাভাইরাসের প্রতি ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতিতে বিশ্বাসী চিন সরকার অচিরেই লকডাউনের পথে হাঁটিতে পারে বলিয়া অনুমান। অর্থাৎ, ‘স্বাভাবিক’ পৃথিবী এখনও দূর অস্ত্। পরিস্থিতি জটিলতর করিয়াছে উত্তর গোলার্ধে শীতের আগমনবার্তা। অতিমারির পক্ষে এই ঋতুটি সুবিধার নহে। গত শীতেও ইউরোপ বিধ্বস্ত হইয়াছিল ভাইরাস আক্রমণে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণকারী কিছু ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত শীতকালেই ঘটিয়া থাকে, গ্রীষ্মে ইহাদের প্রকোপ কমে। কয়েক ধরনের করোনাভাইরাসও ইহার অন্তর্ভুক্ত। গবেষণাগারের পরীক্ষামতে, শীতল শুষ্ক আবহাওয়া সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিশেষ পছন্দ। প্রবল শীতে মানুষ ঘরের বাহিরে পা রাখেন কম। গৃহাভ্যন্তরের তাপমাত্রা এবং বাতাসের শুষ্কতা দ্রুত সংক্রমণ ছড়াইতে সহায়ক হয়। সুতরাং, শীত-সম্মুখে ইউরোপে সংক্রমণ বৃদ্ধি হয়তো অস্বাভাবিক নহে। ‘হয়তো’ এই কারণেই যে, ভাইরাসের আচরণের উপর আবহাওয়ার প্রভাব লইয়া এখনও কোনও স্থির মতে পৌঁছানো যায় নাই।

ভারতেও শীতের প্রারম্ভেই তৃতীয় ঢেউয়ের আবির্ভাবের আশঙ্কা। মাত্র কয়েক দিন আগের সংবাদ: একদা দৈনিক চার লক্ষ সংক্রমণের সাক্ষী হওয়া ভারতে সাম্প্রতিক কালে সংক্রমণ নামিয়াছে দশ হাজারের ঘরে। একশত কোটি টিকাদান সম্পূর্ণ করিয়া প্রধানমন্ত্রী গর্বের হাসি হাসিতেছিলেন। মহা আড়ম্বরে উৎসব পালিত হইতেছিল। কিন্তু সেই হাস্য আপাতত বিলীন হইতে বসিয়াছে, যুদ্ধ জিতিবার গৌরব একটু দ্রুত প্রচার করা হইয়াছে বলিয়া বোধ হইতেছে। ইউরোপ যদি দ্বিতীয় ঢেউয়ে এতখানি কাবু হয়, ভারতের অভিজ্ঞতাও আশ্বাসজনক হইতে পারে না। মনে পড়িতে পারে, এই বৎসরেরই মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ‘যুদ্ধজয়’-এর ঘোষণাকে নস্যাৎ করিয়া দিয়া পরবর্তী কয়েক মাসের পরিসংখ্যান গোটা দেশকে বিভীষিকার মধ্যে ঠেলিয়া দিয়াছিল। এই মুহূর্তে তাই মনে করানো জরুরি যে, সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মবিধি পালনই কিন্তু ভবিষ্যতে বৃহৎ মাপের সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রতিহত করিতে পারে। বিজ্ঞানীরা এই কথা বারংবার মনে করাইয়াছেন। বিদেশের অভিজ্ঞতা স্পষ্ট করিয়াছে, টিকাপ্রাপ্তদের মৃত্যুর এমনকি গুরুতর অসুস্থ হইয়া পড়িবার সম্ভাবনাও যথেষ্ট কম। অর্থাৎ, টিকা লইলে প্রতিরোধের প্রাথমিক ভিত্তিটি প্রস্তুত। এক্ষণে প্রয়োজন, সঠিক ভাবে মাস্ক পরা, পরিচ্ছন্নতা এবং দূরত্ববিধি বজায় রাখিবার ন্যায় কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিরোধের ক্ষেত্রটিকে আরও মজবুত করা। অথচ সেই সামান্য কাজটুকু করিতেও কী নিদারুণ অনীহা। এই দিকে অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও স্কুল-কলেজ খুলিতেছে, আর্থিক কর্মকাণ্ড চালু হইয়াছে, লোকাল ট্রেন চলিতেছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব একমাত্র যদি মানুষের অনভিপ্রেত আচরণগুলি সংযত হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন
Advertisement