Russia

রণদামামা

কোনও পক্ষ অবলম্বন না করিয়া সতর্ক হিসাবই এখন ভারতীয় কূটনীতিক মহলের আরাধ্য হওয়া উচিত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৫:১৪

মাসাধিক কাল পার হইল, ইউক্রেনের সীমান্তে থানা দিয়া বসিয়াছে এক লক্ষ রুশ বাহিনী। বিগত ডিসেম্বরে পূর্বের এই প্রতিবেশীর নিকট ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ অনুরোধ করিয়াছিল রাশিয়া, যাহার সার কথা— ইউক্রেন কদাপি উত্তর অতলান্তিক চুক্তি সংগঠন ‘নেটো’-তে যোগ দিবে না, এবং পূর্ব ইউরোপে নেটোর বাহিনী ও সমরাস্ত্র হ্রাস পাইবে। অন্যথায় যে ‘অপরিকল্পিত’ প্রতিক্রিয়ার হুমকি আসিয়াছিল, সেনা জড়ো করিবার উদ্যোগ তাহারই বাস্তবায়ন। অপর দিকে আর এক বাহিনীও আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে, নেটো-প্রেরিত। আমেরিকা অতিমাত্রায় সক্রিয়তা দেখাইতেছে, ব্রিটেনও। সব মিলাইয়া নূতন ঠান্ডা যুদ্ধ যেন উষ্ণ হইবার উপক্রম।

পশ্চাৎপটটি প্রস্তুতই ছিল। গত বৎসর রুশ-ইউক্রেনীয় ঐতিহাসিক একতা বিষয়ক প্রবন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে দাবি করেন, দুই রাষ্ট্র আসলে ‘এক জাতি’।— ইহা কোনও নূতন কথা নহে। বলশেভিক রাশিয়ারও আগে হইতে, ঊনবিংশ শতকের জ়ার-যুগেও এই ‘ইরেডেন্টিজ়ম’ নামক সাম্রাজ্যবাদী তত্ত্ব রাশিয়ায় বহুল-প্রচলিত ছিল, যাহার দ্বারা মূল রাশিয়ার অধিবাসীরা নিজেদের ‘মহান’ রুশ কল্পনা করিতেন, এবং প্রতিবেশী ইউক্রেনকে ‘ক্ষুদ্র’ রুশ এবং বেলারুসকে ‘শ্বেত’ রুশ বলিয়া অভিহিত করা হয়। এই ভাবনানুসারে, তিন রাষ্ট্র বাস্তবে একই ‘সাব-নেশন’ বা উপ-জাতির তিনটি ভাগ, অতএব মহান রাশিয়ার ঝুলি হইতে যাহা ‘খোয়া’ গিয়াছে, তাহা ফিরাইয়া লওয়া রাজনৈতিক কর্তব্যবিশেষ। ইতিহাস বলিবে, সোভিয়েট পতনে ইউক্রেনের স্বাধীনতা লাভের পর হইতে তাহাকে প্রভাববৃত্তে রাখিবার জন্য বলপ্রয়োগের অভ্যাসটি নিরন্তর জারি রাখিয়াছে ক্রেমলিন। সোভিয়েট ইউনিয়ন নাই, ওয়ারশ চুক্তিও মহাকালের গর্ভে বিলীন, কেবল মস্কোই তাহার দীর্ঘ ছায়া হইতে অপসৃত হইতে পারে নাই। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব চূড়ান্ত মনে করিতে এখনও তাহারা অস্বচ্ছন্দ, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার প্রভাবঘনত্বে ইতরবিশেষ ঘটিলেই ‘অনুরোধ’ আসিবার সম্ভাবনাটিও অনিবার্য হইয়া উঠে।

Advertisement

তবে ইউক্রেনের পশ্চিম সীমান্তের নিকটে যে পাল্টা সেনা প্রেরণ করিয়াছে ইউরোপের অন্তত চারটি রাষ্ট্র, সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়াছে আমেরিকাও— তাহাও অতিসক্রিয়তার আরও একটি রূপ। বাস্তবিক ইহাতে পারদ দ্রুত চড়িতেছে, পরিস্থিতির দ্রুত মেরুকরণ হইতেছে। ইউক্রেনের অভ্যন্তরস্থ দনেৎস্ক ও লুহান্‌স্ক নাম্নী দুই ‘স্বঘোষিত প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ রাশিয়ার পক্ষে যোগ দিয়াছে। সব মিলাইয়া আপাতত বিষম অস্থিরতা ও আতঙ্কে কাঁপিতেছে ইউক্রেন ও পূর্ব ইউরোপ। গত বুধবার ইউক্রেনে শান্তির জন্য দিবসব্যাপী বিশেষ প্রার্থনাসভার আয়োজন করিয়াছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। সতর্ক থাকিতে হইতেছে ভারতকেও, দীর্ঘ নীরবতা ভাঙিয়া বিদেশ মন্ত্রকের হিসাবি বিবৃতিতেই তাহা স্পষ্ট। যুযুধান দুই পক্ষের সহিতই নানা চুক্তিতে আবদ্ধ নয়া দিল্লি, এমতাবস্থায় রাশিয়ার ‘পেশি-প্রদর্শন’ লইয়া প্রকাশ্য মন্তব্য ঝুঁকিপূর্ণ। পশ্চিমের সহিত শত্রুতার আবহে ক্রেমলিন যদি চিনের অভিমুখে ঝুঁকিয়া পড়ে, ভারতের পক্ষে একেবারেই সুসংবাদ হইবে না। কোনও পক্ষ অবলম্বন না করিয়া সতর্ক হিসাবই এখন ভারতীয় কূটনীতিক মহলের আরাধ্য হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন
Advertisement